ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়ান গেমসের পর্দা উঠছে শনিবার

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ১৭ আগস্ট ২০১৮

এশিয়ান গেমসের পর্দা উঠছে শনিবার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এশিয়ান গেমস আসর শুরু হবে শনিবার। সব প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে এবারের আয়োজক ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী শহর জাকার্তা ও সুমাত্রার বন্দরনগরী প্যালেমব্যাং। এবার বহুমাত্রিক ক্রীড়া ইভেন্টের এ এশিয়ান গেমসের ১৮তম আসর। ১৮ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর মোট ১৬ দিনে এবার ৪০টি ক্রীড়ার মোট ৪৬৫ ইভেন্টে প্রতিযোগিতা হবে। প্রতিযোগিতার মূল ভেন্যু জাকার্তার গেলোরা বাং কারনো স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হবে ১৩টি ক্রীড়ার প্রতিযোগিতা। এবারের প্রতিযোগিতায় মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২০ কোটি মার্কিন ডলার। এবারের আসরের মূলমন্ত্র ‘এনার্জি ফর এশিয়া’ নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪৫ দেশের সবমিলিয়ে প্রায় ১৭ হাজার এ্যাথলেট ও কর্মকর্তা থাকবেন এবারের আসরে। ইতোমধ্যেই এ্যাথলেটরা ইন্দোনেশিয়ায় জড়ো হতে শুরু করেছেন। কারণ গত ১০ আগস্টই শুরু হয়েছে ফুটবলের প্রতিযোগিতা। কিন্তু শনিবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যাত্রা শুরুর পর ২ সেপ্টেম্বর পর্দা নামবে এ আসরের। অলিম্পিকের পর এশিয়ান গেমসেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ বহুমাত্রিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এবার ইন্দোনেশিয়ায় শুরু হতে যাওয়া এ আসর নিয়ে আছে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা, পরিবেশ দূষণ নিয়ে ভাবনা এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে মাথাব্যথা। কিন্তু আয়োজনের ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়া কোন ত্রুটিই রাখেনি। জাকার্তার কেমাইয়োরানে স্থাপন করা হয়েছে ১০ হেক্টর জমির ওপর এ্যাথলেটদের ভিলেজ যেখানে আছে ১০টি বিল্ডিংয়ে মোট ৭,৪২৪টি এ্যাপার্টমেন্ট। সবমিলিয়ে এর ধারণক্ষমতা ২২,২৭২ জনের। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুসারে ১৪০০০ এ্যাথলেটের আবাসন থাকলেই হয়। এছাড়া জাকাবারিং স্পোর্ট সিটি ও প্যালেমব্যাংয়ে স্থাপিত ভিলেজে আরও ৩০০০ এ্যাথলেট ও কর্মকর্তা থাকতে পারবেন। এমন উচ্চমাত্রার কোন প্রতিযোগিতা এর আগে ইন্দোনেশিয়ায় আয়োজিত হয়নি। অলিম্পিকে কিছুটা বেশি থাকে এ্যাথলেটের সংখ্যা। কিন্তু অলিম্পিকের সব ক্রীড়া ছাড়াও এশিয়ান গেমসে কিছু আঞ্চলিক ক্রীড়া ইভেন্টও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সে কারণে মোট ক্রীড়া ৪০টি। এবারের এশিয়ান গেমসে মাস্কট তিনটি। বড় মাস্কটের নাম কাকা, বাকি দুটির নাম ভিনভিন ও আতুং। বরাবরই এশিয়ান গেমসে দাপট চীনের। অলিম্পিকের মতো সর্ববৃহৎ আসরেই তারা অন্যতম পরাশক্তি। এবারও তারা পদক তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রাখার মিশনেই নামবে। তবে এশিয়ান গেমসে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া তাদের জোর প্রতিপক্ষ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই এবার বড় চমক অপেক্ষা করছে সারাবিশ্বের জন্য। দক্ষিণ কোরিয়া এবং উত্তর কোরিয়া একই সঙ্গে প্যারেডে অংশ নেবে। এছাড়া তারা মহিলা বাস্কেটবল, ক্যানুয়িং এবং রোয়িংয়ে সম্মিলিত দল গঠন করেছে- এটি হবে প্রতিযোগিতার আরেক আকর্ষণ। সবমিলিয়ে ৪৫ দেশের প্রায় ১৭ হাজার এ্যাথলেট ও কর্মকর্তার সমাগম ঘটবে এবারের এশিয়ান গেমসে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়াকে এর আয়োজন করতে গিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। বিশেষ করে মাস তিনেক আগে গত ১০ বছরের মধ্যে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আত্মঘাতী বোমা হামলায় দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী সুরাবায়াতে ১৩ জন নিহত হয় সে ঘটনায়। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এশিয়ান গেমসের সমস্ত আয়োজন সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন করেছে ইন্দোনেশিয়া। এছাড়া বনাঞ্চলের দাবানল আরেকটি কুখ্যাত ঘটনা দেশটির জন্য। সেটা আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া রাস্তাঘাটেও প্রচুর ট্র্যাফিক জ্যামের বিষয় আছে। যদিও এশিয়ান গেমসের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, নাম্বার প্লেট অনুসারে একেকদিন একেক যান নামানোর নির্দেশনা জারি হয়েছে, বিভিন্ন দিনে একেকটি বিদ্যালয় বন্ধ রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। এছাড়া বিভিন্ন রাস্তায় ভুল বানানের সাইনবোর্ড, নর্দমা ও পয়ঃনিষ্কাশন থেকে কটু গন্ধ, বিষাক্ত খাল-বিল ও নদীপথ এ্যাথলেটদের ভিলেজের চারপাশে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করবে। আর দেশের প্রথম মেট্রো রেলওয়ে তৈরিতে ব্যাপক দূষণ ও অব্যবস্থাপনা প্রতিযোগিতার কাউন্টডাউনে ঝামেলার সৃষ্টি করেছিল। ২০১৪ সালে ভিয়েতনাম নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে আয়োজক হিসেবে এগিয়ে এসে এরপরও ভাল ব্যবস্থাই করেছে ইন্দোনেশিয়া। তবে অতীতে বিভিন্ন ক্রীড়া আসর আয়োজনের রেকর্ড তেমন সুখকর নয় দেশটির। ২০১১ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমস আয়োজন করেছিল যাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ ছিল। এছাড়া ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনালে দর্শকদের উত্তেজনায় পদপিষ্ট হয়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। গত মাসেও এবার এশিয়ান গেমসে ফুটবলের ভেন্যু হিসেবে থাকা একটি স্টেডিয়ামে ব্যাপক গোলযোগ হয়েছে। তবে এবার আয়োজক কমিটির প্রধান এরিক থোহির দাবি করেছেন ইন্দোনেশিয়া এবার সবকিছু কাটিয়ে উঠে ঠিকঠাক মতোই মানিয়ে নিতে সক্ষম হবে। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এ ধনকুবের আবার ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানেরও সভাপতি। তিনি গত সপ্তাহেই বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের প্রস্তুতিতে কোন ধরনের ঝামেলা সৃষ্টি হয়নি। যদি কোন সমস্যা কোনভাবে তৈরিই হয় আমরা সেটা তৎক্ষণাৎ সমাধান করার সামর্থ্য নিয়েই নেমেছি।’ সবকিছু ছাপিয়ে এখন মূল প্রতিযোগিতা শুরুর অপেক্ষা। ইতোমধ্যেই ফুটবল শুরু হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকজন বড় তারকা আছেন দর্শকদের মনোযোগের কেন্দ্রে। টটেনহ্যাম হটস্পারের ফরোয়ার্ড দক্ষিণ কোরিয়ার সোন হিউং মিন অন্যতম তাদের মধ্যে। এছাড়া এ্যাথলেটিক্সে চীনের সু বিংটিয়ান, জাপানের কেন্তো মোমোতা, সাঁতারে সিঙ্গাপুরের জোসেফ স্কুলিং, মালয়েশিয়ার মহিলা স্কোয়াশ তারকা নিকোল ডেভিডরা থাকবেন ভক্ত সমর্থকদের নজরের কেন্দ্রবিন্দুতে।
×