ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কোরবানিকে ঘিরে রংপুরে ১৪ লাখ পশু প্রস্তুত

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৭ আগস্ট ২০১৮

কোরবানিকে ঘিরে রংপুরে ১৪ লাখ পশু প্রস্তুত

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ১৬ আগস্ট ॥ পবিত্র ঈদ-উল আজহাকে সামনে রেখে রংপুর বিভাগে পশু খামার ও বাসা-বাড়িতে প্রায় পৌনে ১৪ লাখ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ভাল দাম পাওয়ার আশায় বিভাগের অধিকাংশ খামারি নিজেদের গচ্ছিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগ করে কোরবানির বাজার ধরার জন্য এসব পশু পালন করছেন। তবে গো-খাদ্যসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচের তুলনায় কোরবানির পশুর দাম কিছুটা কম হওয়ায় লাভ কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে রংপুরের বিভিন্ন পশুর হাটে নানামুখী তৎপরতাও শুরু হয়েছে। জমে উঠতে শুরু করেছে এ অঞ্চলের কোরবানির পশুর হাট। এছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বেপারিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশু অনুযায়ী দরদাম করছেন। ভারতীয় গরু আমদানি না করেও নিজেদের পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা পূরণ শেষে প্রায় দুই লক্ষাধিক পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, কোরবানির পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে এই বিভাগের আট জেলায় বাণিজ্যিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে ৫৪ হাজার ২১টি। এর মধ্যে রংপুর জেলায় ৮ হাজার ৪৪৯টি, নীলফামারী জেলায় ২ হাজার ২৫০টি, কুড়িগ্রামে ১০ হাজার ৮৮২টি, দিনাজপুরে ১১ হাজার ৫৩২টি, লালমনিরহাটে ৪ হাজার ৬৯৩টি, গাইবান্ধায় ৮ হাজার ৬৮৪টি, ঠাকুরগাঁয়ে ৪ হাজার ২৪১টি এবং পঞ্চগড় জেলায় ৩ হাজার ২৯০টি। এছাড়াও কেউ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোঁচাতে আবার কেউ সংসারে সচ্ছলতা আনতে খামার গড়ে তুলে বিভিন্ন প্রজাতির পশু লালন-পালন করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত বছর ১১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৩৯টি পশু জবাই করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর হওয়ায় গতবারের তুলনায় এবার ঈদে কোরবানির চাহিদা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। এর বিপরীতে স্থানীয় সরকারী পশু চিকিৎকদের সহযোগিতায় এ বছর রংপুর বিভাগের আট জেলায় কোরবানিযোগ্য ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ১৬৬টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ছাগল ও ভেড়া ৪ লাখ ৮২ হাজার ৭৬৯টি, গরু, মহিষ, বলদ, ষাঁড় ও গাভী ৮ লাখ ৯২ হাজার ৯০৫টি এবং অন্যান্য ৪৯২টি। কোরবানিতে দেশী জাতের ও শঙ্কর জাতের গরু চাহিদা বেশি থাকায় খামারিরা এ ধরনের গরু স্বাস্থ্য সম্মতভাবে মোটা তাজাকরণ শুরু করেছেন কয়েক বছর ধরে। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ঘোনাবাড়ি গ্রামের খামারি এনামুল হক প্রধান জানান, তার নিজের খামারে একশত গরু রয়েছে। এছাড়াও আধি হিসেবে প্রায় দুইশত গরু আধিয়ারকে দিয়েছেন। সারা বছর ধরে দেশের আমিষ খাদ্যের চাহিদা পূরণ এবং আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণ করেছেন তারা। গো-খাদ্যসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বৃদ্ধি থাকায় সব গরুতে তিনি লাভবান হতে পারবেন না। রংপুরের মাহিগঞ্জ এলাকার খামারি ওয়াজেদ মিয়া ও তামপাটের আবু হানিফা জানান, ঈদকে ঘিরে লাভের আশায় পশু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন খামারিরা। তবে ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে পশু আমদানি করা হলে লোকসানের মুখে পড়বেন তারা। নওগাঁ নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, আসন্ন ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে নওগাঁয় গরু মোটা-তাজাকরণে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাটে কিছু কিছু গরু বিক্রির জন্য নিয়ে গেলেও পুরোদমে শুরু হবে ঈদের কয়েকদিন আগে। বিশেষ করে চাকরিজীবীরা বোনাস পাওয়ার পর হাটে গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি হবে বলে খামারিদের ধারণা। ঈদকে সামনে রেখে খামারিরা বর্তমানে গরুর বেশি বেশি যতœ নিচ্ছেন। তবে বাজারে গো খাদ্যসহ ওষুধের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। বর্তমানে বিভিন্ন হাটে গরুর দাম তেমন একটা ভাল পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু একটি গরুর পেছনে প্রতিদিন ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা খরচ হচ্ছে। তার সঙ্গে রয়েছে শ্রমিক খরচ। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে যদি চোরাই পথে দেশের বাইরে থেকে গরু না আসে, তাহলে দেশের খামারিরা কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখতে পাবেন। তা না হলে খামারিদের প্রচুর লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন নওগাঁর খামারিরা। তারা জানান, এবার নওগাঁয় যে পরিমাণ গরু ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তুত করা হয়েছে তা দিয়েই স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য জেলায় চালান করা সম্ভব। টাঙ্গাইল নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানান, আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে টাঙ্গাইলের চর ও গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতি বাড়িতেই প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। প্রতিটি বাড়িই এখন একটি খামারে পরিণত হয়েছে। অল্প কয়েক মাস গরু লালনপালন করে অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই খামারের সংখ্যা বাড়ছে। এসব খামারে তৈরি হয়েছে অনেক লোকের কর্মসংস্থান। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব খামারের গরু অন্যান্য জেলার গরুর হাটগুলোতে যাচ্ছে বিক্রির জন্য। কোরবানির পশুর হাটগুলোতে যদি বিদেশী গরুর আমদানি না হয় তবেই এসব ক্ষুদ্র খামারিরা অধিক লাভবান হবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কোরবানিতে দেশী গরুর চাহিদা বেশি থাকায় বেশিরভাগ খামারি কমবেশি লাভবান হয়েছেন। সেই সঙ্গে গরুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ ও গরুর খামার লাভজনক হওয়ায় জেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে গরুর খামার। এসব খামারের গরু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে লালনপালন করা হচ্ছে। গরুগুলো খাওয়ানো হচ্ছে দেশীয় খাবার খড়, খৈল, ভুসি, গুড়ের চিটা, লবণ, চাল-ডাল ও ছোলার-গুঁড়োসহ চাষ করা নেপিয়ার ঘাস। পশু চিকিৎসকের নির্দেশনানুযায়ী গরুগুলোকে দেয়া হয় চিকিৎসা। ব্যবহার করা হচ্ছে না মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর মেডিসিন। বগুড়া স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া অফিস থেকে জানান, কোরবানির পশুর হাট দ্রুত জমে উঠেছে। হাতে সময় কম। এবার জেলায় হাট বসছে ৮০টি। যা গতবারের চেয়ে দুইটি বেশি। এর মধ্যে অনুমোদিত হাট ৭৬টি। যত লোক হাটে যাচ্ছে তার অর্ধেকেরও কম পশু কিনছে। বাকিরা এখনও মূল্য পরখ করার মধ্যেই আছে। আবার কিছু লোক গ্রামের গরুর খামারগুলোতে গিয়ে গরু কিনে রাখছে। কেউ নিজেদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে গৃহস্থ ও কৃষকের পালিত গরু কিনে রেখে দিচ্ছে। ঈদের আগের ক’টা দিন পালন ও ঈদের আগের দিন এইসব গরু বগুড়া নগরীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার খরচ দিয়ে লোকজন ঠিক করে আসছে তারা। এ ভাবে সরাসরি কেনাতে দাম পড়ছে হাটের চেয়ে অনেকটা কম। এ দিকে জেলার অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ৩ লাখ। তার চেয়ে ৮৭ হাজার গরু ছাগল প্রস্তুত আছে। নাটোর নিজস্ব সংবাদদাতা নাটোর থেকে জানান, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মোটাতাজা করা হচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার গরু। নাটোর সদর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার ছোট-বড় বিভিন্ন খামারে ও ব্যক্তিগতভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে রাসায়নিক স্টেরয়েড হরমোনমুক্তভাবে গরু মোটাতাজা করছেন খামারিরা। এর মধ্যে শুধু বড়াইগ্রাম উপজেলাতেই প্রায় ২৫ হাজার গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। গরুর পাশাপাশি মহিষ, ছাগল, ভেড়াও প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। তবে লোকসান এড়াতে দেশে যাতে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু আসতে না পারে সেদিকে নজরদারি বাড়াতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদফতর সূত্র ও খামারিরা জানান, জেলাজুড়ে প্রায় ৮০ হাজার কোরবানির জন্য গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া জেলার প্রায় ৫ হাজার খামার থেকে কোরবানির পরে আরও প্রায় দেড় লক্ষাধিক গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি করা সম্ভব। কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত এসব গরু প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। রাসায়নিক উপকরণের পরিবর্তে গরু হৃষ্টপুষ্ট করতে গরুকে গমের ভুষি, চাউলের খুদ, খড়, কাঁচা ঘাসসহ বিভিন্ন খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করছেন বলে জানান খামারিরা। তবে গরু মোটাতাজাকরণে এগিয়ে রয়েছে বড়াইগ্রাম উপজেলা। বড়াইগ্রাম উপজেলায় এবার ছোট-বড় বিভিন্ন খামার ও ব্যক্তিগতভাবে অন্তত ২৫ হাজার গরু কোরবানির উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, পাঁচ শতাধিক মহিষ, প্রায় ২২ হাজার ছাগল এবং তিন হাজার ভেড়া রয়েছে। উপজেলায় ২০০টি গরু খামার রয়েছে। এসব খামারে কোরবানির মৌসুমে পশু মোটাতাজাকরণ হয়। বিশেষ করে ষাঁড় গরুর প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে লালন-পালন করায় নাটোরের গরুর চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে গরু কিনে নিয়ে যায় এখানকার খামার থেকে। তবে কোরবানির আগে ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা গরুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন দেশীয় খামারিরা। সীমান্ত পথে গরু আসা বন্ধ ও সহজ শর্তে ঋণ পেলে হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রক্রিয়া আরও প্রসার লাভ করবে বলে জানান খামারিরা।
×