ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে উস্কানি ॥ লুমা রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৭ আগস্ট ২০১৮

ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে উস্কানি ॥ লুমা রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় গুজব ছড়িয়ে নাশকতায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে আটক লুৎফুন্নাহার লুমাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেন ওরফে রনি ওরফে রাতুলের জামিনও নামঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশের ওপর হামলা ও ভাংচুরের দুই মামলায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ ছাত্রের জামিন আবেদন নাকচ করেছেন আদালত। এদিকে কোটা বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নেমেছেন প্রতিবন্ধী ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কোটা বাতিলের পক্ষে দেয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দাও জানিয়েছেন তারা। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর সমতলের প্রতিটি জেলায় আদিবাসী ছাত্র সামবেশেরও ডাক দেয়া হয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালীন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মৃত্যু ও ধর্ষণের গুজব ছড়ানোর অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক লুৎফুন্নাহার লুমার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় রাজধানীর রমনা থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে লুমার আইনজীবী জায়েদুর রহমান রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম কাজী কামরুল ইসলাম জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বুধবার ভোরে ডিএমপির তদন্ত টিম ও বেলকুচি থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল ক্ষিদ্র চাপড়ির চর থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার লুৎফুন্নাহার লুনা গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলার বাঐখোলা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছের মেয়ে। সে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী। ফেসবুক লাইভে উস্কানিমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য প্রচার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করার অভিযোগে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ওরফে রনি ওরফে রাতুলের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। রমনা থানায় দায়ের করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক কাজী কামরুল ইসলাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী জায়েদুর রহমান। বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপ-পরিদর্শক মো. সজীবুজ্জামান তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাখাওয়াতকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। পরে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক লস্কর সোহেল রানা তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একইসঙ্গে বিচারক জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার ধার্য করেন। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলা ও ভাংচুরের দুই মামলায় আবার জামিন নাকচ করা হয়েছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ ছাত্রের। বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম লস্কর সোহেল রানা জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে তা নামঞ্জুরের আদেশ দেন। কোটা বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলনে প্রতিবন্ধী ও আদিবাসীরা ॥ প্রতিবন্ধীদের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটায় খুঁজে পাওয়া যায় না, পৃথিবীর কোন দেশে প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা চালু নেই। মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের বিরুদ্ধে এমন বক্তব্যের অভিযোগ তুলে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় জানানো হয়, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যদি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের খুঁজেই না পাওয়া যায় তাহলে কিভাবে ৩৪, ৩৫, ৩৬ ও ৩৭তম বিসিএসে ২০ জন শিক্ষার্থী ভাইভায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও মাত্র ৭-৮ জনকে মেধার ভীত্তিতে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া হয় এবং বাকিদের নন-ক্যাডারে তালিকাভুক্ত করা হয়। শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেছেন ‘পৃথিবীর কোন দেশে প্রথম শ্রেণীর সরকারী চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা চালু নেই।’ আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে জানাচ্ছি তার এই বক্তব্য সঠিক নয়, কেননা বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ক্যাডার পর্যায়ে ৪ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। তারা আরও জানায়, পিছিয়ে পড়া প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রতিবন্ধীদের কোটা ১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশে উন্নীত করার দাবি জানাচ্ছি। এদিকে রাজশাহী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, আদিবাসী কোটা বহালের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেছে আদিবাসী ছাত্র পরিষদ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে রাজশাহী মহানগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। আদিবাসী কোটা বহাল রাখতে হবে এবং কোটা পর্যালোচনা কমিটি কর্তৃক আদিবাসী কোটা বাতিলের সুপারিশের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নকুল পাহান। মানববন্ধনে বক্তারা কোটা পর্যালোচনা কমিটির পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের আদিবাসীদের জন্য কোটা বাতিলের সুপারিশ ও বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি কোন তথ্য বা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদিবাসীরা এগিয়ে গেছে বলে কোটা বাতিলের বক্তব্য দিলেন তার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা। অতি শীঘ্রই সচিবের এই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। আদিবাসীদের সংরক্ষিত কোটার সঠিক বাস্তবায়ন না থাকারও প্রতিবাদ এবং সঠিক ও পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি করেন বক্তারা। এছাড়াও আদিবাসীদের এগিয়ে নিতে শিক্ষা নিশ্চিত এবং কর্মসংস্থানের জোর দাবি জানানো হয়। কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি বিমূল চন্দ্র রাজোয়াড়, রাজশাহী মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আন্দ্রিয়াস বিশ্বাস, আদিবাসী যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি বিভূতী ভূষণ মাহাতো, সাধারণ সম্পাদক তরুন মু-া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জল মাহাতো, রাজশাহী কলেজ কমিটির সভাপতি সাবিত্রী হেমব্রম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ পাহান, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক পলাশ পাহান প্রমুখ। তারা বলেন, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, কানাডা, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পিছিয়ে পড়া ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। মানববন্ধনে আদিবাসীদের শিক্ষার মান উন্নয়ন করে শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে আদিবাসীদের সংরক্ষিত কোটা বহাল রাখার দাবি জানান বক্তারা। আদিবাসীদের কোটা বহালের দাবিতে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর আদিবাসী ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে সমতলে প্রতিটি জেলায় আদিবাসী ছাত্র সামবেশ কর্মসূচীও ঘোষণা করা হয়।
×