ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

স্মৃতির জানালায় তারেক মাসুদ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৬ আগস্ট ২০১৮

স্মৃতির জানালায় তারেক মাসুদ

গত ১৩ আগস্ট ছিল চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। কথাটা যত সহজ করে বলা বা লেখা যায় বিষয়টা তাঁর মৃত্যুর সাত বছর পরও মোটেই সহজ নয়। আসলে, তাঁর অকাল প্রস্থানে কি যে অপূরণীয় ক্ষতি আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের হয়েছে তা এই দু-চার লাইন লিখে বোঝার সাদ্য কারে আছে বলে মনে হয় না। মানুষটি ছিলেন শিল্প সাধানায় পুরোপুরি অন্তপ্রাণ, বিশেষ করে চলচ্চিত্র শিল্পের। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাধারণ ছাত্র হয়েও সিনেমার প্রতি অমোঘ প্রেম তাঁকে শেষঅবধি সিনেমায়ালা বানিয়ে ছেড়েছেন। তারেক মাসুদ তাঁর দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘সুলতানকে নিয়ে সিনেমা করতে এসে আমি তখনও ভাবিনি আমার পেশা হবে চলচ্চিত্র নির্মাণ’ হ্যাঁ তাই হলো। আশির দশকের কথা শিল্পী এস এম সুলতানের শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভাল না। শিল্পী সুলতানকে নিয়ে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের দীর্ঘদিনের চেষ্টা তাঁর, যে কারণে লেখাপড়ার জন্য আমেরিকায় যাবার যে টাকা যোগাড় করেছিলেন তা নিয়ে নেমে পড়লেন ‘আদম সুরত’ নির্মাণে, সঙ্গে বন্ধু মিশুক মুনীর। তখন দুজনারই চলচ্চিত্র নির্মণের প্রাতিষ্ঠানিক বা কারিগরি তেমন ধারণা ছিল না। ছিল কেবল সিনেমার প্রতি প্রবল ভালবাসা। শিল্পী সুলতানের সঙ্গে বাংলার গ্রাম ও কৃষকের আত্মিক সম্পর্কের কথা। একদল তরুণ দিনের পরদিন কাজ করে গেছেন আর ঘুরে বেড়িয়েছেন চিত্র নদীর কমল মেঠোপথে। দেখেছেন শিল্পীর চেখে সুন্দর মাতৃভূমিকে। শিল্পী সুলতান তাঁর আঁকা ছবি সম্পর্কে বলেছিলেন। বাংলার কৃষক আরও যত বেশি নির্যাতিত-নিপীড়িত হবে আমি তাদের আরও তত বেশি শক্তিশালী পেশিবহুল দেখাব আমার আঁকা ছবিতে। সোনার বাংলার সরল শিল্পী এস এম সুলতানের চিন্তার ভেতর দিয়েই ক্যামেরায় চোখ রাখেন তারেক মাসুদ। পরবর্তীকালে তাঁর সব চলচ্চিত্রেই এই বাংলার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। যা কিনা আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন ধারা বা গুড ফিল্ম মুভমেন্টে হিসেবে বহির্বিশ্বে নিজস্ব আলো ছড়িয়েছে। শিল্পের সাধক এই সরল মানুষটির আরও চমৎকার কাজের অপেক্ষায় আমরা তথা বিশ্ব অপেক্ষায় ছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, দেশের-আকালে নিভে গেল এই নক্ষত্রের আলো। সাত বছর আগে নতুন চলচ্চিত্র ‘কাগজের ফুল’ এর শূটিং স্পট দেখে পাবনা থেকে ফেরার পথে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটায় হারিয়ে যায় তারেক মাসুদ, বাংলাদেশ টেলিভিশন সাংবাদিকতার পথৃকিৎ মিশুক মুনীরসহ আরও তিনজনের অমূল্য জীবন। যে কারণে, আমরা আর ‘মাটির ময়না’ ‘রানওয়ে’ ‘অন্তর্যাত্রা’ ‘নরসুন্দর’ কিংবা ‘কাগজের ফুল’ এর মতো অসম্ভব জীবনমুখী সিনেমা থেকে নিষ্ঠুরভাবে বঞ্চিত হলাম। সত্যই তারেক মাসুদ আপনার অভাব আজ এবং আগামীতে পূরণ হবে বলে মনে করতে পারি না।
×