ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

শোকের দিনে কেন্দ্রীয় কচি কাঁচা মেলার আয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৬ আগস্ট ২০১৮

শোকের দিনে কেন্দ্রীয় কচি কাঁচা মেলার আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনুভূতি ছিল শোকের। বাংলার প্রতিটি ঘরে ছিল চাপা দীর্ঘশ্বাস। কী নিষ্ঠুর, কী ভয়াল, কী ভয়ঙ্কর সেই রাত। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কময় সে রাত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের কথা: যে রাতে স্ত্রী-সন্তানসহ সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ছিল বুধবার। জাতীয়ভাবে দিবসটি পালনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষও নানা আয়োজনে দিবসটি স্মরণ করে। কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা ॥ ‘তোমরা ভাগ্যবান! একটি স্বাধীন দেশে জন্মগ্রহণ করেছ। আমরা জন্ম নিয়েছিলাম একটি পরাধীন দেশে। সেই পরাধীন দেশকে স্বাধীনতার মুখ দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শুধু একজন প্রধানমন্ত্রীর পিতা নন, সকল অর্থে তিনি হলেন জাতির পিতা, বাংলাদেশের স্থপতি। মানুষের প্রতি গভীর ভালবাসা ছিল তার। বাংলার মাটি থেকে উঠে আসা একজন মানুষ। আমাদের দুর্ভাগ্য, এই মাটির মানুষকে আমরা বাঁচতে দিলাম না। অনেকে মনে করেন এ দেশের কিছু বিপথগামী মানুষ তাকে হত্যা করেছে নিজেদের কার্য সিদ্ধির জন্য। আমি এটা মনে করি না। তাকে হত্যার পেছনে ছিল গভীর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। নতুনদের কাছে আমার অনুরোধ আমার অহঙ্কার নিয়ে মৃত্যুবরণ করব, এতে কোন আপত্তি নেই। তোমরা যেন এই অহঙ্কারের অবমাননা করো না কেন্দ্রীয় কচিকাঁচা মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও শিশু রাসেল স্মরণানুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী। গান, কবিতা আর স্মৃতিচারণে বঙ্গবন্ধু ও শিশু রাসেলকে স্মরণ করা হয় রাজধানীর সেগুনবাগিচার কচিকাঁচা মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে। কেন্দ্রীয় কচিকাঁচা মেলা আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় দিনে জন্মদিন পালন না করতে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি জানানো হয়। তবে বিএনপি বরাবরই কেক কেটে জাঁকজমকভাবে শোকের দিনে জন্মদিন পালন করে থাকে। এবার খালেদা জিয়া জেলে থাকায় অনেকেই মনে করেছিলেন হয়ত দলটি তার জন্মদিন পালন থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু এবার ভিন্ন কৌশলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুস্থতা কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে দলের চেয়ারপার্সনের জন্মদিন পালন করে বিএনপি। ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে ‘গণতন্ত্রের মাতা’ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য, দেশের মানুষের অধিকারকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের জান বাজি রেখে লড়াই করতে হবে। এ সংগ্রামে আমাদের জয়ী হতে হবে। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের চক্রান্তের ফলে খালেদা জিয়া আজ কারারুদ্ধ। তিনি শুধু একজন নেতা বা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নন, ইতিহাসে যে কয়েকজন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন খালেদা জিয়া তাদের মধ্যে একজন। কিন্তু জামিনযোগ্য মামলায় তাকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। জীবন বাজি রেখে প্রাণপণ লড়াইয়ের অঙ্গীকার করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আমাদের লড়াই করতে হবে। আর এই সংগ্রামে আমাদের জয়ী হতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতেও বাধ্য করতে হবে সরকারকে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমল থেকে খালেদা জিয়া রাজনীতি শুরু করে মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এ ছাড়া তিনি দুইবার বিরোধী দলীয় নেতা হয়েছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সরকার খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করেছিল, তারাও তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীন সরকারের চেয়েও আওয়ামী লীগ সরকার খারাপ বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ওই সরকারের সময় খালেদা জিয়া কারাগারে থাকা অবস্থায় নীরব আন্দোলন করে তাদেরকে মুক্তি দিতে এবং জরুরী অবস্থা তুলে নিতে বাধ্য করেছিলেন। কিন্তু আজ তাদের চেয়েও বর্তমান সরকার খারাপ। ফখরুল বলেন, আজকে এমন এক মুহূর্তে খালেদা জিয়ার জন্মদিনে আমরা দোয়া করার জন্য উপস্থিত হয়েছি যখন তিনি এই সরকারের চক্রান্তে কারাগারে রুদ্ধ হয়েছেন। যিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। দীর্ঘ ৯ বছর তিনি মানুষের কাছে গেছেন, মানুষকে নিয়ে রাজপথে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করেছে। শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করেছে। মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. ওবায়েদুল ইসলাম প্রমুখ। খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়েও দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি। এতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
×