স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় শোক দিবসে দেশের সকল সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বুধবার বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। এ দিন সকাল আটটা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত এ কর্মসূচী পালন করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সরকারী ছুটির দিনেও চিকিৎসাসেবা পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোগী ও তাদের অভিভাবকরা। এ দিন শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েই বিনামূল্যে প্রায় পাঁচ হাজার রোগীকে চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া হয়। সারাদেশে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন হাজার হাজার রোগী।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট বুধবার সারাদেশের সকল সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালসহ জেলা, উপজেলা হাসপাতালে এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হাসপাতালে সকাল আটটা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে এ আদেশ জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়, সরকারী ছুটি সত্ত্বেও সব ধরনের সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দরিদ্র ও দুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য চিকিৎসকদের উপস্থিত থাকতে হবে। গ্রাম পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা উপস্থিত থেকে সাধারণ মানুষকে সেবা প্রদান করবেন বলে আদেশে বলা হয়। সেই অনুযায়ী শনিবার প্রতিটি সরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বুধবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে গেছেন। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তা বাস্তবায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা ও নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বুধবার সরকারী ছুটির দিনেও দেশের হাজার হাজার মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পেয়েছে। এ দিন কোন ফি নেয়া হয়নি। দেশের কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। সব কিছু শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। জাতির জনকের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে পেরে মনে খুব শান্তি ও তৃপ্তি অনুভব করছি বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচ হাজার রোগীকে সেবা প্রদান
বুধবার সকাল নয়টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবার উদ্বোধন করেন। সকাল নয়টা থেকে শুরু করে দুপুর দুটো পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। প্রতি বছরের মতো এবারও মেডিসিন অনুষদের ২১ বিভাগ, সার্জারি অনুষদের ১৪ বিভাগ ও ডেন্টাল অনুষদের ৪ বিভাগসহ মোট ৩৯ বিভাগে ৪৬ অধ্যাপক, ৫৫ সহকারী অধ্যাপক, ২০ সহকারী অধ্যাপক, ৩ কনসালট্যান্ট, ১৩ জন মেডিক্যাল অফিসার, ৫৪ আবাসিক চিকিৎসক, ৭৪ নার্স ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ পাঁচ শতাধিক জনবল ১১৭ কক্ষে এই মহতী কার্যক্রমে সরাসরি অংশ নেন।
সকাল নয়টা থেকে দুপুুর দুটো পর্যন্ত মোট ৪৯৮৭ রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এসব কর্মসূচীতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আব্দুল্লাহ আল হারুন প্রমুখ।
বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে সেবা প্রদান ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীতে ঢাকা শিশু হাসপাতালে বুধবার সকাল নয়টা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালানো হয়। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল আজিজের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং উপ-পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ আবু তৈয়বের নেতৃত্বে সর্বস্তরের চিকিৎসক, কর্মকর্তা, সেবিকা ও কর্মচারী কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। উক্ত সেবা কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান ও বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ কাজল কর্মকার প্রমুখ। এর আগে সকাল সাড়ে আটটায় জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং সকাল থেকে ঢাকা শিশু হাসপাতাল জামে মসজিদে কোরানখানি এবং বাদ জোহর মিলাদ ও দোয়া মাহ্ফিলের এর আয়োজন করা হয়।
দেশের অন্যসব হাসপাতালের মতো রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেও বুধবার প্রায় ৭ শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। এ দিন বহির্বিভাগে রোগীদের আগমন ছিল বেশ লক্ষণীয়। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তর কুমার বড়ুয়া জনকণ্ঠকে জানান, সকাল আটটার আগেই দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা হাসপাতালে উপস্থিত হন।
ছুটির দিনেও তাদেরকে হাসিমুখে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। সেবা পেয়ে খুশি হয়েছেন রোগীরাও। এ দিন রোগীদের মধ্যে খাবারও বিতরণ করা হয়েছে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগেও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আফজালুর রহমান। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেই এ ধরনের চিকিৎসাসেবার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। সকালে নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় সেবা প্রদান। দরিদ্র রোগীদের সংখ্যাই বেশি ছিল। দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হবে এমন রোগীদের নির্ধারিত সময়ের পর হাসপাতালে আবার আসতে বলা হয়েছে। এ ধরনের সেবা পেয়ে রোগীরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আফজালুর রহমান। এভাবে মঙ্গলবার সারাদেশের সরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানসমূহে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
