ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাঁটি গাড়তে মরিয়া আইএস ও আল কায়েদা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৬ আগস্ট ২০১৮

ঘাঁটি গাড়তে মরিয়া আইএস ও আল কায়েদা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বাংলাদেশ ও ভারতে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএস (ইসলামিক স্টেট) ও আল কায়েদা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। জঙ্গী সংগঠন দুটি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ভারত ও বাংলাদেশে ঘাঁটি গাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাতে সহায়তা করে যাচ্ছে বিএনপির সঙ্গে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত বিশেষ ইসলামী দলটি। এমন পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরকে জেএমবির আমির করা হয়েছিল। এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে খাগড়াগড়ে জেএমবি জঙ্গীদের দিয়ে বোমা তৈরির কারখানাও স্থাপন করা হয়েছিল সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই। আর সেই কারখানা থেকে বোমা পাঠিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গীদের কাছে মজুদও করা হয়েছে। পরবর্তীতে জেএমবি আমির সাইদুর রহমান গ্রেফতার ও খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের পর সব এলোমেলো হয়ে যায়। সম্প্রতি ভারতে গ্রেফতারকৃত সিরিজ বোমা হামলার অন্যতম নেপথ্য কারিগর জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান দুর্ধর্ষ শীর্ষ জঙ্গী বোমারু মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে বাংলাদেশের একজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান। গত ৬ আগস্ট ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর মালাপ্পুরাম জেলার কোতাক্কালের একটি আস্তানা থেকে বোমারু মিজান গ্রেফতার হয় বলে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) তরফ থেকে বলা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সেদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশের এন্টি টেররিজম বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বোমারু মিজানকে গ্রেফতার করার পর পরই আনুষ্ঠানিকভাবেই বাংলাদেশ সরকারকে ভারত সরকার জানিয়েছে। ছবিও পাঠিয়েছিল। সেই ছবি দেখে ছবিটি বোমারু মিজানের বলে শনাক্ত করে জানানো হয়। বোমারু মিজানের বিষয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সব উইং ও তাদের সর্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। যোগাযোগের সূত্র ধরে তিনি জানান, ভারত ও বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএস ও আল কায়েদা নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ জঙ্গী সংগঠন দুইটি অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। তারা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ ও ভারতে ঘাঁটি গাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, জেএমবির পুরনো ধারাটি আল কায়েদার অনুসারী। আর নতুন ধারা যেটি নব্য জেএমবি হিসেবে পরিচিত সেটি আইএসের অনুসারী। জঙ্গী সংগঠনটি দুটি নিজেদের মধ্যে থাকা ভেদাভেদ ভুলে শুধু টিকে থাকার জন্য ভারত উপমহাদেশে একত্রে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেটি একেবারেই নতুন। এজন্য বিষয়টি খুবই ভাবিয়ে তুলেছে দুই দেশকেই। আইএস ও আল কায়েদা যদি একত্রে কাজ করে তাহলে সেটি যথেষ্ট ভয়ের ব্যাপার। জঙ্গী সংগঠন দুইটি ভারতীয় কিছু কিছু জঙ্গী সংগঠন এবং বাংলাদেশের জেএমবির নতুন ও পুরনো দুইটি ধারা এবং হুজির সক্রিয় থাকা গ্রুপটির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। তাদের পাকিস্তানে শক্তিশালী জঙ্গী নেটওয়ার্ক আছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সমমনা জঙ্গী সংগঠনগুলোর নিজেদের মধ্যে জঙ্গী আদান প্রদান হচ্ছে। যেসব বাংলাদেশী জঙ্গীদের নিজ দেশে থাকা সমস্যা তারা ভারতে আত্মগোপন করছে। সেখানে সমস্যা হলে তারা সীমান্ত পথে পাকিস্তান চলে যায়। একইভাবে ভারতীয় জঙ্গীরা সেদেশে সমস্যার কারণে বাংলাদেশে আত্মগোপন করছে। এখানে সমস্যা হলে আবার ভারতে গিয়ে পাকিস্তান গিয়ে আত্মগোপন করছে। এটি বড় ভয়ের বিষয়। পাকিস্তানের জঙ্গীরা আকাশ পথে বাংলাদেশে আসতে সমস্যা হওয়ার কারণে সীমান্ত পথে ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করে। ভারতের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে বাংলাদেশে জঙ্গীবিরোধী গোপনে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। জঙ্গীদের এমন নিরাপদ আস্তানা গড়ে তোলাসহ তাদের টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত একটি বিশেষ ইসলামী দল ভূমিকা রাখছে। তারা নানাভাবে জঙ্গীদের অর্থায়ন করে যাচ্ছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) একযোগে সিরিজ বোমা হামলার পরই জেএমবি আল কায়েদাসহ আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনগুলোর নজরে আসে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রত্যক্ষ মদদে দেশে জঙ্গীবাদ রীতিমত ঘাঁটি গেড়ে বসে। সিরিজ বোমা হামলার মধ্যদিয়ে জঙ্গীরা তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়। সিরিজ বোমা হামলার পর জেএমবি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে। ওই সময় জামায়াতে ইসলামী জেএমবির হাল ধরে। ২০১০ সালের ২৪ মে জেএমবি আমির মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফর গ্রেফতার হওয়ার পরেও জেএমবির অতীত কর্মকা- এবং দলটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জামায়াতে ইসলামী কিভাবে ভূমিকা রাখে সে সম্পর্কে নানা কথা জানান।
×