ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের পর শেয়ারবাজারে আসছে ৯৪৬ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৬ আগস্ট ২০১৮

ঈদের পর শেয়ারবাজারে আসছে ৯৪৬ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঈদ-উল-আজহার ছুটির পরে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসছে ৯৪৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৬ হাজার ৬৪৫ টাকা। কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ২৫ শতাংশ শেয়ারের বিনিময়ে ডিএসইকে এই টাকা দিচ্ছে। এর ফলে তারল্য সঙ্কটের বাজারে ডিএসইর ২৫০ জন শেয়ারহোল্ডারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে এই টাকা আসবে। অন্যদিকে, দেশের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদায় উন্নীত হচ্ছে। ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন এ বিষয়ে আশা প্রকাশ করে বলেন, চীনের কাছ থেকে পাওয়া এ টাকার ৮০-৯০ শতাংশই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে বলে আশা করেন। তিনি বলেন, ডিমিচুয়ালাইজেশন আইন ডিএসইর ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫টি শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে চীনা কনসোটিয়ারে কাছে। সেই চুক্তি অনুসারে চীনা দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ঈদের পর অর্থাৎ আগস্ট মাসের শেষদিকে টাকা দিচ্ছে। কোন সমস্যা হলে হয়তো সেটা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দিবে। ইমন বলেন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে বাজারে আস্থা ও তারল্য সঙ্কট দূর করতে এই টাকা বিনিয়োগ করব। সেই লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রীকে একটি প্রস্তাবও দিয়েছি যাতে করে এই টাকার ওপর কর প্রত্যাহার করেন। ডিএসই সূত্র জানায়, এই টাকা জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট করাসহ অন্য সব কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন সর্বশেষ এ টাকার ওপর থাকা ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার এবং ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর উৎসে কর দশমিক ০১৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হবে। এ দাবিসহ সব কিছু ঠিকঠাক পূরণ হলে আগস্টের শেষ সপ্তাহে এই টাকা পাবে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা। নয়তো সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ হবে। ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখা ও বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি আকৃষ্ট করতে ডিএসইর শেয়ারের ওপর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহারের কথা বলেছি। এটি হলে আমরা সব টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করব। তাতে বাজারে ফ্রেশ ফান্ড আসবে। তারল্য সঙ্কট কিছুটা দূর হবে। পাশাপাশি শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা চেয়েছি, এটি দেয়া হলে পুরো টাকা ডিএসইর উন্নয়নে ব্যয় করব। এ টাকায় ডিএসইতে ডাটা সেন্টার ও ক্লিয়ারিং এ্যান্ড সেটেলম্যান্ট কর্পোরেশন করা হবে। কারণ চীনা করসোটিয়াম ৩৭ মিলিয়ন ডলার অর্থ দেবে কারিগরি সহযোগিতায়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সাংহাই ও শেনজেন চীনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুঁজিবাজার। বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের সেরা দশ স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকায়ও রয়েছে এ দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। ফলে তারা ডিএসইর মালিকানায় আসায় দেশের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা পেয়েছে। এর ফলে পুঁজিবাজারে বিদেশীরা বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট হবে। চলতি বছরের ১৪ মে রাজধানীর লা- মেরিডিয়ান হোটেলে ডিএসইর স্ট্রাটেজিক পার্টনার (কৌশলগত বিনিয়োগকারী) হিসেবে চুক্তি স্বাক্ষর করে চীনা স্টক এক্সচেঞ্জ। অনুষ্ঠানে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এ এম মাজেদুর রহমান, শেনজেনের প্রেসিডেন্ট ও চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) ওয়াং জিয়ানজুন এবং সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জর চেয়ার অব সুপারভাইজরি বোর্ডের প্যান জুইজিয়ান চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খায়রুল হোসেন, ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাশেম, ডিএসইর পরিচালক ও সদস্য এবং পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে নানা টালবাহানার পর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়ামের আবেদনের প্রস্তাব গত ৩ মে অনুমোদন দেয় বিএসইসি। ডিএসইর এ মালিকানা পেতে চীনা কনসোর্টিয়াম ছাড়াও ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্ট্রিয়ার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক-এর কনসোর্টিয়াম আবেদন করেছিল।
×