ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মার্কিন ইলেক্ট্রনিক পণ্য বর্জনের আহ্বান এরদোগানের

তুরস্কের পাল্টা শুল্কারোপ

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ১৬ আগস্ট ২০১৮

তুরস্কের পাল্টা শুল্কারোপ

তুরস্ক বুধবার কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে। এর আগে গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তুরস্কের ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়ামের ওপর আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেয়। এরপর মার্কিন ডলারের বিপরীতের তুরস্কের মুদ্রা লিরার ব্যাপক দরপতন ঘটে। সর্বশেষ তুরস্কের পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হলো। ইয়াহু নিউজ। আঙ্কারা অফিসিয়াল গেজেটে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাল, যানবাহন, এ্যালকোহল, কয়লা ও কসমেটিক আমদানির ওপর উচ্চহারে আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপের পাল্টা জবাব হিসেবেই এটি করা হচ্ছে বলে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতাই টুইট বার্তায় জানিয়েছেন। চলতি বছর তুর্কী মুদ্রা লিরার দর ৪২ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে গেছে। বেশিরভাগ দরপতন ঘটে গত কয়েক সপ্তাহে। বিশেষ করে গত কয়েক দিনের লিরার অব্যাহত দরপতনের পর ডলারের বিপরীতে ডলারের দর এখন মোটামুটি ৬.৫ এর মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে। তুরস্ক ন্যাটোর অন্যতম মিত্র। দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রতি সম্পর্কে যেভাবে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে তাতে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। তারা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানের অর্থনৈতিক নীতি ও তুরস্কের বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক ঋণ নিয়েও উদ্বিগ্ন। তুরস্কের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে। লিরার উদ্বেগজনক পতনের পর বিনিয়োগকারীরা ডলার ও ইয়েন ব্যবহারে আরও বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেন। তুরস্ক এবং অন্যান্য ঋণ গ্রহণকারী দেশগুলো সাধারণত এমন সময় ঋণ নেয় যখন বাজারে ডলারে সহজপ্রাপ্য এবং মূল্য কম থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো ও ইন্দোনেশিয়ার মতো উন্নয়ন অর্থনীতির দেশগুলো এখন উদ্বেগের মধ্যে আছে। এরদোগান মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি দেন তুরস্কের নাগরিকরা আইফোনের মতো মার্কিন ইলেক্ট্র্রনিক্স কেনার পরিবর্তে কোরিয়ান পণ্য ব্যবহার করবে। এরদোগানের এ ঘোষণার পর তুরস্কের ইলেক্ট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি ভেসটেলের শেয়ার পাঁচ শতাংশ বাড়ে। গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই তুরস্কের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তুরস্ক থেকে ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এতে অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে তুরস্ক। দেশটির মুদ্রা লিরার মান কমেছে রেকর্ড পরিমাণে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সোমবার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার তুরস্কের সমালোচনা করে একটি টুইট করেন। তিনি এতে এ্যান্ড্রু ব্রেনসনকে ২১ মাস ধরে আটক রাখার সমালোচনা করেন। তুরস্কে দু’বছর আগে একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর অন্য অনেকের সঙ্গে ব্রেনসন আটক হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা এবং গুপ্তচরবৃত্তির’ অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তার ৩৫ বছর পর্যন্ত কারাদ- হতে পারে । যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এসব অভিযোগের কোন প্রমাণ নেই বলেও মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি মাসের ১ তারিখ তুরস্কের স্বরাষ্ট্র ও বিচারমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রেনসন ছাড়াও ওই ঘটনায় ২০ মার্কিন নাগরিক আটক হয়েছিলেন। এছাড়াও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইরত কুর্দী বিদ্রোহী গ্রুপের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও দু’দেশের মধ্যে বিরোধের আরেকটি কারণ। তুরস্ক কুর্দীদের জঙ্গী সংগঠন বলে বিবেচনা করে এবং দেশটি নিজ ভূখ-ে কুর্দী বিদ্রোহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের ঘনিষ্ঠতাও যুক্তরাষ্ট্র ভাল চোখে দেখে না। যুক্তরাষ্ট্রের ইলেক্ট্র্রনিক পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান। তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়ামের ওপর দ্বিগুণ শুল্কারোপের পর এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় এরদোগান মঙ্গলবার এ আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্রের ইলেক্ট্রনিক পণ্য বয়কটের ঘোষণা দিয়ে এরদোগান আরও বলেন, ‘যদি তাদের আইফোন থাকে, তবে অন্যদিকে কোরিয়ার তৈরি স্যামসাং আছে। আমাদের নিজেদের ভেসটেলও বিকল্প হতে পারে।’ এরদোগানের এ ঘোষণার পর তুরস্কের ইলেক্ট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি ভেসটেলের শেয়ার পাঁচ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের মূল বিরোধটা বেঁধেছে আমেরিকান যাজক এন্ড্রু ব্রেনসনকে নিয়ে। তার সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত কুর্দিস্থান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) এবং ফেতুল্লাহ গুলেন পন্থী সংগঠনের যোগাযোগ আছে বলে অভিযোগ তুরস্কের। ফেতুল্লাহ গুলেনই ২০১৬ সালে দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার হোতা বলে দাবি এরদোগানের। এছাড়াও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইরত কুর্দী বিদ্রোহী গ্রুপের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও দু’দেশের মধ্যে বিরোধের আরেকটি কারণ। তুরস্ক কুর্দীদের জঙ্গী সংগঠন বলে বিবেচনা করে এবং দেশটি নিজ ভূখ-ে কুর্দী বিদ্রোহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের বাড়তে থাকা ঘনিষ্ঠতাও ন্যাটো জোটের দুই সদস্য দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরিয়েছে। ন্যাটো জোট রাশিয়াকে তাদের এক নম্বর শত্রু বলে বিবেচনা করে।
×