ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

থিম্পুতে ফুরফুরে মেজাজে বাংলার বাঘিনীরা

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১৫ আগস্ট ২০১৮

থিম্পুতে ফুরফুরে মেজাজে বাংলার বাঘিনীরা

রুমেল খান ॥ ফুটবল একাডেমিতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর কারণেই দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে ভুটানের ফুটবল। সোমবার ভারতের কাছে তারা ০-১ গোলে হারলেও জিততে ভারতকে বেশ কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। এই হারে ভুটান ‘এ’ গ্রুপে হয়েছে রানার্সআপ। এর সুবাদে ‘সাফ অ-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ তারা টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে খেলবে। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে স্বাগতিক দলের প্রতিপক্ষ হচ্ছে এই আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। যারা ‘বি’ গ্রুপের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে হারিয়েছে যথাক্রমে পাকিস্তানকে ১৪-০ এবং নেপালকে ৩-০ গোলে। নিজেদের প্রথম গ্রুপ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ভুটান। আগের দুই ম্যাচ জিতলেও ভুটানকে সমান গুরুত্ব দিয়েই সেমিফাইনালের জন্য কঠোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বঙ্গকন্যারা। মঙ্গলবার যথারীতি সকালে রিকভারি ও জিমে অংশ নেয় মেয়েরা। এরপর ম্যাচ ভেন্যু চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে গিয়ে অনুশীলন করে গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। সুখবর হলো এখনও দলে কোন ইনজুরি সমস্যা নেই। বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষক রুপনা চাকমার অভিমত, ‘আমি খুবই খুশি। কারণ আমরা নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি এবং সেমিফাইনালে উঠেছি। সেখানে আমাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভুটান। আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে ভুটানের বিপক্ষে জয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সবার কাছে দোয়া চাই যেন চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখতে পারি।’ স্ট্রাইকার রেহানা আক্তারের ভাষ্য, ‘গ্রুপ পর্ব পার হয়ে এখন আমরা সেমিফাইনালে। ভুটানের বিপক্ষে নিজেদের শতভাগ উজার করে দিয়ে জিতে ফাইনালে খেলতে চাই। আমার স্বপ্ন এবারের সাফ অ-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা।’ সোমবার রাতের চাংলিমিথাংয়ে ফুটবল উৎসবে যোগ দেন প্রবাসী বাংলাদেশী দর্শকরাও। তাদের উল্লাসে আরও অনুপ্রাণিত হয়ে খেলে তহুরা, মারিয়ারা। মেয়েদের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে হাজির হন ভুটানে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত জিষ্ণু রায় চৌধুরীও। বাংলার এই ফুটবলাররা একদিন বিশ্বকাপ খেলবে বলেও আশা করেন তিনি। নেপালের বিপক্ষে বড় জয় না পাওয়ায় কিছুটা আক্ষেপ আছে বাংলার বাঘিণীদের। তবে সব ভুলে সেমিফাইনালের জন্য তৈরি হতে চায় তারা। তহুরা খাতুনের ভাষ্য, ‘খেলার শেষ পর্যন্ত সবাই চেষ্টা করেছে সর্বোচ্চটা দেয়ার।’ আঁখি খাতুনের প্রতিক্রিয়া, ‘ম্যাচটা জিতে গেছি। এটার চিন্তা শেষ। এখন আমাদের চিন্তা সামনের ম্যাচটা ভাল করার।’ শুরুতে মানসিকভাবে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও, বাংলাদেশ তাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলেই জয় তুলে নিয়েছে। নেপালের বিপক্ষে জয়ের পর এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। ফিটনেসের দিক থেকেও নেপালের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল বলে মনে করেন এই কোচ, ‘আমাদের ম্যাচটি জেতার দরকার ছিল। তারা নব্বই মিনিট একইভাবে খেলেছে। আমি মনে করি নেপাল এবং আমাদের মেয়েরা প্রথমার্ধে সমানতালে খেলেছে। দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের মেয়েদের ফিটনেসের কাছে নেপাল তাদের খেলাটা ধরে রাখতে পারেনি। যখনই তাদের ফিটনেসে সমস্যা হয়েছে তখনই তারা মনোযোগ হারিয়েছে এবং আমাদের মেয়েরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে।’ অন্যদিকে সেমিফাইনালে ভুটানকে শক্তিশালী মানলেও বাংলাদেশের কিশোরীদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছোটন, ‘তিনি বলেন, ‘ভুটান বাংলাদেশের চেয়ে শক্তিশালী দল। তাছাড়া তারা স্বাগতিক দল। স্থানীয় সমর্থন পাবে। সবকিছু ছাপিয়ে আমরা খেলব। আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলব এবং জেতার জন্যই খেলব।’ এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার টুর্নামেন্টে গোল না খাওয়ার রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করল বাংলাদেশ। সোমবার নেপালকে হারিয়ে টানা ৬ ম্যাচ নিজেদের পোস্ট অক্ষত রাখল বেঙ্গল টাইগ্রেস দল। সাফ অ-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের এটি দ্বিতীয় আসর। প্রথম আসর বসেছিল গত বছর ডিসেম্বরে ঢাকায়। ওই আসরে বাংলাদেশ হয় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশ প্রথম রাউন্ডে ৩ ম্যাচে করেছিল ১২ গোল। প্রথম ম্যাচে নেপালকে ৬-০ গোলে, দ্বিতীয় ম্যাচে ভুটানকে ৩-০ গোলে, তৃতীয় ম্যাচে ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শীর্ষে থেকে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশের কিশোরীরা। ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। সাফ অ-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা ৬ ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। ৬ ম্যাচে তাদের গোলসংখ্যা ৩০। মজার ব্যাপার, এই ৬ ম্যাচে তারা একটি গোলও হজম করেনি! তার মানে তারা গোল খায়নি একটানা ৫৪০ মিনিট! এখন দেখার সেমির ম্যাচে ভুটানকে হারিয়ে আবারও ফাইনালে উঠতে পারে কি না লাল-সবুজ বাহিনী।
×