ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৫ আগস্ট ২০১৮

বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের বাণিজ্যিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের ফলে তুরস্কের মুদ্রা লিরার ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। এর প্রভাব বিশ্বের অনেক মুদ্রা বাজারে পড়তে শুরু করেছ। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানও তার অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক নীতিমাল থেকে সরে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন আরেকটি অর্থনৈতিক সঙ্কট হতে পারে। -ওয়াশিংটন পোস্ট। মার্কিন ডলারের বিপরীতে তুর্কী মুদ্রা লিরার দর ৮ শতাংশ পড়ে গেছে। এটি বিশ্বের অনেক মুদ্রাবাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে যেসব দেশের মুদ্রা আগে থেকেই দুর্বল অবস্থানে আছে। লিরার উদ্বেগজনক পতনের পর বিনিয়োগকারীরা ডলার ও ইয়েন ব্যবহারে আরও বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেন। তুরস্ক এবং অন্যান্য ঋণ গ্রহণকারী দেশগুলো সাধারণত এমন সময় ঋণ নেয় যখন বাজারে ডলারে সহজপ্রাপ্য এবং মূল্য কম থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো ও ইন্দোনেশিয়ার মতো উন্নয়ন অর্থনীতিগুলো এখন উদ্বেগের মধ্যে আছে। ২০০৭-০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় মোট বৈশ্বিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৭ ট্রিলিয়ন ডলার। গত বছর সেটি ১৬৯ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বৈশ্বিক ঋণের পরিমাণ যেভাবে বেড়েছে যে কোন সময় কোন দেশের ঋণের পরিশোধের সমস্যা দেখা দিলে ২০০৭ সারের মতো অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়ার ঝুঁকি সেভাবে বাড়বে। তুরস্কের দেখাদেখি দক্ষিণ আফ্রিকা ও আর্জেন্টিনার মুদ্রারও দরপতন ঘটেছে। এরদোগান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করার মতো যথেষ্ট মজবুত অর্থব্যবস্থা রয়েছে তুরস্কের। তিনি বলেন, ‘তুরস্কের অর্থনীতির ওপর আরও আঘাত আসবে। তবে সে সব মোকাবেলা করার মতো মানসিকতা আমাদের রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তুরস্কের অর্থনীতির ধারা মজবুত, স্থিতিশীল ও সুরক্ষিত। এটি সুরক্ষিতই থাকবে। রাজধানী আঙ্কারার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত তুর্কী রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশে দেয়া বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই তুরস্কের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তুরস্ক থেকে ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এতে ব্যাপক অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে তুরস্ক। দেশটির মুদ্রা লিরার মান কমেছে রেকর্ড সংখ্যক। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সোমবার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এরদোগান দাবি করেন শীঘ্রই লিরার মান স্থিতিশীল হবে। এই প্রথম এ বিষয়ে সরাসরি কথা বললেন রিসেপ তাইপ এরদোগান। সোমবার তিনি বলেন, ‘আরও অনেক দিকের মতো তুরস্ক অর্থনৈতিক দিক থেকেও অবরোধের মধ্যে পড়েছে’। তবে তিনি যাই দাবি করুন বিনিয়োগকারীদের সংশয় দূর হওয়ার মতো অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তুরস্কে আটক এক মার্কিন ক্যাথলিক যাজককে নিয়ে কূটনৈতিক বিবাদের প্রেক্ষাপটে দুদেশের সম্পর্কে সর্বশেষ এই জটিলতা দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র তুর্কী ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়ামের ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করার পর ডলারের বিপরীতে লিরার মূল্যমান ক্রমাগত কমছে। এশিয়ার বাজারে লিরার দাম ৭.২৪ পর্যন্ত পড়ে গেছে। এরদোগান এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যায়িত করেছেন। সোমবার দিনের প্রথম দিকে লিরার প্রায় ৯ শতাংশ দরপতন হয়। ডলারের বিপরীতে লিরার বিনিময় মূল্য দাঁড়ায় ৭.২৪-এ। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণার পর লিরার মূল্যমান সামান্য বেড়ে ৬.৮-এ দাঁড়িয়েছে। এতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। কারণ, বিনিময় মূল্য ৬.৮ হওয়ার পরও ডলারের বিপরীতে লিরার মান অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার এশিয়ার বাজার তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকে।
×