ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পিত শ্রদ্ধায় দীর্ঘতম ক্যানভাসে উদ্ভাসিত জাতির পিতা

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৫ আগস্ট ২০১৮

  শিল্পিত শ্রদ্ধায় দীর্ঘতম ক্যানভাসে উদ্ভাসিত জাতির পিতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যদিও কোন উচ্চতায় মাপা যায় না তাঁকে। তবে সেই মাপকাঠিতে জড়িয়ে আছে শিল্পিত ভালবাসা। শত শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়ে চিত্রিত হয়েছে জাতির পিতার মুখচ্ছবি। দেশের ইতিহাসে সেই চিত্রকর্মটি রূপ পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘতম প্রতিকৃতিতে। ৪৩ ফুট উচ্চতার ক্যানভাসে দৃশ্যমান হয়েছেন শেখ মুজিব। স্বাধীনতার মহান স্থপতির বিশাল প্রতিকৃতিটি শোভা পাচ্ছে শহরের প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন মিলন চত্বরের পাশে উপস্থাপিত হয়েছে সেই ছবিটি। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত একই স্থানে প্রদর্শিত হবে চিত্রকর্মটি। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের উদ্যোগের অঙ্কিত হয়েছে এই প্রতিকৃতি। প্রতিকৃতিটি উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতায় ছিল কবিতার ছন্দ ও গানের সুর। বর্ণিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় সজ্জিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। চারুশিল্পী সংসদের সভাদের শিল্পী জামাল আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান, শাহাবুদ্দিন আহমেদ ও স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী। তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর এক বিশাল প্রতিকৃতি দেখে খুবই ভাল লাগছে। এর সামনে দাঁড়িয়ে আমার মনে হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু আমাকে পেছন থেকে ডাকছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যে বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন; তার সেই হত্যাকান্ডের দিনটিতে খালেদা জিয়া জন্মদিন পালন করেন। তার বোঝা উচিত, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু গেলে সবাই তার দিকে নজর রাখতেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের নেতা। শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, পৃথিবীতে অনেক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে; মহাত্মা গান্ধী, কেনেডি, আনোয়ার সা’দাত ছাড়াও আরও অনেক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে যা ঘটেছে তা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেনি; আর ঘটবে বলেও আমার মনে হয় না। বঙ্গবন্ধু সূর্যের মতোই সত্য। তিনি আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, সংস্কৃতিকে ভালবেসে ছিলেন, সকল মানুষকে ভালোবেসেছিলেন; মাথা উঁচু করে চলতেও শিখিয়েছিলেন। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো মহামানব না থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। অথচ পঁচাত্তরের নৃশংসতম হত্যাকা-ের মাধ্যমে জাতির জনকের নামটি মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। আর হত্যাকা- শুধু ক্ষমতার লোভে সংঘটিত হয়নি, এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে। ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। চাইলেও কেউ মুছে দিতে পারবে না তাঁর নামটি। তিনি থাকবেন গানের সুরে, কবিতার ছন্দে কিংবা শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়ে। আজ যেখানে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘতম প্রতিকৃতিটি উন্মোচিত হলো ঠিক তার উল্টো পাশের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় একক আবৃত্তি করেন আহকাম উল্লাহ, রফিকুল ইসলাম, তামান্না সারোয়ার নীপা, মাসুজ আজিজুল বাশার ও ঝর্ণা সরকার। একক কণ্ঠে আরিফ রহমান গেয়ে শোনান ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’, শিমুল সাহা ‘মুজিব বাইয়া যাওরে’, আবিদা রহমান সেতু ‘বঙ্গবন্ধু লও সালাম’। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখার শিল্পী। তাদের কণ্ঠে গীত হয় ‘আমরা সবাই বাঙালী’, ‘তোমার ও নাম মুছে ফেলবে এমন সাধ্য কার’ ও ‘সোনা সোনা লোকে বলে সোনা’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হানিফ খান। দেড়শ শিল্পীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ত্রিশ শিল্পীর রংতুলিতে আঁকা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটি। প্রতিকৃতির ছবি নির্বাচন, লে আউট তৈরি, ক্যানভাস প্রস্তুতসহ কারিগরি কাজ শুরু হয় পহেলা আগস্ট। ক্যানভাসে লাইন ড্রয়িংয়ের কাজটি হয়েছে টিএসসির মিলনায়তন ও সুইমিংপুল চত্বরে। চিত্রপটের ওপর এ্যাক্রেলিক কালারে আঁকা হয়েছে ছবিটি। তুলির আশ্রয়ে শিল্পীর ভালবাসায় ফ্রেমের শরীরে রং লেগেছে হাতের আঁচড়ে। অনেকগুলো টুকরো ফ্রেমের ক্যানভাসে স্বতন্ত্রভাবে একেকটি অংশ এঁকেছেন ভিন্ন ভিন্ন শিল্পীরা। পরে টুকরোগুলোকে একত্রে জুড়ে দিয়ে তৈরি হয়েছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিকৃতি। শিল্পকলায় বিশ্বসাহিত্য পরিক্রমা ॥ শিল্পকলা একাডেমি বিশ্ব-সাহিত্যের অনন্য ও আলোকিত অংশ এবং এর সৌন্দর্যকে শিল্পসমঝদার ও সাহিত্যপ্রেমীদের সামনে উপস্থাপনের লক্ষ্যে আয়োজন করেছে পাক্ষিক বিশ্বসাহিত্য পরিক্রমা। পাক্ষিক আয়োজনের প্রথম পর্ব শুরু হয় মঙ্গলবার। প্রথম পর্বে ‘আরবী সাহিত্যের অতীত ও বর্তমান চর্চা এবং বাংলাদেশে আরবী সাহিত্যের অবস্থান’ বিষয়ে আলোচনা হয়। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক। মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আহমদ রফিক বলেন, বিশ্বসাহিত্যের আলোকিত ও ইতিবাচক দিকগুলো আমাদের সাহিত্যে গৃহীত বা আত্তীকৃত করা হলে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হবে। শিল্পকলা একাডেমির এ আয়োজন বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে। যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক বলেন, আরবী সাহিত্যের ইতিহাস-ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিকগণ এ ভাষায় সাহিত্য চর্চা করেছেন। তার মধ্যে রয়েছেন ইমরুল কায়েস, কাহলিল জিব্রান ও নাজিব মাহফুজ এর মতো বরেণ্য সাহিত্যিক। বাংলা ভাষায় প্রচুর আরবী শব্দ গৃহীত হয়েছে এবং বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবিদের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ ও মোহিতলাল মজুমদারসহ অনেক কবি লেখক আরবী শব্দ এবং বাক্যবন্ধ প্রয়োগ করে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন। আরবী ভাষার বেশকিছু ছন্দও বাংলা কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে।
×