ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠনের দাবি

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১৫ আগস্ট ২০১৮

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠনের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত এবং মহাষড়যন্ত্রে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য একটি জাতীয় কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিকসহ দেশের বিশিষ্টজনরা। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব আয়োজিত ‘ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড’ শীর্ষক জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় এই কমিশন গঠনের দাবি জানান বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশিদ, সাংবাদিক আব্দুল কাইয়ুম মুকুলসহ অন্যরা। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি তবে বঙ্গবন্ধুকে ধরে রাখতে পারিনি। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র গঠনে যে দর্শন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সূদূর প্রসারি যে চিন্তা ছিল তা নস্যাৎ করে দিতেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এ জন্য দেশী বিদেশী চক্রান্ত হয়। দেশের ভেতরে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ছিল যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে এগিয়ে আসে। তিনি আরও বলেন, আমি বলব না কতিপয় বিপথগামী এই হত্যাকান্ডে অংশ নেয়। আমি মনে করি সে সময় রাজনীতিবিদ, সামরিক, আমলাসহ বিদেশী চক্রান্তের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করা হোক। যারা এটি তদন্ত করে দেখবে। অনেক দেশেই মহানায়কদের, রাষ্ট্রপ্রধানদের হত্যাকান্ডের ঘটনায় এই কমিশন করা হয়। এটি আমাদেরও এখন সময়ের দাবি। তিনি এই হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করার দাবিও জানান। সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির বলেন, আমার কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমরা অনেক আগেই আরও অনেক উন্নত হতে পারতাম। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কর্ম জীবন নিয়ে স্মৃতি চারণ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তাঁর আদর্শ মুছে দিয়ে দেশকে পেছনে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে যে ক্ষতি হয়েছে অর্থনৈতিকভাবে তা ‘রিকোভারি’ করা গেলেও সামাজিকভাবে তা সম্ভব নয় এবং সহজও নয়। আমাদের এখনও প্রতি পদক্ষেপে সংগ্রাম করতে হবে বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দেখান পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসে একটি অভিশপ্ত দিন। তবে ষড়যন্ত্র ’৭৫ এর আগেই শুরু হয়েছে এবং এখনও চলমান আছে। এই ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ শেখ হাসিনার ওপর বারবার আঘাত হানা। ২০০৫ সালে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা ষড়যন্ত্রেরই অংশ। তাই এটি চলমান। এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, কারা বঙ্গবন্ধুর বুকে সরাসরি মেশিন গান চালিয়েছে? কারা আবার তাদেরকে বিদেশে পাঠিয়েছে, বিভিন্নস্থানে পুনর্বাসন করেছে, তা তথ্য প্রমাণসহ জনগণের সামনে উপস্থাপন হওয়া জরুরী। কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, রাষ্ট্রনায়কদের এ ধরনের হত্যাকা-ে কমিশনের মাধ্যমে সব তদন্ত প্রকাশ করা হয়। ইন্দিরা গান্ধী, রাজিব গান্ধী হত্যাকা-ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমরাও চাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের সকল তথ্য উদ্ঘাটন হতে কমিশনের মাধ্যমে এসব পূর্বাপর সকল ঘটনা উঠিয়ে আনা হোক। সাংবাদিক আব্দুল কাইয়ুম মুকুল বলেন, খুনীরা চেয়েছিল সবার নাম নিশানা মুছে দিতে। তবে সেটা হয়নি। তাঁরই কন্যা দীর্ঘদিন পর হলেও ক্ষমতায় এসেছে। এই দেশের মানুষের ভাগ্যে উন্নয়নে কাজ করছে। দেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে সাময়িকভাবে দেশকে পিছিয়ে দেয়া হলেও স্তব্ধ করা যায়নি। অর্থনৈতিক সামাজিক সব দিকেই উন্নয়ন হচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয় অনেকে মেনে নিতে পারেনি। যেটি সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর কারণে। বঙ্গবন্ধুর জন্যই বাংলাদেশ একটি বিস্ময় হয়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে আন্তর্জাতিক হাত থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, এটি একটি সামরিক চক্রান্ত আমি মনে করি না। এখানে দেশী বিদেশী সব চক্রান্তই ছিল। ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটন একটি বড় বিষয় উল্লেখ করে বলেন, অনেকেই পরবর্তীতে সাধু হয়ে গেছেন। আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি তবে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে পারলে আমরা কিছু করতে পারলাম বলে সান্ত¡না পাব। তিনি বলেন, ওই সময় কমান্ড পজিশনে যারা ছিলেন তাদের দেশের প্রতি আনুগত্যের অভাব ছিল। কেননা হত্যাকা-ের পরও অন্যান্য সংস্থা কোন ‘রিএ্যাক্ট’ করেনি। কারা ঘাতকদের আশ্রয়, প্রশ্রয় দিয়েছে। কারা পুনর্বাসন করেছে তা আমাদের ভাবিয়ে তুলে। সবকিছু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ওই সময় দেশের প্রতি আনুগত্যহীন মানুষ গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ছিল। আগামীর বাংলাদেশ নিরাপদ করতে চাইলে এসব ভেবে কাজ করার পরামর্শ দেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। শুধুমাত্রা জিয়াউর রহমানকে সামনে রেখে বিচার শুরু হোক, সকল ষড়যন্ত্র সামনে চলে আসবে। ষড়যন্ত্র এখনও হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সময় হত্যাকারীরা মনে করেছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ছাড়া বিকল্প নেই। আর এখন তারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়। তাই তো শেখ হাসিনার ওপর বার বার আঘাত করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে এখনই কমিশন গঠন করার ওপর জোর দেন। কমিশনের মাধ্যমে বিচার শুরুর কথা বলেন। এর আগে স্বাগত বক্তব্যে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার সময়ই, দেশকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় হত্যাকা-ের মাধ্যমে সব শেষ করে দেয়া হলো। এমন জঘন্য ষড়যন্ত্র যেখানে পরিবারের সবাইকে এমনকি ছোট্ট রাসেল পর্যন্ত বাদ যায়নি। সে সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। সেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা যখন দেশকে সমৃদ্ধ করছেন, উন্নয়নের রোল মডেল করেছেন তখন কারও কারও সহ্য হচ্ছে না। সেই পাকিস্তানের পরাজিত শক্তি আবার উঠে পড়ে লেগেছে শেখ হাসিনার বিপক্ষে একই সঙ্গে দেশের বিপক্ষে। যেহেতু ষড়যন্ত্র এখনও চলমান তাই সবাইকে এই নিয়ে সতর্ক থাকার কথাও বলেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া। আলোচনা সভায় এ সময় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছাড়াও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, একুশে টেলিভিশনের সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
×