ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্পর্শজনিত চর্মরোগ

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১৪ আগস্ট ২০১৮

 সংস্পর্শজনিত চর্মরোগ

ত্বকের সংস্পর্শে কোন বস্তু আসার ফলে যদি ত্বকের গায়ে প্রদাহ দেখা দেয় বা অন্য কোন রকমের বিকৃতি বা উপসর্গ দেখা যায়, তবে তাকেই সংস্পর্শজনিত চর্মরোগ বলা হয়। একটি উদাহরণ দিলে হয়ত বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। যেমন মনে করুন আপনি হাতে একটি ঘড়ি পরেছেন কিংবা একটি আংটি ব্যবহার করছেন। এই ঘড়ি বা আংটি ব্যবহার করার ফলে আপনার শরীরের সেই অংশটিতে যদি বিকৃতি দেখা দেয় বা এমন কিছু উপসর্গ দেখা দেয় যা আপনার শরীরের ঐ অংশে কখনও ছিল না, তবে সেটাই হলে Contact dermatitis বা স্পর্শজনতি চর্মরোগ। আর একটি মালিস বা জেল, ব্যবহার করলেন। করার পর যদি স্থানটি লাল হয়ে যায়, জ্বলে বা চুলকায় এবং ব্যথা করে কিম্বা ফোস্কা ওঠে তাহলে ধরে নিতে হবে এটি একটি সংস্পর্শজনিত চর্মরোগ অর্থাৎ ঐ মলম আপনার ত্বকের সংস্পর্শে আসার জন্য এ রকমটি হয়েছে। এই ধরনের সমস্যার সবচেয়ে বেশি আমরা পেয়ে থাকি চুলের কলপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে। চুলকে কালো করার জন্য কলপ ব্যবহার করা হয় এবং সেই কলপ যখন চুল পেরিয়ে মাথার ত্বকে লাগে, তখন মাথার ত্বক চুলকাতে পারে অথবা নাক, মুখ পর্যন্ত ফুলে গিয়ে এক বীভৎস অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এই অবস্থানটিকে সংস্পর্শজনিত ডার্মাটাইটিস বলা হয়ে থাকে। একে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। (ক) প্রাইমারি ইরিট্যান্ট ডার্মাটাইটস। এক্ষেত্রে প্রদাহ সৃষ্টিকারী পদার্থগুলো শরীরে কোন রকম এলার্জি সৃষ্টি করে না। এবং প্রদাহি রাসায়নিক প্রভাবে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ত্বকের প্রদাহ সৃষ্টি হয়। (খ) আর একটি হলো এলার্জির কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস। এ ক্ষেত্রে প্রদাহ সৃষ্টিকারী পদার্থ সরাসরি দেহে এলার্জি সৃষ্টি করে। প্রথমটির কারণ নিম্নরূপ এবং এটি শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। কারণ শিশুদের ত্বক খুব পাতলা। ফলে যে কোন উত্তেজক পদার্থের সামান্য স্পর্শেই এই রোগ দেখা দেয়। ক্ষার একটি অন্যতম কারণ। ব্লিচিং পাউডার, ডিটারজেন্ট, সাবান, বাসনপত্র পরিষ্কার করার জিনিসপত্রে ক্ষার থাকে এবং এই ক্ষার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বকের কোষকে নষ্ট করে, এই রোগের সৃষ্টি করে। এর বাইরে আগাছা কীটনাশক ওষুধ, লোহা, ইস্পাত, লুব্রিকেটিং তেল দিয়ে এই রোগের সৃষ্টি হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে কড়া সাবান, ডিটারজেন্ট, ব্লিচিং পাউডার, এসিড, ক্ষার পাউডার থুথু, প্রস্রাব এমনকি পায়খানা লেগেও এ রোগ হতে পারে। এলার্জির কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস সাধারণত বড়দের বেশি হয়। কারণ এই ধরনের এলার্জির জন্য শরীরে যে সমস্ত কোষ প্রয়োজন, জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের শরীরে তা থাকে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তা তৈরি হতে থাকে। এক বছরের পূর্ব পর্যন্ত সামান্য পরিমাণেই এটা হতে দেখা যায়। তিন থেকে আট বছরের ক্ষেত্রে তা প্রায় বড়দের মতোই হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয় : কোন পদার্থের সংস্পর্শে এসে এই এলার্জি সৃষ্টি হয় বা হয়েছে তা প্যাচ টেস্টের মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব। তবে এই পরীক্ষাটি ৮ বছরের ওপরের বয়সের লোকদের ক্ষেত্রেই ফলপ্রসূ। প্যাচ টেস্ট আর কিছুই নয়, সন্দেহভাজন বিভিন্ন পদার্থ, আঠালো প্লাস্টার দিয়ে ত্বকের সঙ্গে আটকে রাখা হয়। সাধারণত আটচল্লিশ ঘণ্টা ত্বকের সঙ্গেই লাগিয়ে রাখা হয়। তারপর খুলে আধা ঘণ্টা বাদে প্রথম পর্যবেক্ষণ করা হয়। বাহাত্তর ঘণ্টা, ছিয়ানব্বই ঘণ্টা এবং ১ সপ্তাহ বাদে স্থানটি আবার পর্যবেক্ষণ করা দরকার। শরীরের কোন স্থানে পদার্থ দিয়ে এ রোগ হতে পারে তার সংক্ষিপ্ত তালিকা : মুখ : প্রসাধনী, চুলের কলপ, হেয়ার স্প্রে ইত্যাদি। কান : কানের দুল বা গহনা বিশেষ করে তা যদি নিকেলের হয়। চোখের পাতা : প্রসাধনী বস্তু যা কিনা চোখের পাতায় ব্যবহার করা হয়। ঠোঁট : লিপস্টিক ও টুথপেস্ট। নাক : প্লাস্টিক বা ধাতুর তৈরি চশমার ফ্রেম। গলা : পশম জাতীয় জামাকাপড়, সুগন্ধি পদার্থ এবং নকল গলার হার। বগল : ঘামের গন্ধ নিবারক পদার্থ, স্প্রেযুক্ত প্রসাধনী, জামা ইত্যাদি। স্তন : ইলাস্টিক অথবা ব্রেশিয়ার কোমর : ইলাস্টিক। কব্জি : চুড়ি ও চুড়ির নিকেল অংশ। হাত : হাতের গ্লাভস, সাবান, ডিটারজেন্ট। পা : জুতা চিকিৎসা : যে পদার্থের সংস্পর্শে এসে ত্বকের এই প্রদাহ- বিকৃতি বা উদ্ভব-এর সৃষ্টি হয়, সেই পদার্থ থেকে ত্বকের সংস্পর্শ দূর করতে হবে। এর বাইরে প্রয়োজন মতো ঝঃবৎড়রফ ও অহঃরযরংঃধসরহ ব্যবহার করতে হবে। উপসংহার : উপরের উল্লিখিত পদার্থ ব্যবহারের সময়ে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং কোন রকম বিকৃতি, প্রদাহ বা উপসর্গ দেখা গেলে তার ব্যবহার বন্ধ করে দিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। ডাঃ দিদারুল আহসান এমবিবিএস ডিডিভি (অস্ট্রিয়া) ফেলো, আরএসএইচ (লন্ডন) চর্ম এলার্জি ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ চেম্বার : গ্রীন সুপার মার্কেট ফোন : ৩১৩০১১৩
×