ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগে প্রকাশ্য অন্তর্দ্বন্দ্ব-কোন্দল, বিএনপিকে ছাড় দেবে না জামায়াত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৪ আগস্ট ২০১৮

 আওয়ামী লীগে প্রকাশ্য অন্তর্দ্বন্দ্ব-কোন্দল, বিএনপিকে ছাড় দেবে না জামায়াত

কৃষ্ণ ভৌমিক ও তৌহিদ আক্তার পান্না, পাবনা ॥ জাতীয় নির্বাচন সন্নিকটে। আর মাত্র ৪ মাস পর ডিসেম্বরেই হবে এ নির্বাচন। সারাদেশের মতো পাবনা জেলাতেও লেগেছে নির্বাচনী হাওয়া। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড়। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রীতিমতো মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় রূপ নিয়েছে, প্রার্থী ছড়াছড়িতে পাল্লা দিয়েই যেন বাড়ছে অভ্যন্তরীণ বিভেদ-কোন্দল। জেলার পাঁচ সংসদীয় আসনই দখলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। একাদশ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ আসনগুলো নিজেদের ধরে রাখতে মরিয়া। অন্যদিকে হৃত আসন উদ্ধার করতে বিএনপিও বসে নেই। নিবন্ধন হারালেও জামায়াত চায় একটি আসন হলেও তাদের দখলে নিতে। এ নিয়ে বড় সব দলেই চলছে নানা হিসাব-নিকাশ, চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে জেলার পাঁচ আসনের মধ্যে বিএনপিকে এবার দুটি আসন কোনভাবেই ছেড়ে দিতে নারাজ জামায়াত। আসন দুটি হচ্ছে পাবনা-১ ও পাবনা-৫। কারণ এ আসন দুটিতে তাদের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে বলে দলটির নেতাদের দাবি। টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় জেলার কয়েকটি আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে উঠেছে নানা অভিযোগ। ক্ষমতার দম্ভ, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, পরিবারতন্ত্র, দুর্ব্যবহারসহ নানা কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীরা অনেকের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। আবার অনেকে জনবিচ্ছিন্নও হয়ে পড়েছেন নির্বাচনী এলাকায়। তাদের সঙ্গে সুবিধাভোগী লোক ছাড়া আর কারও দেখা মিলছে না। তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতারা এবার জোর দাবি জানিয়েছেন, বর্তমান এমপিদের জনপ্রিয়তা ও অতীত কর্মকান্ড মূল্যায়ন করেই যেন মনোনয়ন দেয়া হয়। এবার যদি মনোনয়ন দিতে ভুল হয়, তাহলে নিশ্চিত আসনগুলো ধরে রাখা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে, জেলার পাঁচ আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দাপিয়ে বেড়ালেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন পর্যন্ত তেমনভাবে মাঠে নামেননি। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দু’একজন কর্মীদের সংগঠিত করতে ঘরোয়া বৈঠক করছেন। জাতীয় পার্টি, জামায়াত, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় এলাকায় পোস্টার-ব্যানার লাগিয়েছেন মাত্র। তবে প্রকাশ্য কোন তৎপরতা চোখে পড়ে না। পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়ার আংশিক) ॥ সাঁথিয়া উপজেলার দশ ইউনিয়ন, এক পৌরসভা ও বেড়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন, এক পৌরসভা নিয়ে এ আসন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন। তবে গত দুই মেয়াদে তার পরিবার পরিজনের নানা কর্মকা-ে দলীয় নেতাকর্মীদের অধিকাংশ তার ওপর অনেকটাই অসন্তুষ্ট। বেসরকারী শিক্ষক নিয়োগে তার স্ত্রীর বাণিজ্য, সোলারপ্যানেল কেলেঙ্কারিসহ নানা দুর্নীতির কারণে নেতাকর্মীরা তার ওপর নাখোশও। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হয়েছেন পুলিশে লোক নিয়োগ নিয়ে। স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীই অভিযোগ তুলেছেন, সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর ভাই মেয়র আব্দুল বাতেন ঢাকার প্রীতম হোটেলে পুলিশে লোক নিয়োগের জন্য অফিস খুলেছিলেন। সারাদেশ থেকে লোক সংগ্রহ করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চাকরি দিয়েছেন। আর এসব লোকের অধিকাংশই জামায়াত-বিএনপি ঘরানার। টেন্ডারবাজিসহ নানা উপায়ে তার পরিবার স্বল্পতম সময়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন বলেও দলীয় কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য আরেক প্রার্থী হলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ। তিনি এ আসন থেকে ৭০ সালে এমএনএ, ’৭৩ ও ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে সংস্কারবাদী আখ্যা দিয়ে তাকে দলীয় কোন পদে রাখা হয়নি। তবে তিনি এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। শিক্ষিত তরুণ সমাজের কাছে তিনি বেশ সমাদৃত। সম্প্রতি শেখ হাসিনার মঞ্চ নামে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রচারে নামলে মানুষের ঢল নামে। এ আসনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অধিকাংশই এখন অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে সমর্থন দিচ্ছেন। এছাড়াও সাঁথিয়ার দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিনও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। অন্যদিকে এ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন যুদ্ধাপরাধী মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুল্লাহ মমিন। তিনি ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এলাকাজুড়ে যুদ্ধাপরাধীপুত্রের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সাবেক মহাসচিব সিনিয়র সাংবাদিক এমএ আজিজ, তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাজী ইউনুস আলী, পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এসআই সালাউদ্দিন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সরদার শাহজাহান দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। পাবনা-২ (সুজানগর ও বেড়ার আংশিক) ॥ সুজানগর উপজেলার দশ ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও বেড়া উপজেলার চার ইউনিয়ন নিয়ে এ আসন। এ আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি এলাকায় সাংগঠনিক তৎপরতাও শুরু করেছেন। তবে তার সঙ্গেও তৃণমূল নেতাদের দূরত্ব রয়েছে। তিনি গ্রামগঞ্জে তেমন আসেন না। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বর্তমান সংসদ সদস্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্মান দিয়ে কথা বলেন না। দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের বাদ দিয়ে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের পুনর্বাসনের অভিযোগও করেছেন অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মী-সমর্থক। বর্তমান এমপির সঙ্গে বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ। তিনি সুবিধাভোগী কিছু নেতাকর্মী নিয়ে চলাফেরা করছেন। এ আসনে গ্রামগঞ্জের আওয়ামী লীগ কর্মী সমর্থকদের মধ্যে এখন প্রকাশ্যই আওয়াজ উঠছে নতুন দলীয় প্রার্থীর। এ আসনে দীর্ঘকালের জনপ্রিয় এমপি মরহুম আহমেদ তফিজ উদ্দিনের পুত্র সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আহমেদ ফিরোজ কবির অনেক আগে থেকেই গ্রামগঞ্জে উঠান বৈঠক করে চলেছেন। পিতার সততা কাজে লাগিয়ে তিনি ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়াও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ড. মির্জা আব্দুল জলিল, প্রকৃচি নেতা অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ শফিউল আলম বাদশা, সাবেক সচিব ড. মজিবর রহমান, শিল্পপতি কামরুজ্জামান উজ্জ্বল, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইমরান সিরাজ সম্রাট দলীয় সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন। বিএনপির মনোনয়ন তালিকায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সেলিম রেজা হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, শিল্পপতি আসলাম মন্ডল ও এ্যাডভোকেট আরশেদ আলম। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সূত্রগুলো বলছে, মহাজোটের হিসাব-নিকাশে প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টি এ আসন দাবি করতে পারে। আসনটি যদি জাতীয় পার্টিকে দেয়া হয় তাহলে এমপি প্রার্থী হবেন জাতীয় পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন সন্টু। পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুরা-ফরিদপুর) ॥ এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। কিন্তু নানা কারণে নেতাকর্মীদের কাছে তার ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন। ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে হাইব্রিড আওয়ামী লীগারদের দলীয় ও সামাজিক সংগঠনে বসানো, পরিবারতন্ত্র, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেকটাই কোণঠাসা তিনি। এছাড়া ছেলে গোলাম হাসনায়েনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র বানানো, অপর ছেলেকে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বানানোর চেষ্টা দলে বিভাজন তৈরি করেছে। এছাড়া ভাঙ্গুড়ায় নিজ ভায়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম খাঁ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলামকে মাথায় তুলে প্রতিটি উন্নয়নমূলক কর্মকা- তাদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন নিয়ে দলও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমপি মকবুল হোসেনর বড় ছেলের বিরুদ্ধে প্রাইমারি স্কুলে ১৪ পদে পিয়ন নিয়োগে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা আদায় নিয়ে পার্টি মিটিংয়ে ব্যাপক হৈচৈ পর্যন্ত হয়। এ নিয়ে তিন উপজেলার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেও তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে এ আসনেও মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি উঠেছে আওয়ামী লীগে। তবে সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে উত্থাপিত এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম পাকন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আঃ হামিদ মাস্টার ও পাবনা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম। সম্ভাব্য এসব প্রার্থী একজোট হয়ে বর্তমান এমপির মনোনয়ন না দেয়ার জন্য সমাবেশ পর্যন্ত করেছেন। বিএনপির মনোনয়ন লাভের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি আনোয়ারুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম হিরু ও বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন ফখরুল আজম রনি। পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) ॥ ঈশ্বরদী উপজেলা, একটি পৌরসভা ও আটঘরিয়া উপজেলা, একটি পৌরসভা নিয়ে এ আসনটি। এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তবে এ আসনে একাধিক পরীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা, শিল্পপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। আসনটিতে রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ছড়াছড়ি। স্থানীয় নেতাদের মতে, এবার খুব সতর্কতার সঙ্গে ও সঠিক হিসাব নিকাশ করে প্রার্থী নির্বাচন করতে না পারলে আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয়ধারা অব্যাহত রাখতে বেশ বেগ পেতে হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরীফ এই আসন থেকে পরপর চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ঈশ্বরদীর ইতিহাসে প্রথম কেবিনেট মন্ত্রী হয়ে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু কতিপয় নেতার পদ ও ক্ষমতার লোভ এবং অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এ আসনে ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত নানা নাটকীয় ঘটনা। মন্ত্রীর জামাই এবং শ্বশুর-মন্ত্রীর মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী গ্রহণ এলাকায় আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। একইভাবে আওয়ামী লীগ নেতা মিনহাজ ফকিরকে মারপিট করে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়া, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সাংবাদিক এ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদুর ওপর হামলা, রফিকুল ইসলাম লিটনের ভাইয়ের বাড়িতে হামলা, সিন্ডিকেট করে খাদ্যগুদামের ব্যবসা জিম্মি করে রাখা, বালুমহলে লুটপাট, ঠিকাদারি নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা, ছাত্রলীগ নেতা লাভলু, শাজাহান ও সদরুল আলম পিন্টু হত্যা, টুনটুনির হাত কেটে হোন্ডা উল্লাস ইত্যাদি নানা ঘটনা দলীয় ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। মনোনয়ন দৌড়ে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ছাড়াও রয়েছেন সাবেক এমপি পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস, ডিজিএফআইর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) নজরুল ইসলাম, ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জরুরি অবস্থায় শেখ হাসিনার মামলার কৌঁসুলী বিশিষ্ট আইনজীবী রবিউল আলম বুদু, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ও মেগা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি প্রকৌশলী আবদুল আলিম, প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় ব্যারিস্টারি করা সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ব্যারিস্টার সৈয়দ আলী জিরু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম লিটন, পৌর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান স্বপনের নাম শোনা যাচ্ছে। এ আসনে বিএনপিতেও রয়েছে একাধিক প্রার্থী। তাদের মধ্যে রয়েছেন পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজুল ইসলাম সরদার, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, শিল্পপতি আকরাম আলী খান সঞ্জু, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, উপজেলা বিএনপির সভাপতি শামসুদ্দিন আহমেদ মালিথা, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র মোকলেছুর রহমান বাবলু ও এ্যাডভোকেট জামিল আক্তার এলাহী। জামায়াতের পাবনা জেলা সভাপতি অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডলও গোপনে সাংগঠনিক তৎপরতা ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সমাজসেবক রফিকুল আলমের নামও শোনা যাচ্ছে। পাবনা-৫ (সদর) ॥ পাবনা পৌরসভা ও দশ ইউনিয়ন নিয়ে এ আসনটি গঠিত। এ আসনে বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় তিনি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ভোটদুর্গ বলে পরিচিত হেমায়েতপুর, দোগাছী, ভাড়ারা, চরতারাপুর ও সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ভোটারদের মধ্যে নিজের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স। এসব ইউনিয়নে তার মনোনীত প্রার্থীরাই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। যে চরের বাসিন্দাদের মাইলের পর মাইল কাদা-মাটি মাড়িয়ে শহরে আসা যাওয়া করতে হতো, সেখানে গোলাম ফারুক প্রিন্স পাকা সড়ক করে দিয়েছেন। সদর উপজেলার রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ভবন উন্নয়নে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে গেছে। শহরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঐক্য বজায় থাকলে আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরেই থাকার সম্ভাবনা বেশি বলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আরও রয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা ইদ্রিস আলী বিশ্বাস। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন- বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। বাস-ট্রাক শ্রমিকদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে এ আসনে বিএনপির বড় ফ্যাক্টর হচ্ছেন পাবনা পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করায় তিনি বিএনপি রক্ষা কমিটির ব্যানারে অবস্থান নিয়ে আছেন। এ নিয়ে সৃষ্ট দুই গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা না হলে আগামী নির্বাচনেও বিএনপির বিপর্যয় নামার আশঙ্কা রয়েছে। এ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন পাবনা মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মওলানা ইকবাল হোসাইন। জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, পাবনা-৫ ও পাবনা-১ আসন তারা কিছুতেই বিএনপিকে ছাড়বে না। তাই এ আসনে তারা ভোটে লড়ার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
×