ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারবিরোধী নতুন ষড়যন্ত্রের মধ্যমণি এখন সিনহা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৪ আগস্ট ২০১৮

 সরকারবিরোধী নতুন ষড়যন্ত্রের মধ্যমণি এখন সিনহা

শংকর কুমার দে ॥ সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে এবার কানেকশন হয়েছে সুদূর আমেরিকায়। আমেরিকায় অবস্থান করে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার সঙ্গে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের ছক কষছে যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার যাতে ফের ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য বিরাট অংকের ডলার ডিল হয়েছে। বিদেশের মাটিতে বসে এসকে সিনহা সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বক্তব্য রাখবেন, সরকারবিরোধী প্রচারের অংশ হিসেবে তার লেখা একটি বই বাজারে ছাড়া হবে, বিদেশের ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় তার বই ও বক্তব্য ভাল করে কভারেজ দেয়ানোর জন্য এই ডলারের ফান্ড ব্যবহৃত হবে। বিদেশের মাটিতে ষড়যন্ত্রের নিকটতম বিচারপতি, খ্যাতনামা আইনজীবী, বিচারপতি, সুশীল সমাজের কথিত বুদ্ধিজীবীসহ সরকারবিরোধী জোট। যাদের মদদ দিচ্ছে অশুভ শক্তি। তার ঘনিষ্টজন বলে পরিচিত বিচারপতিদের মধ্যেও কারও কারও সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন এসকে সিনহা। সাবেক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীর কানেকশন নিয়ে ষড়যন্ত্রের যে ছক কষা হয়েছে সেই বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, আমেরিকার নিউইয়র্কে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা জামায়েতের কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাসেমের ভাই মীর মামুনের। এসকে সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তার সঙ্গে লন্ডনে গোপন বৈঠক হয়েছিল যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) পরিবারের। সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তার পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে গোপন বৈঠকটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সাকা চৌধুরীকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সাকা চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতির গোপন বৈঠক নিয়ে তখন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হলে ঘটনাটি সর্বোচ্চ আদালতের শুনানিতে পর্যন্ত গড়ায়। এখন আবার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার যাতে ফের ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীসহ সরকারবিরোধী খ্যাতনামা আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন এসকে সিনহা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রবিবার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিষয়ে যে বক্তব্য তুলে ধরেছেন তা ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক। সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে গোপনে টাকা দিয়েছে যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেমের ভাই মামুন। সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কিছু তথ্য আমার কাছে এসেছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা সম্প্রতি নিউইয়র্ক এসেছিলেন। সেখানে তিনি গোপনে যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেমের ভাই মামুনের সঙ্গে দেখা করেন। আমরা জানতে পেরেছি মামুনের কাছ থেকে তিনি বড় অংকের টাকা পেয়েছেন। টাকাটা তাকে দেয়া হয়েছে আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য। তাদের এই আলাপ দেখেছে ও সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের দেশে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র খুবই সাধারণ একটি বিষয়। এই প্রবন্ধটিতে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের ‘কূ-শীল’ সমাজ কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতেন যদি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হতো।’ তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্রে অপরিচিত বা অজনপ্রিয় মানুষের ভূমিকা কম। একটি ষড়যন্ত্রকে সফল করতে হলে দরকার হয় উচ্চপর্যায়ের ও ক্ষমতাবান কাউকে। যেমন সিনহা বা শহিদুল আলম। সজীব ওয়াজেদ জয় গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) কার্ড ব্যবহার করার নীল নক্সা প্রণয়ন করেছে সরকারবিরোধী একটি অশুভ শক্তি। বিদেশের মাটিতে অবস্থান করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালাচ্ছে সাবেক ওই প্রধান বিচারপতি। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বই লেখাচ্ছেন ওই অপশক্তি চক্র। সাবেক প্রধান বিচারপতির লেখা বইটি আগামী নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ছাড়া হবে। আওয়ামী লীগের যাতে নির্বাচনে বিজয়ী হতে না পারে সেই জন্য জনপ্রিয়তায় ধস নামানোর নীল নক্সার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী এসকে সিনহা কার্ড ব্যবহার করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি বিদেশে অবস্থান করলেও দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এক সঙ্গে বিচার বিভাগে কাজ করেছেন ঘনিষ্ঠ এমন বিচারপতি, আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে তার। প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করে বিদেশে চলে যাওয়ার পর দেশের সরকারবিরোধী রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকার ও রাজনীতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে তার দেশে কার সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ করছেন এবং বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে কি ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছেন তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, কিছু দিন আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দেশে ফিরে আসার জন্য টেলিফোনে অনুরোধ জানিয়েছেন একজন খ্যাতনামা আইনজীবী। খ্যাতনামা আইনজীবীর জুনিয়র তাকে টেলিফোন ধরিয়ে দেন। বিদেশে অবস্থানকারী সাবেক প্রধান বিচারপতিকে অভয় দিয়ে দেশে ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানান ওই আইনজীবী। টেলিফোনের ওই প্রান্তে অবস্থানকারী সাবেক প্রধান বিচারপতিকে টেলিফোনের এই প্রান্ত থেকে বলেন, ‘আপনি দেশে আসুন, আপনার ভয় কি, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। সাবেক প্রধান বিচারপতি দেশে ফিরে আসার বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা জানা যায়নি। তবে বিচারপতি সিনহার দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই। তার দেশে ফিরে আসার খবরে নড়েচড়ে ওঠে গোয়েন্দা সংস্থা ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতি দমন কমিশনে সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন অর্থসহ ১১টি অভিযোগ রয়েছে তা তদন্ত শুরু করে। হাইকোর্টের সোনালী ব্যাংক শাখায় সাবেক প্রধান বিচারপতির নামে জমা হওয়া ৪ কোটি টাকার বিষয়টি তদন্তের জন্য মাঠে নামে তদন্ত সংস্থা দুদক। যারা প্রধান বিচারপতির নামে ৪ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। বিতর্কিত এই বিচারপতি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের দায় এড়াতেই বিদেশে অবস্থানের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা দেশে না থাকার জন্য তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত থেমে থাকলেও বিদেশে তার তৎপরতা থেমে নেই। বিদেশের মাটিতে অবস্থানকারী সিনহাকে দিয়ে বই লিখানো হচ্ছে। এই বই লেখার বিষয়ে তাকে সহযোগিতা করছেন আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বাঙালী অধ্যাপক, একজন খ্যাতনামা আইনজীবী, একটি বড় ধরনের পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিক। একটি বড় ধরনের প্রত্রিকার প্রকাশনী থেকে এসকে সিনহার বই ছাপানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও তা প্রকাশনীর নাম ব্যবহার না করে ছদ্মনামের প্রকাশনীর নাম ব্যবহার করা হতে পারে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এসকে সিনহাকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য যারা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন তাদের মধ্যে সরকারবিরোধী সাংবাদিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী কয়েকজন ব্যক্তি। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা মাঝে মধ্যেই আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওই সব কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারবিরোধী মহলেরও যোগাযোগ রয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরাতে জুডিসিয়াল ক্যু করার কাজে জড়িত ছিলেন। আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্য দেয়ার পর নড়ে চড়ে ওঠেছে গোয়েন্দা সংস্থা। খোঁজখবর নিতে শুরু করে বিদেশে অবস্থানকারী প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার। জাতীয় শোক দিবস (১৫ আগস্ট) উপলক্ষে গত ৮ আগস্ট সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় এই মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী। আনিসুল হক বলেন, প্রথম ষড়যন্ত্র হলো একটি জুডিসিয়াল ক্যু (বিচারিক অভ্যুত্থান) করে শেখ হাসিনাকে কী করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরানো যায়, সেই চেষ্টা করা। আমাদের সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র কারা করেছে তাদের নাম আমরা জানি। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা তাদের তো চিনবেনই। ড. কামাল হোসেনকে আপনারা চেনেন না? তারপর এই ষড়যন্ত্র যখন বিফলে গেছে, আমি জানি আমাকে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের সিটিং জাজেরা বলেছেন, তারা (জাজেরা) একটি অনুষ্ঠানের জন্য ড. কামাল হোসেনকে ডাকতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি (ড. কামাল হোসেন) তাদের সিনহার (এসকে সিনহা) ব্যাপারে বকাঝকা করেছেন। তিনি বলেছেন, কেন সিনহার ব্যাপারে তারা (জাজরা) প্রতিবাদ করেননি, কেন সিনহাকে তারা সরিয়েছেন? গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, এসকে সিনহার প্রধান বিচারপতি থাকাকালেই কারাগারে আটক যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের লোকের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি সিনহার দেখা হয়েছে এ নিয়ে উপ-সম্পাদকীয় লেখেন দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়। আর এই ফোনালাপের ভিত্তিতেই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের কেউ একজন সাক্ষাত করেছে বলে দাবি করে জনকণ্ঠ। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বৃহত্তর বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ফোনালাপের সিডি উপস্থাপন করা হয়। এই সিডিটি বেসরকারী একাত্তর টিভিতে প্রচারিত হয় ও দৈনিক জনকণ্ঠেও এর একাংশের শ্রুতি লিখন ছাপা হয়। ফোনালাপের ওই সারাংশটি তুলে ধরা হলোÑ বিচারপতি মানিক : এই যে সেদিন বললেন না, আপনি সেদিন বললেন যে, সাকার ফ্যামিলি আপনার কাছে এপ্রোচ করছে আমারে না করার জন্য কিন্তু পরবর্তী টাইমে দেন। প্রধান বিচারপতি : সাকারটাতো হিয়ারিং হয়ে গেছে। বিচারপতি মানিক : না, সেটা বলতেছি না। আপনি বলছিলেন, সাকার ফ্যামিলি আপনাকে বলছে আমাকে না রাখার জন্য এ জন্য রাখতে পারেন নাই। প্রধান বিচারপতি : হ্যাঁ..হ্যাঁ। বিচারপতি মানিক : কিন্তু, এখন পরবর্তীটা প্রধান বিচারপতি : পরবর্তীতে হিয়ারিংয়ে যেটাই যাই, আমি আপনাকেই রাখব। বিচারপতি মানিক : আমার কিন্তু আছে আর এক মাস। প্রধান বিচারপতি : হ্যাঁ..? বিচারপতি মানিক : এক মাস আছে। প্রধান বিচারপতি : এক মাস আছে? কবে শেষ হবে? বিচারপতি মানিক : আমারতো... মানে এই ছুটিতেই শেষ। নইলে আর পাব না কিন্তু। আমাকে দেন। অন্তত সাকার ফ্যামিলি থেকে আপনাকেও বলছে আপনি দিতে পারেন নাই, সাকার ফ্যামিলি মেম্বাররা বলছে। কিন্তু এইটাতো... প্রধান বিচারপতি : সাকার ফ্যামিলি মেম্বার মানে, সাকার পক্ষ থেকে। বিচারপতি মানিক : যাই হোক, সাকার পক্ষ থেকে বলছে আমারে না দেয়ার জন্য। প্রধান বিচারপতি : হ্যাঁ না দিতে বলছিলেন। এরপর গত ১৬ জুলাই দসাকার পরিবারের তৎপরত ॥ পালাবার পথ কমে গেছে’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে দৈনিক জনকণ্ঠ। যার লেখক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়। গত ২৯ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপীলের রায় ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগ। এ রায়ে বিএনপিরর অন্যতম এ শীর্ষ নেতার ফাঁসির রায় বহাল রাখা হয়। ফাঁসির রায় ঘোষণার দিনই জনকণ্ঠের মন্তব্যের জন্য পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়কে ৩ আগস্ট আপীল বিভাগে তলব করা হয়। ওই বছরের ৩ আগস্ট আদালতে উপস্থিত হয়ে জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ এবং নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় আদালতে হাজির হয়ে জবাব দাখিলের জন্য ৩ মাস সময় চাইলে এক সপ্তাহ সময় দেন আপীল বিভাগ। এ সময় প্রধান বিচারপতিকে রুলের শুনানি থেকে বাদ দেয়ার আবেদন করেন জনকণ্ঠের আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন। কিন্তু বিচারপতি সে আবেদন খারিজ করে দেন। সিনহা আদালতে স্বীকার করেন তার সঙ্গে সাকা পরিবারের সদস্য দেখা করে। আর এভাবেই আদালতের শুনানির মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের সঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার কানেকশন ফাঁস হয়, যা এখন আবার নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, গত ১১ নবেম্বর ২০১৭ সালে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে পদত্যাগ করেন। সিঙ্গাপুর থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে তিনি কানাডায় চলে যান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করলেও সম্প্রতি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সাবেক এই প্রধান বিচারপতি সিঙ্গাপুরে আসেন। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার লেখা বইটি ছাড়াও যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে যাতে ফের শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসতে না পারে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী বিষোদগার এমনভাবে তুলে ধরা হবে যাতে নির্বাচনে তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশের বাজারে তার লেখা বইটি বাজারে ছাড়ার বিষয়ে দেশের ভেতরে বেনামীতে প্রকাশনীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশে ব্যাপক পরিচিত একটি বড় প্রিন্ট মিডিয়া জগতের একটি মহল সাবেক প্রধান বিচারপতির বই লেখার বিষয়ে সহযোগিতা করছে। বিদেশে অবস্থানকারী সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে বিদেশের মাটিতে সরকারবিরোধী তৎপরতার অংশ হিসেবেই নির্বাচনের আগে তার লেখা বইটি বাজারে ছাড়ার নীল নক্সা অনুযায়ী তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে জানতে পেরেছে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×