ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপাকে কৃষক

আবারও খরার কবলে উত্তরের আমন ক্ষেত

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ১৪ আগস্ট ২০১৮

আবারও খরার কবলে উত্তরের আমন ক্ষেত

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ আবারও তীব্র খরার মুখে পড়েছে উত্তরাঞ্চল। ভর বর্ষায় কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনেকে সেচ দিয়ে এরই মধ্যে আমন রোপণ শেষ করেছেন। মাঠে পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক। তবে খরার কবলে পড়ায় আমনের শুরুতেই বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষক। বৃষ্টি নির্ভর আমন আবাদের সময়ে দেখা দিয়েছে তীব্র খরা। এতে সেচ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বৃষ্টির অভাবে মাঠের জমি শুকিয়ে গেছে। নিজেদের ধান বাঁচাতে গভীর নলকূপের পানির ওপরে নির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে আমন আবাদে খরচের পরিমাণ এবার বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। এর মধ্যে ধানের চারা সবুজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হানা দিয়েছে পোকা। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হবে আরও ৩ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরের ওপরে। তবে এবার এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ার কারণে আমন চাষ নিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন কৃষকরা। বৃষ্টির অভাবে অনেকেই ধান রোপণ করতে পারছিল না। মাঝে সামান্য বৃষ্টি হলে কোনমতে কৃষকরা মাঠে ধান রোপণ করতে পারে। এরপরে দেখা দিয়েছে খরা। এ খরায় মাঠের জমি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীতে সর্বশেষ বৃষ্টিপাত হয়েছে গত ৮ আগস্ট। ওই বৃষ্টিও কোন রকমে মাটি ভেজায়। ওইদিন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার। এরপরে রাজশাহীতে আর কোন বৃষ্টিপাত হয়নি। এরপর থেকে খরা নেমে আসে। সকাল থেকে দিনভর সূর্যতাপে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে আমনের ক্ষেত। নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলার শুড়িপুকুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাইয়ুম। তিনি ১৫ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। ধান রোপণের পরে বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েন তিনি। কৃষক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমন ধান চাষ বৃষ্টির পানিতে হওয়ার কারণে খরচ কম হয়। কিন্তু ভরা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সমস্যায় পড়েছেন তিনি। এখন ধান বাঁচাতে গভীর নলকূপের পানি নিতে কৃষকদের লাইন দিতে হচ্ছে। শুধু তাই না, এতে কৃষকদের খরচের পরিমাণও বেড়েছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সোগুনা গ্রামের কৃষক রুবেল জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ২৫ বিঘা জমিতে স্বর্ণা জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন। ধান রোপণের পর থেকেই বৃষ্টিপাত কমে গেছে। এতে করে সেচ সঙ্কটে পড়েছেন তিনি। এখন জমিগুলোতে সেচ দিতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে তাকে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম জানান, রাজশাহী অঞ্চলে মৌসুমি বায়ু প্রবাহ কমে গেছে। সে কারণে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেছে। মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ শুরু হলেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে আসবে। অল্প দিনের মধ্যেই রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে তিনি আশা করছেন। এ দিকে আমন রোপণের ১৫ থেকে ৩০ দিন না পেরোতেই পোকার আক্রমণ দেখা বরেন্দ্র অঞ্চল জুড়ে। আমনের ক্ষেতে প্রথম সার প্রয়োগ না করতেই ক্ষেতের রোপণ করা ধান কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে মাজড়া পোকা। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। অগ্রিম পোকার লাগার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব ও স্বর্ণাজাতের ধানকে দায়ী করেছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা। সে সঙ্গে আমনে পোকা দমনে কৃষকদের সচেতন করতে নানামুখী পরামর্শ দিয়ে মাঠে কৃষকের সঙ্গে কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছে বলে দাবি করেছেন কৃষি বিভাগ।
×