ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পিছিয়ে গেছে ব্যাংকিং কমিশন গঠন

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১৪ আগস্ট ২০১৮

পিছিয়ে গেছে ব্যাংকিং  কমিশন গঠন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকের দুর্নীতি এবং অনিয়মের আরও তথ্য বেরিয়ে আসার শঙ্কাতেই ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কাজটি পিছিয়ে গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান সরকার একাধিক খাতের সাফল্যের ফসল ঘরে তুলেছে। বিশেষ করে দারিদ্র্য দূর এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে দেশের মান উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে অকল্পনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। কিন্তু কয়েকটি খাতের দুর্নীতি আর অনিয়ম সরকারের সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি আর অনিয়ম উল্লেখযোগ্য। কর্মকর্তারা আরও জানান, ব্যাংকিং খাতের অনিয়মের জন্য একাধিকবার বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। এ জন্যই অর্থমন্ত্রী ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা আনতে কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। কমিশন গঠনের কাজ অনেকদূর এগিয়েও যায়। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় দেখা গেছে, সামনে নির্বাচন। এ সময় এই কমিশন কাজ শুরু করলে অনেক দুর্নীতি আর অনিয়মের তথ্য উঠে আসার আশঙ্কা রয়েছে, যা সামনের নির্বাচনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ঘোষণা দেয়ার এক মাসের মধ্যে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনা হয়। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ৯ আগস্ট বলেছেন, ‘ব্যাংকিং কমিশন এখন আর হচ্ছে না।’ অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কাজটি এখন বন্ধ করে রাখার প্রধান কারণটা হচ্ছে, আমাদের নিজেদের ইন্টারনাল ডিসকাশনে মনে হলো, ইট ইজ বেটার টু লিভ ইট টু দ্য নেক্সট গবর্নমেন্ট (পরবর্তী সরকারের ওপর বিষয়টি ছেড়ে দেয়াই ভাল)। অর্থাৎ তারাই ব্যাংকিং কমিশনের কাজটা করবে। সরকার হয়ত তিন কারণে ব্যাংকিং কমিশন গঠন থেকে সরে এসেছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কমিশন গঠন করলে ব্যাংকের নানা রকম খুঁটিনাটি তথ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি আরও বেরিয়ে আসবে। এটা নিয়ে হয়ত সরকার আরেকটা ঝামেলায় পড়বে। এমনিতেই সরকার বিভিন্ন ধরনের ঝামেলায় আছে। আমি মনে করি, বিষয়টি রাজনৈতিক বিবেচনায় (কনসিডারেশন)। এখন তো সরকারের কাছে রাজনৈতিক বিবেচনাই সবচেয়ে বড়। কারণ সামনে নির্বাচন আসছে। তাই, এটাকে (ব্যাংকিং কমিশন) আবার হয়ত চাপা দিয়ে রাখছে। তিনি বলেন, আমরা অরাজনৈতিক ব্যক্তি দিয়ে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে চেয়েছিলাম। সরকার হয়ত এমন লোক পাচ্ছে না, যারা সরকারের মনমতো কাজ করবে। আবার কমিটিতে নিয়োগ করা লোকগুলো তাদের (সরকার) মনমতো সিদ্ধান্ত দিতে নাও পারে। সেই সিদ্ধান্তগুলো সরকারের পছন্দ নাও হতে পারে, এমন শঙ্কাও আছে। ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কমিশন করার পর যদি সরকার কমিশনের দেয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতে না চায় কিংবা না পারে, বাস্তবায়নের সদিচ্ছা প্রকাশ না করে; সেটাও আবার সরকারের ভাবমূর্তিতে একটা প্রভাব ফেলবে। তখন আবার জনগণের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এটা খুব ভাল দেখাবে না। কেবল সরকারের ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে’ই ব্যাংকিং কমিশন গঠন হতে পারে বলে মনে করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। আর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ব্যাংকিং কমিশনের কোন দরকার নেই। ব্যাংকিং খাতের কী সমস্যা, সেটা আমরা সবাই জানি। সমাধান কী, সেটাও জানা আছে। কিন্তু বাস্তবায়ন করার জন্য যে রাজনৈতিক দৃঢ় সঙ্কল্প এবং প্রশাসনিক সদিচ্ছার দরকার, তার অভাব রয়েছে। ফলে কমিশন করলেও কোন লাভ হবে না। তারা যে সুপারিশ দেবে, এগুলো আমরা আগেই বলে দিতে পারি। কিন্তু সেগুলো তো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রসঙ্গত, অধ্যাপক রেহমান সোবহানসহ প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদদের নিয়ে ১৯৮৪ সালে ব্যাংকিং কমিশন গঠন হয়েছিল।
×