ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে স্বস্তির মুক্তি মোহাম্মদ আশরাফুলের

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৩ আগস্ট ২০১৮

অবশেষে স্বস্তির মুক্তি মোহাম্মদ আশরাফুলের

মিথুন আশরাফ ॥ অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুলের। বাংলাদেশ দলের সাবেক এ অধিনায়ক মুক্ত হতে চলেছেন। সবধরনের ক্রিকেটের নিষেধাজ্ঞা থেকে আজকের পরই মুক্ত হয়ে যাচ্ছেন তিনি। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট থেকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার অনুমতি পেয়েছেন। সেই নিষেধাজ্ঞা কেটেছে। এবার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে নিষেধাজ্ঞা আছে তা থেকেও আজকের পর থেকে মুক্ত হচ্ছেন আশরাফুল। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে তার। ম্যাচ গড়াপেটার দায়ে পাঁচ বছর আগে যে শাস্তি মিলেছিল তা পুরোপুরি শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল টি২০) ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। তার সেই নিষেধাজ্ঞা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও বিপিএল খেলার ক্ষেত্রে আর কোন বাধা থাকবে না টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানের। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট থেকে তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারছেন। শুরুতে ভাল করতে না পারলেও ২০১৭-১৮ মৌসুমে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স করেছেন। আজকের পর থেকে তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও খেলতে পারবেন। আজকের দিনটির জন্য সেই পাঁচ বছর ধরেই অপেক্ষা করছেন আশরাফুল। এই নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এই দিনটির জন্য আমি বহুদিন ধরে অপেক্ষা করছি। আমি নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়ার পর পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। অবশ্য আমি গেল দুই মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছি। তবে ১৩ আগস্টের পর থেকে জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ খেলার ক্ষেত্রে আর কোন বাধা থাকবে না আমার। বাংলাদেশের হয়ে আবার খেলতে পারাটা হবে আমার জীবনের সেরা অর্জন।’ ঘরোয়া ক্রিকেটের গেল দুই মৌসুম খেললেও আশরাফুল নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন কেবল গেল মৌসুমে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ওয়ালটন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে পাঁচটি লিস্ট এ সেঞ্চুরি করেছেন। লিস্ট এ টুর্নামেন্টের এক মৌসুমে পাঁচ সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান তিনি। তার আগে ২০১৫-১৬ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার আলভিরো পিটারসন পাঁচ সেঞ্চুরি করেছিলেন। গেল মৌসুমে ২৩টি লিস্ট এ ম্যাচে আশরাফুলের ব্যাটিং গড় ছিল ৪৭.৬৩। তবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনি খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ১৩ ম্যাচে তার গড় ছিল ২১.৮৫। সেঞ্চুরি ছিল মাত্র ১টি। আশরাফুল বলেন, ‘প্রথম মৌসুমটা খুব একটা ভাল যায়নি আমার। তবে ২০১৭-১৮ মৌসুমে আমি ভাল করেছি। সামনের মৌসুমগুলোতে আমি আরও ভাল করতে চাই। আমার পারফর্মেন্স দিয়ে আমি নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। ইতিমধ্যে আমি এক মাসের অনুশীলন প্রোগ্রাম শেষ করেছি। ১৫ আগস্টের পর আসন্ন জাতীয় ক্রিকেট লীগের প্রাক-মৌসুম অনুশীলন শুরু করব।’ বিপিএলের দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনাল আশরাফুলকে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে। পরে বিসিবির ডিসিপ্লিনারি প্যানেল আশরাফুলের নিষেধাজ্ঞা তিন বছর কমিয়ে ৫ বছর করে। এই সময় আশরাফুল বিসিবি ও আইসিসির দুর্নীতি দমন প্রোগ্রামে, শিক্ষা কর্মসূচী ও ট্রেনিংয়ে অংশ নেন। ২০১৫ সালের বিপিএলে আশরাফুল দুর্নীতি দমনের ওপর সচেতনতা তৈরির ভিডিওতে অংশ নেন এবং সেটা বিপিএলের সময় প্রচার করা হয়। আশরাফুল এখন আছেন লন্ডনে। ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসর অনুষ্ঠিত হয়। আর এমন টুর্নামেন্টে থাকে টাকার ছড়াছড়ি এবং সে কারণেই জুয়াড়ি, ম্যাচ ফিক্সার আর দুর্নীতিবাজদেরও সমাগম ঘটে। তেমনই একটি সংঘবদ্ধ চক্রের চক্রান্তে ফেঁসে ম্যাচ গড়াপেটায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন আশরাফুল। বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠার পর ২০১৩ সালের ৩১ মে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তদন্ত শুরু করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল দোষ স্বীকার করে নেন এবং বিস্তারিত জানান। ৪ জুন বিসিবি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করে সবধরনের ক্রিকেট থেকে। ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি বিপিএল শুরু করে এন্টি করাপশন ট্রাইব্যুনালের শুনানি। এর মাঝেই (২ জুন, ২০১৪) আশরাফুল নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের একটি আনঅফিসিয়াল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে আরেকবার বিতর্কের জন্ম দেন। সে বছর ১৮ জুন বিসিবি আশরাফুলকে ৮ বছরের জন্য সবধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করলে এর বিপক্ষে আপীল করেন ২২ জুলাই। ২৯ সেপ্টেম্বর বিসিবির শৃঙ্খলা কমিটি সার্বিক দিক বিবেচনা করে আশরাফুলের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে ৫ বছর করে। তবে এর বিপক্ষে আপীল করে বিসিবি ও আইসিসি ২১ অক্টোবর। তবে সেই আপীল আর আমলে আনা হয়নি। ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট থেকে আশরাফুলের ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়ে যায়। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্টের পর ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এরপর তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট লীগের (এনসিএল) চারদিনের কয়েকটি ম্যাচ খেলেন। তবে তেমন আলো ছড়াতে পারেননি। নির্বাচকদের নজরে আসার জন্য কঠোর পরিশ্রম এবং দারুণ পারফর্মেন্স করতে চান তিনি। ‘কলঙ্কমুক্ত’ হয়ে মাঠে ফিরতে চান। আবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়াতে চান। কিন্তু তা কী খুব দ্রুত সম্ভব? লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে আশরাফুল গত মৌসুমে ঝলক দেখান। কিন্তু ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন বেশ সমৃদ্ধ দল বাংলাদেশ। দলের ক্রিকেটারদের পজিশনও স্থায়ী। আর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তো আশরাফুলের নজরকাড়া কিছু নেই। জাতীয় দলে খেলতে হলে তাই কঠিন পথই পাড়ি দিতে হবে আশরাফুলকে। জাতীয় দলে আর খেলতে পারেন কিনা আশরাফুল সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে আজকের পর থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে যাচ্ছেন আশরাফুল, এটি তারজন্য বিশাল পাওয়া হয়ে ধরা দিচ্ছে।
×