ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অপরিচিত কারও খাবার খাবেন না- ওরা হতে পারে অজ্ঞান পার্টি!

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৩ আগস্ট ২০১৮

 অপরিচিত কারও খাবার খাবেন না- ওরা হতে পারে অজ্ঞান পার্টি!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদ সামনে রেখে তৎপর হয়ে উঠেছে অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা। গত তিন দিনে রাজধানীতে অন্তত দশ জন অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়েছেন। রবিবার ফার্মগেট থেকে পাঁচ ব্যক্তিকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এবার অজ্ঞানপার্টি সবচেয়ে বেশি তৎপর বিভিন্ন শপিংমল ও কোরবানির পশুর হাটে। তারা মানুষকে কৌশলে খাবারের সঙ্গে অজ্ঞান করার ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেয়। এরপর সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা ও মূল্যবান মালপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। রবিবার তেজগাঁও থানা পুলিশ ফার্মগেটের আনোয়ারা পার্ক থেকে অজ্ঞান অবস্থায় পাঁচজনকে উদ্ধার করে। তেজগাঁও পুলিশ জানায়, তারা সম্ভবত অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়েছেন। তাদের সবার বয়স ৩২ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তারা কাজের জন্য সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছেন বলে জানান তেজগাঁও থানার এসআই মাহবুবুর রহমান। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সামনে ঈদ-উল-আজহা। স্বাভাবিক কারণেই অনেকেই কোরবানির পশু কিনতে নগদ টাকা-পয়সা সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। এ সময়টিকেই বেছে নেয় অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা। এজন্য বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে এসব জায়গায় পুলিশ ও র‌্যাবের তরফ থেকে মাইকিং করে যাত্রীদের সাবধান করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, অপরিচিত কোন ব্যক্তির দেয়া খাবার বা পানীয় বা অন্য যে কোন কিছু না খাওয়ার জন্য। রেলস্টেশনে ভাসমান হকারদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বাস টার্মিনালের ভেতরে অপরিচিত হকারদের প্রবেশ ঠেকানো গেলেও আশপাশে ভাসমান হকার ঠেকানো যাচ্ছে না। আবার লঞ্চ টার্মিনালের ভেতরে অপরিচিত হকার ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে। এসব জায়গায় পুলিশ ও র‌্যাবের তরফ থেকে বাড়তি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সেখানে বসানো কন্ট্রোলরুমের মাধ্যমে সিসি ক্যামেরায় যাত্রী ও হকারসহ অন্যদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ হচ্ছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ও র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ইতোমধ্যেই অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টির তৎপরতা রোধে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। টার্মিনালগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের পাশাপাশি বাড়তি নজরদারির কথা বলেছেন তারা। বার বার টার্মিনালগুলো থেকে মাইকে বলা হচ্ছে হকার, ফেরিওয়ালা, অচেনা সহযাত্রী বা হঠাৎ করে বন্ধু বেশে অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টির সদস্যরা আবির্ভূত হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক অস্থায়ী বা ভ্রাম্যমাণ দোকানের উন্মুক্ত খাবার, ডাবের পানি, জুস, চা, কফি, পান, খেজুর, ঝালমুড়ি, শক্তিবর্ধক হালুয়া, ক্রিম জাতীয় বিস্কুট, চকোলেট, নানা ধরনের পানীয়। এসব পানীয়তে মানুষ অজ্ঞান করার বিভিন্ন দ্রব্য মেশানো হয়। অজ্ঞান করার ওষুধ মিশ্রিত খাবার বা পানীয় গ্রহণের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সেবনকারী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকা দামী মালামাল টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। এসব অপরাধীর তৎপরতা রোধে অস্থায়ী দোকানের খোলা খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ফুটপাথ, লঞ্চঘাট, রেল ও বাস টার্মিনালে থাকা অস্থায়ী দোকান না বসতে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে মাইকে। এসব জায়গায় সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ ভিডিও প্রচার চালানোর জন্য পুলিশ ও পরিবহন মালিকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হাজার হাজার লিফলেট বিতরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এসব লিফলেট বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে লাগানো হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, অজ্ঞানপার্টি মূলত একটি বিশাল সংঘবদ্ধ চক্র। এ চক্রে চোর, ডাকাত, খুনী ও অনেক অসাধু স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জড়িত। অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে পাকিস্তানের তৈরি আমদানি নিষিদ্ধ এটিভ্যান নামক ট্যাবলেট। ট্যাবলেটটি বিমানবন্দর ও পাকিস্তান-ভারত স্থলসীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। অজ্ঞানপার্টির মহিলা সদস্যও রয়েছে। তারা বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করার নাম করে চা বা কফি বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে অজ্ঞান করার ওষুধ মিশিয়ে দেয়। এরপর সবাই অচেতন হয়ে পড়লে বাড়ি থেকে মালামাল লুটে নেয়। এই চক্রের সঙ্গে কিছু অসাধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী জড়িত। অচেতন করার ওষুধের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিডনি। এছাড়া শরীরে নানা রোগের জন্ম হয় বলে বহু দিন ধরেই জানিয়ে আসছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ।
×