ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৩ আগস্ট ২০১৮

  লাব্বায়েক  আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ মোবারক হো মাহে জিলহজ। গতকাল আকাশের বাঁকা চাঁদ মুসলিম জাহানকে জিলহজ মাসের আগমনী বার্তার জানান দিল। আরবী জিলহজ শব্দের অর্থ হজওয়ালা বা হজ স্মৃতিধন্য পবিত্র মাস। মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবন ও সালতামামির ক্ষেত্রে হিজরী সনের এ সমাপনী মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, মুহরম মাসে মুসলমানদের চিন্তাচেতনায় আশুরার মাধ্যমে যে পূতপবিত্র ও দৃঢ় সঙ্কল্পময় জীবনের অনুপ্রবেশ হয়, একে একে প্রত্যেক মাসের দায়িত্ব পালনের পর এক চরম উচ্ছাস, পরীক্ষা, ত্যাগ ও প্রাপ্তির সমারোহ ঘটে জিলহজ মাসে পবিত্র হজ ও কোরবানির মাধ্যমে। সামর্থ্যবানরা এ মাসে পবিত্র হজের মহাসম্মেলনে নবী-রাসূলদের (আ.) পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত মক্কা-মদিনার বিভিন্ন বরকতময় স্থানে জিয়ারত ও উকূফ করে বিশেষ করে আল্লাহতায়ালার ঘরে তাওয়াফ ও চুমুদানে ধন্য হয়। পাশাপাশি বিশ্বের দেশে দেশে প্রায় মুসলিম পরিবারে শুরু হয় পবিত্র ঈদ-উল- আযহার নামে খোদাতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পিতা ইবরাহীম (আ.) ও প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (স.) এর অনুসরণে কোরবানি দানের মহোৎসবে। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে: হে নবী (স.)! আপনাকে হেলাল বা নয়াচাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করবে। আপনি বলবেন, এ চাঁদ হলো মুসলমানদের বার্ষিক ক্যালেন্ডার, বিশেষত হজের। হজ ও কোরবানি সম্পর্কে আল কুরআনে একাধিক সূরা ও আয়াত নাজিল হয়েছে। এসব সূরায় হজ ও কোরবানির দৃশ্য মনোমুগ্ধকর করণীয় বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে: যারা কুফর করে ও আল্লাহর পথে ও মসজিদে হারামে যেতে বাঁধা সৃষ্টি করে যাকে আমি প্রস্তুত করেছি স্থানীয় ও বহিরাগত সকল মানুষের জন্য সমভাবে (আমাকে ডাকার জন্য) এবং যে মসজিদে হারামে অন্যায়ভাবে কোন ধর্মদ্রোহী কাজ করার ইচ্ছা করে, আমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাব। যখন আমি ইব্রাহীমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়ে বলেছিলাম যে, আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তাওয়াফকারীদের জন্য, নামাজে দ-ায়মানদের জন্য এবং রুকু-সিজদাকারীদের জন্য। আর মানুষের মধ্যে হজের উদ্দেশে ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সাওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে। যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থানে পৌঁছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুস্থ-অভাবগ্রস্তকে আহার করাও। এরপর তারা যেন দৈহিক ময়লা দূর করে দেয়, তাদের মানত পূর্ণ করে এবং এই সুসংরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে। এটা শ্রবণযোগ্য। আর কেউ আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পালনকর্তার নিকট তা তার জন্য উত্তম। উল্লেখিত ব্যতিক্রমগুলো ছাড়া তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক; আল্লাহর একনিষ্ঠ হয়ে, তাঁর সঙ্গে শরিক না করে। এবং যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে শরিক করল; সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল, অতঃপর মৃতভোজী পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোন দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল। এটা শ্রবণযোগ্য। কেউ আল্লাহর নামযুক্ত বস্তুসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতিপ্রসূত। চতুষ্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে তোমাদের জন্য নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত উপকার রয়েছে। অতঃপর এগুলোকে পৌঁছাতে হবে মুক্ত গৃহ পর্যন্ত। আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সূরা হজ : ২৫-৩৪)। আসুন, এ মাসে খোদাতায়ালার নামে সামর্থ্যবান মুসলমানদের হজের লাব্বাইক আওয়াজ শুনি, মুসলিম জনপদে আল্লাহর নামে পশু কোরবানীর পূত আয়োজনে মেতে উঠি। আর কৃতসঙ্কল্প হই আল্লাহদ্রোহী র্শিক, বিদআতি চিন্তাচেতনা থেকে দূরে থাকার। যে ব্যাপারে তিনি বারবার বান্দাদের সতর্ক করছেন।
×