ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে তোফায়েল

বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ হতো প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১৩ আগস্ট ২০১৮

  বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ হতো প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে বর্তমানের বাংলাদেশ হতো প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। এখন বঙ্গবন্ধু নেই, তবে দেশ নিয়ে তার চিন্তা ও দেখানো পথেই উন্নয়ন হচ্ছে। দেশের বর্তমানে যে উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে তাও তারই কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ কতদূর যেতো?’ শীর্ষক সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এই কথা বলেন। রবিবার সিরডাপ মিলনায়তনের অনুষ্ঠিত সেমিনারে তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, আমার সৌভাগ্য যে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়েছি। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, ’৭১-এর পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও সেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশটাকে আজ অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। উন্নয়নের মডেলে পরিণত করেছে। উন্নয়নের উদাহরণ দিয়ে বলেন, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মর্কিন ডলার রফতানি আয় হয়েছে। চলতি বছর ৪৪ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছি। আমরা আশা করছি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তিতে ৬০ বিলিয়ন রফতানি আয় ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে মেট্রোরেল, পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রসহ পদ্মাসেতুর মতো বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বপ্নের সোনার বাংলা অনেক আগেই আমরা পেতাম। আর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে দেশটাকে লুটপাট করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের সেই ষড়যন্ত্র এখনও আছে। তবে আমরা সব ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে এগিয়ে যাব। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তার প্রবন্ধে বলেন, দেশ স্বাধীনের পর একটি পরাজিত গোষ্ঠী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাক পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করে। এই হত্যাকান্ডে দেশী ও বিদেশী শক্তি কাজ করেছিল। বঙ্গবন্ধু আজ বেঁচে নেই। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজকের বাংলাদেশের অর্থনীতি মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে অনেক গুণ ছাড়িয়ে যেত। আমার আলোচিত নিবন্ধ ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ কতদূর যেতো?’ এমন ভাবনাটি অনেকটা সম্ভাবনার মতো। কতগুলো অর্থনৈতিক চালক ও অনুমিতির সমন্বয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তাত্ত্বিকভাবে আমি এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছি। আমার নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুসহ বাংলাদেশ এবং তথ্যগতভাবে অর্থনৈতিক চিত্র ও উপাত্তের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার তুলনা করেছি। যেখানে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুসহ বাংলাদেশ ও আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাত্ত্বিক ওই লেখচিত্রে বঙ্গবন্ধুসহ বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২০১১ সালেই হওয়ার কথা ছিল ৪২,১৫৮ কোটি ডলার। একই সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি ৮,৮৫৫ কোটি ডলার আর মালয়েশিয়ার বর্তমান জিডিপি ১৫,৪২৬ কোটি ডলার। চিত্রে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুসহ বাংলাদেশ মালয়েশিয়ারও বহুগুণ ওপরে অবস্থান করছে। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমরা কি হারালাম- অর্থনৈতিক তথ্যপ্রমাণেও তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সমাজের পরিবর্তন কেমন হতো বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে সে কথা বলতে গিয়ে একাধিক সম্ভাবনার কথা প্রবন্ধে উল্লেখ করেন। অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাতের মতে, মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হতো। ফলে স্থূল জন্মহার ও স্থূল মৃত্যুহার উভয়ই হ্রাস পেতো। ফলে জনসংখ্যা থাকত ১৫ কোটির মধ্যেই একই সঙ্গে জনসংখ্যার গুণগত বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটত। ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হতো যা দেশ সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখত। গ্রামের সকল মানুষ নাগরিক সুবিধা হিসেবে সব ধরনের সেবা পেতেন বলেও জানান তিনি। নিবন্ধে আরও বলা হয়, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজকের বাংলাদেশের অর্থনীতি মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে অনেক গুণ ছাড়িয়ে যেত। বঙ্গবন্ধুর প্রগতিবাদী উন্নয়ন দর্শন বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক শ্রেণী কাঠামোর আমূল পরিবর্তন-রূপান্তর ঘটে যেত। তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নই শুধু ধূলিসাত করা হয়নি ইতিহাসের চাকাও উল্টে দেয়া হয়েছে বলে জানান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, আমাদের মাথাপিচু আয় এখন কোথায় গিয়েছে। গড় আয়ু বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছেন আর তারই কন্যা দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি তথা উন্নয়ন দিচ্ছে। তবে তিনি বেঁচে থাকলে এই উন্নয়ন আমরা আরও আগেই পেতাম। বঙ্গবন্ধুর কন্যা একটি সমুদ্রসীমা উপহার দিয়েছে যা একটি বাংলাদেশের চেয়েও বড়। নারী উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই দেশকে তার কন্যা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান সাবেক গবর্নর। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার উন্নয়ন ধরে রাখতে তার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহসভাপতি এ জেড এম সালেহ্র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধের ওপরে আলোচনায় অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এছাড়াও অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় মতামত দেয়া হয়। এ সময় দেশের অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
×