ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিরো লাইনে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তা দেবে মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৩ আগস্ট ২০১৮

 জিরো লাইনে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তা দেবে মিয়ানমার

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ উখিয়ার পার্শ্ববর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে অবস্থানকরা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সব ধরনের সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে। একারণে জিরো লাইনে অবস্থানকরা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ প্রান্ত থেকে খাদ্য, পানীয়সহ যেকোন ধরনের মানবিক সহায়তা বন্ধের বিশেষ অনুরোধ করেছে মিয়ানমার সরকার। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তাদের সহায়তা দেয়ার প্রস্তাবের পাশাপাশি জিরো লাইনে ৩৪ ও ৩৫ সীমান্ত পিলারের মাঝামাঝিতে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের ওপর যৌথ সমীক্ষা চালানোর প্রস্তাবও দিয়েছে মিয়ানমার। সূত্র জানায়, গত বছরের ২৫আগস্টের পরবর্তী সময়ে নাইক্ষ্যংছড়ি, টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে। তবে সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গা নিজ নিজ বাড়িঘর ত্যাগ করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ না করলেও তারা সীমান্তের শূন্য রেখায় আশ্রয় গ্রহণ করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশের পরিস্থিতি শান্ত হলে তারা ফের ফিরে যাবে নিজেদের বাড়িঘরে। তবে তাদের আশায় গুড়েবালি। প্রায় এক বছরের কাছাকাছি সময় পূর্ণ হলেও ওসব রোহিঙ্গা তুমব্রু সীমান্তের (মিয়ানমার অংশে) জিরো লাইনে অপেক্ষা করছে এখনও। চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার ও বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যরা ওই এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। মিয়ানমার ওইসব রোহিঙ্গাকে আরও ভেতরে নিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। বাস্তবে তাদের সেখান থেকে রাখাইনের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়নি। একাধিক এনজিও সংস্থা ও কতিপয় দানবীর ব্যক্তির সহায়তায় প্রায় এক বছর ধরে ওসব রোহিঙ্গাকে মানবিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন পর হলেও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ওই রোহিঙ্গাদের খাদ্য, পানীয়সহ যেকোন ধরনের মানবিক সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করায় খুশি হয়েছে স্থানীয়রা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর উপস্থিতিতে মিয়ানমারে সফরকারী বাংলাদেশ পক্ষের ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যদের মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল এ প্রস্তাব করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহীদুল হকসহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের ৫ জন সদস্য এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে রিসিপশন ক্যাম্প ও ট্রানজিট ক্যাম্প পরিদর্শন করানো হয়েছে। দেশটির প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে, মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের মংডুতে নির্মাণকরা একেকটি ট্রানজিট ক্যাম্পে ৩০ হাজার লোকের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এ ধরনের ৫০টি ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে রাখাইনের মংডুতে। শনিবার সিত্তওয়ে (আকিয়াব) থেকে হেলিকপ্টারে করে মংডু এলাকায় অবতরণ করেন প্রতিনিধিদল। তারপর তুমব্রু সীমান্তে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য নির্মিত ট্রানজিট ক্যাম্প ঘুরে দেখেন। সেখান থেকে একটি গ্রামে যান যেটি গত বছরের আগস্টে সেনাবাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত হয়। সন্ধ্যা নাগাদ নেপিদো ফিরে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রথমবারের মত রাখাইনের মংডুতে এসে বিধ্বস্ত রোহিঙ্গা গ্রাম ও সীমান্তে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক নির্মিত ট্রানজিট ক্যাম্প দেখেছেন সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার আদি বসবাসের স্থানসহ ওই এলাকার বিধ্বস্ত চিহ্নগুলো প্রত্যক্ষ করেন তিনি। রোহিঙ্গা ¯্রােত অনুপ্রবেশের এক বছরের মাথায় তারা ওই এলাকায় যাবার সুযোগ পেলেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের রাখাইনের মংডু টাউনশীপ এবং সীমান্ত এলাকায় নতুন করে তৈরি হতে থাকা বাড়িঘর এবং বসতিগুলো পরিদর্শনের কথা স্টেট কাউন্সেলর কার্যালয় থেকে প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এর আগে স্টেট কাউন্সিল অফিস জানিয়েছে, দুদেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ৮টি পয়েন্টে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ কর্তৃক পূরণকৃত ফরম নিয়ে আপত্তি তুলেছে মিয়ানমার। পরে মিয়ানমারের দাবি মেনে নিয়ে রোহিঙ্গাদের দ্বারা ফরম পূরণে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। শনিবার রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীকে কেইন গি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে এথনিক রাখাইন ও ম্রো জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বসবাস রয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হয়- সেখানে কিছু মুসলিম, বৌদ্ধ এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী একসঙ্গেই বসবাস করছে। ওই এলাকায় মিয়ানমার সরকার ২২টি বাড়ি নির্মাণ করেছে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের জন্য। আর ৫০টির বেশি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে প্রত্যাবাসিতদের জন্য। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল হেলিকপ্টারে করে দুপুরের আগে আকিয়াব থেকে মংডুর উদ্দেশে রওনা করেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের প্রস্তুতি সরজমিন দেখানো হয়। সারাদিন সীমান্ত এলাকা এবং মংডুতে ঘুরে তারা বিকেলে সিত্তওয়ে ফিরে এবং রাতে তারা ইয়াংগুনে যান। শুক্রবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয় নেপিডোতে। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আর মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অফিসের মন্ত্রী চাও তিন সোয়ে। বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
×