ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাগামহীন সিজারে প্রসূতি মায়েদের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৩ আগস্ট ২০১৮

   লাগামহীন সিজারে প্রসূতি মায়েদের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রসবব্যথা হচ্ছে অন্যতম কষ্টদায়ক ব্যথা। তবে ব্যথামুক্তভাবেও স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যথামুক্তভাবে প্রসব করানো হচ্ছে। প্রসব বেদনা নিয়ে প্রত্যেক মায়ের মধ্যে একটি আতঙ্ক কাজ করে। এ কারণেই অনেকে সিজারকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী হন। এই সুযোগে দেশে লাগামহীনভাবে সিজারের সংখ্যা বাড়ায় প্রসূতি মায়েদের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। দেশে প্রতিদিন ১৬ নারী মারা যান সন্তান প্রসব করতে গিয়ে। এই হিসাবে প্রতিবছর প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ থেকে ৭ হাজার। যার অন্যতম কারণ হচ্ছে সিজার। তাই মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে সরকারকে এসব দিক বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রবিবার রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালে আয়োজিত ‘ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসব’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। ইমপালস হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রফেসর ডাঃ জাহীর আল আমীনের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাঃ ফারজানা আহমেদ। আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ নিয়াজ টি পারভীন, অধ্যাপক ডাঃ আসরাফুন নেছা ও এ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান খন্দকার লাইজু। সেমিনারে আলোচকবৃন্দ বিভিন্ন পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে বলেন, বাংলাদেশে এক দশকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার হার বেড়েছে পাঁচগুণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্ত্রোপচারের (সিজারিয়ান) মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়া নারীর ২৬ শতাংশেরই এভাবে মা হওয়ার প্রয়োজন ছিল না। উপযুক্ত নির্দেশনা এবং পর্যবেক্ষণের অভাবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান ক্রমেই বাড়ছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, মাতৃত্ব এখন অর্থ উপার্জনের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্তান প্রসব মানেই যেন সিজার। এই শোষণ বন্ধে ‘ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসব’ পদ্ধতি অনেকটাই সুফল বয়ে আনবে। সমাজে নারী-পুরুষের পার্থক্য অনেক কমেছে। এরপরও এদেশের নারী এখনও অসহায়। তাদের কেবল সন্তান উৎপাদন যন্ত্র হিসেবেই দেখা হয়। তিনি বলেন, প্রসব ব্যথা হচ্ছে অন্যতম কষ্টদায়ক ব্যথা। তবে ব্যথামুক্তভাবেও স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যথামুক্ত প্রসব করানো হচ্ছে। প্রসব বেদনা নিয়ে প্রত্যেক মায়ের মধ্যে একটি আতঙ্ক কাজ করে। এ কারণে অনেকে সিজারকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী হন। তিনি বলেন, মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে সরকারকে এসব দিক বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মূল প্রবন্ধে ডাঃ ফারজানা আহমেদ বলেন, আমেরিকায় বর্তমানে ৬০ ভাগ গর্ভবতী মহিলা ব্যথামুক্ত ডেলিভারি পছন্দ করেন। কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলে ৭০ ভাগ ব্যথামুক্ত ডেলিভারি পদ্ধতি প্রয়োগ হয়। সুইডিশ পার্লামেন্ট ১৯৭১ সালে ব্যথামুক্ত ডেলিভারি আইন পাস করেছে। জাপানে খুব প্রয়োজন না হলে সিজার করে না। ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যথামুক্ত ডেলিভারি পদ্ধতি চালু আছে। বিশেষ করে হায়দ্রাবাদের ফারনানদোজ হাসপাতালে ৪ হাজার ডেলিভারির মধ্যে ৬৫ ভাগই ব্যথামুক্ত ডেলিভারি। বাংলাদেশে এ ধরনের পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবের কোন পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। এ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান খন্দকার লাইজু বলেন, অস্বাভাবিক ঘটনার ক্ষেত্রে সিজারের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, মায়ের যদি কোন জটিলতা থাকে। দেখা গেল মায়ের উচ্চ রক্তচাপ আছে। কিংবা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে। অথবা মা একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছে; যেমন হার্টের রোগ।
×