ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইয়ে পদ্মায় ভয়াবহ ভাঙ্গন ॥ ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ১৩ আগস্ট ২০১৮

  চাঁপাইয়ে পদ্মায় ভয়াবহ  ভাঙ্গন ॥ ব্যাপক  ক্ষতি

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ গোয়ালটুলি থেকে ইন্দো বাংলা সীমান্তের ২ হাজার ছয় শত মিটারে ভয়াবহ ভাঙ্গন। প্রায় আড়াই কিলোমিটার ধরে ভাঙ্গন পদ্মা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। উজানের ছেড়ে দেয়া পানি ও তীব্র স্রোত রোডপাড়া থেকে কাইড়াপাড়া পর্যন্ত দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ও ফসলের জমি এবং আম বাগান নদীগর্ভে চলে গেছে গত এক সপ্তাহে। এ ছাড়াও ভয় ভীতিতে প্রায় হাজার পরিবার তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছে দ্রুত ভাঙ্গনের আশঙ্কায়। চাকপাড়া, মোড়লটোলা, ফাটাপাড়াসহ প্রায় ৫টি গ্রাম মহাবিপদের মধ্যে রয়েছে। যে কোন সময় গ্রাস করতে পারে গ্রামগুলোকে। সংশ্লিষ্ট এলাকার একটি বিজিবি ক্যাম্প মহাবিপদের মধ্যে রয়েছে। পদ্মার ভাঙ্গন থেকে কয়েক মিটার দূরে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিজিপি ক্যাম্প চাপাই কর্মকর্তাদের নিয়ে রাজশাহী, নওগাঁ ও রংপুর জোনের বিজিবি কর্মকর্তারা ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করেছে ক্যাম্প রক্ষার। পাউবো তড়িঘড়ি এসে অস্থায়ী প্রতিরোধ দিতে বালুর বস্তা ফেলা শুরু করেছেন। পাউবো স্থায়ী বাঁধসহ পুরান বাঁধ সংস্কার ইতোমধ্যেই ২শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে তা দ্রুত পাঠানোর চিন্তা ভাবনা করছে। এই প্রকল্প অনুমোদন হলে সামনের বছরের শুকনো মৌসুমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ ভাঙ্গন ঠেকাতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ে এবং পুরো নদী পানিতে ভরাট হয়ে তীব্র ¯্রােতের তা-ব কিভাবে মোকাবেলা করবে পাউবো এই বিষয়ে কোন আগাম আশ্বাস দিতে পারেনি। এই এলাকার জনগণের আশঙ্কা এবারের বন্যায় তারা সব কিছু হারিয়ে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে। কারণ ইতোমধ্যে বাড়িঘর হুমকির মুখে রয়েছে ও প্রতিদিন ফসলের জমি ও আম বাগান নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে উজান থেকে দ্রুত ঘূর্ণিবার্তা নিয়ে যে হারে ধেয়ে আসছে তাতে কোন স্থাপনা টিকে থাকা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। . পাবনা নিজস্ব সংবাদদাতা পাবনা থেকে জানান, বেড়া উপজেলার চরপেঁচাকোলা ও চিথুলিয়া গ্রামে যমুনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত এক মাসে আড়াই শতাধিক বসতবাড়িসহ প্রায় ৫০০ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকার কমিনিউটি সেন্টারসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হুমকির মধ্যে পড়েছে। নদী ভাঙ্গনে বসতবাড়ি হারা মানুষেরা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও খোলা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ নদীতে ফেলেও ভাঙ্গন প্রতিরোধ করতে পারছে না। জানা গেছে, বেড়া উপজেলার চরপেঁচাকোলা গ্রামের মজিদ মোল্লা গত এক যুগে দুই দফা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন। এক সময় ২০ বিঘা জমি ও সাজানো ঘরবাড়ি ছিল তার। এখন কিছুই নেই সবই যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। বেড়া পৌর সদরে রিক্সা চালিয়ে কোনরকম চলছে তার পাঁচ সদস্যের সংসার। শুধু মজিদ মোল্লা নন, একই অবস্থা চিতুলিয়া ও চরপেঁচাকোলা গ্রামের আবুল মোল্লা, ছালাম মোল্লা, মোজাই মোল্লা, আরশেদ মোল্লা, অহেল মোল্লা, নূর মোহাম্মদ, ওয়াদুদ ম-ল, চাঁদ মিয়া শেখ, মনিরুল ইসলামসহ অনেকেরই। গত এক মাসে আড়াই শতাধিক বসতবাড়িসহ প্রায় ৫০০ একর ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। চোখের সামনে প্রতিদিনই নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। চিকিৎসা সেবার একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিকটি ভাঙ্গনের হুমকির মুখে পড়েছে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও খোলা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। অস্থায়ী ভাঙ্গনরোধে বেড়া পাউবো বিভাগ প্রায় ৯ হাজার বালি ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলেছে যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। হুড়াসাগর ও যমুনা নদীর মোহনা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ভাঙ্গনরোধ সম্ভব নয় বলে ওই গ্রামের মেম্বর মিজানুর রহমান জানিয়েছেন।
×