ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডাক্তারের কক্ষ ১৬ দিন তালাবদ্ধ ॥ মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১৩ আগস্ট ২০১৮

 ডাক্তারের কক্ষ ১৬ দিন তালাবদ্ধ ॥ মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ

নিজস্ব সংবাদাতা, কেশবপুর, ১২ আগস্ট ॥ কেশবপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের চিকিৎসা সেবায় মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মেডিক্যাল অফিসার (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) না থাকায় ওই বিভাগের জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ও দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণ এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় ধস নেমেছে। ওই বিভাগের ডাক্তার আব্দুল বারী সম্প্রতি বদলি ও ডাঃ তামান্না পারভীন ছুটিতে থাকার কারণে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের মেডিক্যাল অফিসারের কক্ষ গত ১৬ দিন ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। যে কারণে দূর-দুরান্ত থেকে আসা রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ প্রায় দশ বছর এখানে থাকা নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ডাঃ আব্দুল বারী বদলি থামাতে উর্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি ভাল লোক দাবি করে একটি আবেদনপত্র লিখে নিজের অধীনস্থ কর্মচারীদের জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে বদলি থামানোর চেষ্টা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার জানান, ডাক্তারের প্রতিনিধি চপল সাহা আমাদের চাপ দিয়ে এ সি আর ও সার্ভিস বুকে সমস্যা হবে বলে হুমকি দিয়ে ওই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে রোগীদের যৌন হয়রানি ও ক্লিনিকে অপচিকিৎসায় রোগী মারার তদন্ত হয়েছিল। অথচ তাঁর কিছুই হয় না। অদৃশ্য কারণে যে কোনভাবে সে পার পেয়ে যায়। গত ২৩ জুলাই ডিজি অফিস ডাঃ আব্দুল বারীকে কেশবপুর থেকে বদলি করলেও সেখানে যোগদান না করে বরাবরের মতো এবারও তিনি বদলি থামানোর অপচেষ্টা করছেন। কেশবপুর উপজেলার ১৪৪ গ্রামসহ পার্শ¦বর্তী মনিরামপুর, কলারোয়া ও তালা উপজেলার আংশিক এলাকার মা ও শিশু রোগীরা প্রতিনিয়ত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সেবা গ্রহণ করতে কেশবপুর হাসপাতালে আসে। সরেজমিন শনিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ও দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণ করতে প্রতিদিনের মতো হাসপাতালে প্রচুর রোগী এসেছে। কিন্তু মেডিক্যাল অফিসারের কক্ষ তালাবদ্ধ থাকায় তারা সেবা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। প্রায় দশ বছর এখানে থেকে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে ডাক্তার আব্দুল বারী নিয়মিত অফিস না করে বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন করেন। অফিসের অধিকাংশ কর্মচারী মুখে তাঁর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ শোনা গেছে। ২০১৫ সালে কেশবপুর উপজেলার আয়েশা খাতুন নামের এক রোগীর যৌন হয়রানি করার অভিযোগ করা হয়। অভিযুক্ত হলেও তিনি উর্ধতন কর্তাদের ম্যানেজ করে পার পেয়ে যান। গত বছরের অক্টোবর মাসে কেশবপুরের মর্ডান ক্লিনিকে উপজেলার জাহানপুর গ্রামের তাছলিমা নামের এক গৃহবধূ তার ভুল অপারেশনে মারা যান। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ডাক্তার আব্দুল বারী ৯ বছর একটানা কেশবপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মচারীরা জানান, মেডিক্যাল অফিসার (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) আব্দুল বারীর গত ২৩ জুলাই ঢাকা ডিজি অফিস তাকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় বদলি করেন। আদেশ পেয়ে তিনি যোগদান না করে বদলি থামাতে দেড় মাসের জন্যে ছুটি নিয়েছেন। গত ২৬ জুলাই থেকে অফিসে আসেন না আর মেডিক্যাল অফিসার (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) ডাঃ তামান্না পারভীন কেশবপুর পরিবার পরিকল্পনা অফিসে দেড় বছর আগে যোগদান করলেও তিনি কখনও অফিস করেন না বলে অভিযোগ রযেছে। অধিকাংশ সময় ছুটি নিয়েই কাটিয়ে দিচ্ছেন। তিনি গত ১০ জুলাই থেকে ৩১ দিনের ছুটি কাটাচ্ছেন। ফলে ওই ডাক্তার দ্বয়ের কক্ষটি এখনও তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এ বিষয়ে ডাক্তার আব্দুল বারী বদলির আদেশ ও দেড় মাসের ছুটির কথা স্বীকার করে জানান, আমার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমি কর্মচারীদের জোর করে স্বাক্ষর করাইনি। এ বিষয়ে আমি জানিও না। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বিশ্বাস জানান, ডাক্তার আব্দুল বারী আর ডাক্তার তামান্না পারভীন ছুটি নিয়েছেন। কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শেখ আবু শাহিন বলেন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন সম্পর্ক নেই। তবে শুনেছি তিনি বদলি হয়েছেন। এ বিষয়ে যশোর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডাক্তার মুন্সি মনোয়ার হোসেন জানান, মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার আব্দুল বারীকে ডিজি অফিস বদলি করেছেন।
×