ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নোবেলজয়ী ব্রিটিশ লেখক নাইপলের চিরবিদায়

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১৩ আগস্ট ২০১৮

  নোবেলজয়ী ব্রিটিশ লেখক নাইপলের চিরবিদায়

ত্রিনিদাদে জন্মগ্রহণকারী নোবেলজয়ী ব্রিটিশ লেখক স্যার ভিএস নাইপল শনিবার লন্ডনে নিজের বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন বলে তার পরিবার জানিয়েছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। খবর গার্ডিয়ানের। স্যার বিদ্যাধর সুরুজ প্রসাদ নাইপলের জন্ম ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট ত্রিনিদাদের প্রত্যন্ত এলাকার এক ভারতীয় পরিবারে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ঔপন্যাসিকের হাত দিয়ে বিশ্বের পাঠক পেয়েছে ৩০টির বেশি সাড়া জাগানো বই, যার মধ্যে রয়েছে ‘ইন এ ফ্রি স্টেট’, ‘এ বেন্ড ইন দা রিভার’, ‘এ হাউস ফর মিস্টার বিশ্বাস’ এর মতো সাহিত্যকর্ম। স্ত্রী নাদিরা নাইপলের বর্ণনায় নাইপল ছিলেন ‘সব অর্জন মিলিয়ে এক বিরাট মাপের মানুষ’। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, নাইপল যাদের ভালবাসতেন, যাদের সঙ্গে পার করেছেন অসাধারণ উদ্যমী আর সৃষ্টিশীল এক জীবন, তাদের সান্নিধ্যেই তার শেষ সময়টা কেটেছে। দ্য মেইলের সম্পাদক ও নাইপলের ঘনিষ্ঠ বন্ধুু জেরার্ডি গ্রেগ রবিবার বলেন, তার মৃত্যুতে ব্রিটেনের সাহিত্য-ঐতিহ্যে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। কোন সন্দেহ নেই যে তার বইগুলো বেঁচে থাকবে। মার্কিন ভ্রমণ লেখক পল থেরক্স বলেন, তিনি ছিলেন আমাদের সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখকদের মধ্যে অন্যতম। নাইপলের সঙ্গে দ্বিমত পোষণকারী লেখক সালমান রুশদি বলেন, তিনি এমন দুঃখ অনুভব করছেন যেন তার প্রিয় বড়ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। আমরা আমাদের জীবন, মতবাদ, সাহিত্য সম্পর্কে সব সময় মতানৈক্য পোষণ করি। এখন আমি দুঃখের সঙ্গে অনুভব করি যে আমি শুধু আমার প্রিয় বড়ভাইকে হারিয়ে ফেলেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাইপলের মৃত্যুতে ভক্তরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ছোটবেলাতেই নাইপল বাবার উৎসাহে শেক্সপিয়ার ও ডিকেন্সের সব লেখনী পড়ে শেষ করেন। তিনি একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী হিসেবে বড় হতে থাকেন। ত্রিনিদাদের কুইন্স রয়েল কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি ব্রিটেন যান ও ১৯৫০ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে সরকারী স্কলারশিপ নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন। ছাত্র হিসেবে তিনি সেখানে বিষণœতায় ভোগেন এবং আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। তার প্রথম লেখা বই দ্য মাইস্টিক ম্যাসিউল ১৯৫১ সালে প্রকাশিত হয়। এর এক দশক পর তার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস এ হাউস ফর মিস্টার বিশ্বাস প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসটি লিখতে তার তিন বছরের বেশি সময় লাগে। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি বিবিসির ক্যারিবিয়ান সার্ভিসে কাজ করেন। ১৯৭১ সালে ‘ইন এ ফ্রি স্টেট’ উপন্যাসের জন্য বুকার পান নাইপল। আর ২০০১ সালে পান সাহিত্যের নোবেল। নোবেল কমিটির প্রশংসাপত্রে নাইপলকে বর্ণনা করা হয় জোসেফ কনরাডের উত্তরসূরি হিসেবে। কমিটি তখন বলেছিল, স্যার বিদ্যাধর আমাদের অবিচ্ছিন্নভাবে আখ্যান প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম করে তোলেন এবং তার শাশ্বত কর্ম দিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা ইতিহাসের উপস্থিতি দেখতে বাধ্য করেন। নাইপল একজন আধুনিক দার্শনিক। তার সচেতন শৈলীতে তিনি যথোপযুক্তভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। নাইপলের প্রথম স্ত্রী প্যাট্রিসিয়া হালে ১৯৯৬ সালে মারা যান। পরে তিনি পাকিস্তানী সাংবাদিক নাদিরাকে বিয়ে করেন। অক্সফোর্ডে ইংরেজী সাহিত্যে পড়া নাইপল যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হলেও ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বময়। ২০১৬ সালে ঢাকা লিট ফেস্টের উদ্বোধনেও এসেছিলেন তিনি। নাইপল ছিলেন স্বল্পভাষী।
×