ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আট সিদ্ধান্ত ॥ হটলাইন চালু করবে দু’দেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১২ আগস্ট ২০১৮

 রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আট  সিদ্ধান্ত ॥ হটলাইন চালু করবে দু’দেশ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রাখাইন রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে আট সিদ্ধান্তে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে শুক্রবার বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে দেশটির রাজধানী নেপিডোতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। দুই পক্ষই রোহিঙ্গাদের অতি সত্বর নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবাসনে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়টি সামনে রেখে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুই দেশ হটলাইন চালু করবে। জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে হটলাইন চালু করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার। শুক্রবার রাজধানী নেপিডোর থিনগাহা হোটেলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। মিয়ানমারের ইউনিয়ন মিনিস্টার কিয়াউ থিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, ইউনিয়ন মিনিস্টার থিইন সু এবং উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে বৈঠকে দুই দেশ আটটি পয়েন্টে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দেশটির স্টেট কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠকের আটটি সিদ্ধান্ত হচ্ছে- দুই পক্ষই রোহিঙ্গাদের অতি সত্বর নিজ থেকে, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবাসনে সম্মত হওয়া বিষয়টিকে সামনে রেখে দুই দেশ হটলাইন চালু করবে। নিজ দেশে ফিরতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ভেরিফিকেশন ফরম পূরণ করবে, যেখানে স্বাক্ষর, আঙ্গুলের ছাপ এবং ফটো আইডি সংযুক্ত করবে। এ লক্ষ্যে মিয়ানমার দুটি রিসিপশন সেন্টার ও একটি ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করছে। বাংলাদেশ পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করবে তার মধ্যে একটি প্রস্তুত হয়েছে। দুই দেশ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী অভিযানে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। দুই দেশের জিরো পয়েন্টে যেসব রোহিঙ্গা অবস্থান করছে, তাদের বিষয়ে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। রোহিঙ্গাদের যে কোন ধরনের মানবিক সহায়তা মিয়ানমারে দিতে হলে তাদের এইড এজেন্সি তা দেবে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের যে আইডি কার্ড দিয়েছে, তা পরিমার্জন করার ব্যবস্থা থাকবে এবং দুই দেশ তাদের সীমান্তে বিপি-৩৪ এবং বিপি-৩৫নং পিলারে যৌথ পরিদর্শন করবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এ আটটি সিদ্ধান্তে একমত পোষণ শেষে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক রেখে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্য অব্যাহত রাখবে বলে সম্মত হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। এদিকে দু’দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এগার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সিদ্ধান্তের খবর প্রচার হলে স্থানীয়দের মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে চলেছে। সরকারের কাছে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে শুক্রবার অনুষ্ঠিত দু’দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার সিদ্ধান্তে খুশি হয়ে উখিয়ার এক জনপ্রতিনিধি জানান, মিয়ানমারতো কাগজে কলমে সর্বদা ঠিক থাকে। মুখেও সব স্বীকার করে পরবর্তীতে তা বাস্তবায়ন করে না। তারপরও আটটি সিদ্ধান্তের অনুবলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ওয়ার্কিং গ্রুপকে এ কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত বছরের ২৩ নবেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এরপর ১৬ জানুয়ারি দু’দেশের মধ্যে এ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তিও সম্পন্ন করে। এ চুক্তি অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু মিয়ানমার এ পর্যন্তও তা শুরু করেনি।
×