ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ৬ দফা চুক্তিতে জাপার নির্বাচনী সমঝোতা

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১২ আগস্ট ২০১৮

খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ৬ দফা চুক্তিতে জাপার নির্বাচনী সমঝোতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। শনিবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী সমঝোতার কথা জানায় জাপা ও মজলিসের নেতারা। সম্প্র্রতি ৫৯ দলের সমন্বয়ে দেশের রাজনীতিতে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন করেন এরশাদ। যদিও বিশাল আকারের জোটের মধ্যে মাত্র দুটি দল ছিল নিবন্ধিত। খেলাফত মজলিশ নিয়ে এরশাদের জোট দাঁড়াল ৬০ দলে। সংবাদ সম্মেলনে দুই দলের মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষরের সময় খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান বুলবুলি হুজুর উপস্থিত ছিলেন মঞ্চে। এ সময় জাতীয় পার্টিসহ এরশাদের জোটের শরিক নেতারাও বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, দেশে এখন চরম অরাজকতা, সুশাসনের অভাব সবখানে। এমন সময়ে খেলাফত আমাদের সঙ্গে হাত-মিলিয়েছে। এখন আমরা আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি। জনগণ যে পরিবর্তন চায়, আমরাই পারব সে পরিবর্তন আনতে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এইচ এম এরশাদকে ইমামতির দায়িত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করেন ইসলামী মহাজোটের চেয়ারম্যান আবু নাছের ওয়াহেদ ফারুক। তিনি বলেন, ‘ইমামতির জন্য কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন, সেটা এরশাদের আছে। আমরা তাঁকে আমাদের নেতৃত্ব বা ইমামতির দায়িত্ব দিয়েছি। কারণ, কোন মহিলাকে ইমামতির দায়িত্ব দেয়া যায় না।’ আবু নাছের ওয়াহেদ ফারুকের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এরশাদ বলেন, ইসলামের চেয়ে বড় শক্তি আর নেই। কিন্তু অনৈক্যের কারণে ইসলাম আজ ধ্বংসের মুখে। খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ছয় দফা চুক্তির ভিত্তিতে নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, পবিত্র কোরান-সুন্নাহবিরোধী আইন না করা, সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস কথাটি পুনঃস্থাপন করা, কওমি শিক্ষার সনদের স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় সংসদে আইন পাস করা, সব ধর্মের লোকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলো জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশে এখন চরম অরাজকতা, সুশাসনের অভাব সবখানে। এমন সময়ে খেলাফত মজলিস আমাদের সঙ্গে হাত-মিলিয়েছে। এখন আমরা আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি। আমরাই পারব পরিবর্তন আনতে। জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারই সব অন্যায়-অবিচার বন্ধ করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘সুন্দর পরিবেশ হলে বর্তমান কমিশনই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে এলে এক ধরনের কৌশল নেবে জাতীয় পার্টি। আর না এলে ৩শ’ আসনেই মনোনয়ন দেয়ার প্রস্তুতি আছে আমাদের। আমরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। আমাদের সংঘবদ্ধ চেষ্টায় ইসলাম ঘুরে দাঁড়াবে। আমাদের উদ্দেশ্য ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা। জাতীয় পার্টির একটি জোট আছে, তবে এখনও বলার সময় আসেনি কাদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট হবে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, ছাত্ররা খালি হাতে সড়কে জীবনের নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল। সন্তানদের মায়ের কান্না আর ছাত্রদের আর্তনাদ যেন দেখার কেউ নেই। সড়কে দুর্ঘটনায় শিশুরা জীবন দেবে, নিরাপদ সড়কের জন্য কোমলমতি শিশুরা আন্দোলন করবে এজন্য তো দেশ স্বাধীন হয়নি। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, মুসলিম বিশ্বকে ধ্বংস করতে পশ্চিমা বিশ্ব ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আজ মুসলিম দেশগুলো একে অন্যের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। ইরাক, ফিলিস্তিন ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে, কেউ প্রতিবাদ করছে না। আমাদেরই প্রতিবাদ করতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র। ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলো আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন, আমরা আরও শক্তিশালী হচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের আমির প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, ইসলামী মহাজোট চেয়ারম্যান আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মহাসচিব এম এ মতিন, মজলিস মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, বিএনএ মহাসচিব এ্যাড. জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সঙ্গেও পাঁচদফা নির্বাচনী চুক্তি করেছিল খেলাফত মজলিস। ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন আওয়ামী লীগের পক্ষে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল এবং খেলাফত মজলিসের পক্ষে সাবেক মহাসচিব মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী। বর্তমানে ইউসুফী ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি হিসেবে আছেন। পরে নানা মহলের সমালোচনায় চুক্তি বাতিল করেছিল আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, যিনি ২০১২ সালে মারা গেছেন।
×