ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরি সার্ভিস বন্ধ ॥ দুর্ভোগে পড়বে যাত্রীরা

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১২ আগস্ট ২০১৮

 শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরি সার্ভিস বন্ধ ॥ দুর্ভোগে পড়বে যাত্রীরা

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে নাব্য সঙ্কটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষ। শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে এ সার্ভিস বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। এতে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় ভিআইপিদের ফেরি পারাপার এক রকম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ফেরি পারাপার বন্ধ থাকলে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে এখানে। বিআইডব্লিউটিসি’র এজিএম খন্দকার শাহ খালেদ নেওয়াজ জানিয়েছেন, চ্যানেলে যেখানে ফেরি চলতে পানি লাগে ৭ থেকে ৮ ফিট, সেখানে পানি রয়েছে মাত্র ৫ ফিট। তাই বাধ্য হয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ করতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বেশ কিছুদিন আগে বিআইডব্লিউটিএ এই চ্যানেলে ড্রেজিং করছিল। তারপরও নাব্য সঙ্কট থেকেই যাচ্ছে। এছাড়া আমরা গাড়িগুলোকে বিকল্প পথে যেতে অনুরোধ করছি। এই রুটে কমপক্ষে গড়ে তিন হাজার গাড়ি দৈনিক পার হয়। এখন এই চাপ পড়বে পাটুরিয়া ঘাটে। আমরা তিনটি রোরো ফেরিসহ চারটি ফেরি শিমুলিয়া থেকে পাটুরিয়ায় পাঠাচ্ছি। কবে নাগাদ ড্রেজিং শেষ করে ফেরি সার্ভিস সচল করতে পারব এ বিষয়ে বোঝা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে নৌরুটের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের মুখে একটি ডুবোচরের সৃষ্টি হয়। উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানির সঙ্গে আসা পলি পরে ডুবোচরটি দিন দিন বড় হতে থাকে। এতে চ্যানেলের মুখে এ রকম ডুবোচরের কারণে ফেরি চালকরা প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতো। ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকতো। ডুবোচরে আটকে ফেরির প্রপেলারসহ ইঞ্জিনের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছিল। বিআইডব্লিউটিএ-কে বিষয়টি অবহিত করলে তারা গত বছরের একটি চ্যানেল খুলে দিলে ফেরিগুলো ওয়ান ওয়ে পদ্ধতিতে চলছিল। কিন্তু লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের মুখে ড্রেজার লাগিয়ে পলি অপসারণ করলেও মূলত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নাব্য সঙ্কটের কারণে শনিবার ফেরিগুলো চলাচলে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। তাই দুপুরের দিকে ফেরি সার্ভিস সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। তারপর বিকেলে ড্রেজিংয়ের পর ড্রেজারটি সরিয়ে নিলে সে পথে ফেরি সার্ভিস আবারও চালু করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফেরি পাড়ি দিতে পারেনি ডুবোচরের ওই অংশ। ড্রেজিং করার পর সেখানে পানি রয়েছে সর্বোচ্চ সাড়ে চার ফিট। অথচ একটি রো রো ফেরি চলাচলে পানির গভীরতা প্রয়োজন সাড়ে ৭ থেকে ৮ ফিট। তাই বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় ঘাটে আটকা পড়েছে পণ্যবাহী ট্রাকসহ পাঁচ শতাধিক যানবাহন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে এ নৌরুট দিয়ে শত শত ভিআইপি বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতে টুঙ্গিপাড়ায় গমন করেন। কিন্তু ফেরি সার্ভিস বন্ধের ফলে এখন এ সকল ভিআইপির গাড়ি পারাপার এক ধরনের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া মাত্র কিছুদিন পরেই কোরবানির ঈদের ছুটিতে যাত্রীরা ঘরমুখো হবেন। এতে ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে পরায় দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের ভোগান্তির যেন শেষ হবে না। মাওয়া ট্রাফিকের টিআই সিদ্দিকুর রহমান জানান, ঘাট মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বিকেলে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার পর হতে যানজট দেখা দিয়েছে। ঘাটে গাড়ির সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এখানে যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হবে। বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী (ড্রেজিং) এএসএম আরিফিন শনিবার সন্ধ্যায় লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট থেকে জানান, ‘আমি ড্রেজিং চ্যানেলের মুখেই আছি। এখানে বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের নিয়ে নদীতে পরীক্ষা-নিরিক্ষা চলছে। তবে নদীতে ভাটি থাকায় পানির মাত্রা কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। জোয়ার এলেই তা ঠিক হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, তাছাড়া পদ্মায় এখন প্রচুর স্রোত ড্রেজিং করার পর পলি পরে আবারও ভরাট হয়ে যাচ্ছে ড্রেজিংকৃত ওই অংশ। আমরা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখছি কিভাবে ফেরি সচল করা যায়। তিনি আরও জানান, এখন মার্কিং চলছে। যে বিকল্প পথে ফেরি চলতে পারে সেটা চিহ্নিত করা হচ্ছে। আশা করা যায় এদিক দিয়ে ফেরি চলতে পারবে। মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ওসি মোঃ আরমান হোসেন জানান, ঘাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আমরা গাড়িগুলোকে বিকল্প পথে যাবার অনুরোধ করছি।
×