ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রুট পারমিট বাতিলের পরও সড়কে জাবালে নূর, ৬ বাস আটক

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১২ আগস্ট ২০১৮

   রুট পারমিট বাতিলের পরও সড়কে জাবালে নূর, ৬ বাস আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এখনও রক্তের দাগ শুকোয়নি। নিহতের দুই পরিবারের শোক কাটেনি। শিক্ষার্থীদের ক্ষোভও প্রশমিত হয়নি। এমন বিরুদ্ধ পরিবেশেই আবারও হিম্মত দেখিয়েছে রুট পারমিট বাতিল হওয়া কোম্পানি জাবালে নূর। অনেকটা শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ করেই মিরপুর রুটে আবারও বাস চলাচল শুরু করে। যা ছিল আন্দোলনকারীদের ৯ দফার অন্যতম। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখে র‌্যাবও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে তাৎক্ষণিক। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাবালে নূরের ৬টি বাস আটক করেছে র‌্যাব। রুট পারমিট বাতিল করার পরও রাস্তায় নামার অভিযোগে জাবালে নূরের এসব বাস আটক করা হয়। র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৪ এর সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসগুলো আটক করেন। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান- এ কোম্পানির আটককৃত ৬টি বাসের মধ্যে ৩টির কোন রুট পারমিট নেই। বাকি তিনটার শুনেছি রয়েছে। তবে জাবালে নূরের রুট পারমিট বাতিল করার কোন আদেশ আমরা এখনও পাইনি। আন্দোলনকারীদের অন্যতম দাবির মুখে তখন রুট পারমিট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিল বিআরটিএ। তারপরও কিভাবে চলবে এগুলো প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা সেটাও খতিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বাসগুলোর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও জনতার রোষ রয়েছে। বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজউদ্দিনসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। এ অবস্থায় জাবালে নূরের বাস চলাচলে পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় এ অভিযান চালানো হয়। এ দিকে শিক্ষার্থী ও জনতার রোষানল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নতুন কৌশলে ওই একই রুটে বাস চালানোর উদ্যোগ নেয় জাবালে নূর। রাজধানীর টঙ্গীসহ কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে গ্যারেজে রাতের আঁধারে লুকিয়ে বাসের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। আল মক্কা ও শাহে নূর নামের দুটো কোম্পানির নামে জাবালে নূর ফের দাপটে বাস চালানোর পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এ জন্য এ দুটো নামের বিপরীতে বিআরটিএ- থেকে রেজিস্ট্রেশন নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। মাসুদ আলম নামের এক উপ-পরিচালক ও রাজ্জাক নামের এক পিএসের বিরুদ্ধে নতুন কোম্পানি দুটোর অনুমোদন পাইয়ে দেবার পাঁয়তারা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এ সব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যান মশিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমার জানা মতে জাবালে নূরের কোন নতুন আবেদন বিআরটিএ-তে জমা পড়েনি। ওই এলাকার ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, জাবালে নূরের অনেক বাস রাজধানীর আগারগাঁও ও মিরপুরে রাস্তার পাশে দেখা গেছে। কমপক্ষে ২০টি বাস রাস্তার পাশে দেখা গেছে সেখানে। বাসগুলোর কাছে জাবালে নূর পরিবহন লিমিটেডের কোন কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। তবে বেশ কয়েকজন শ্রমিককে দেখা যায় সেখানে। পাশাপাশি মিরপুরে চিড়িয়াখানা রোডে জাবালে নূরের বেশ কিছু বাস মেরামত ও রং পরিবর্তন করতে দেখা গেছে। এগুলো নতুন কোম্পানির নামে রাজপথে নামানো হবে। এ বিষয়ে জাবালে নূর পরিবহন লিমিটেডের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনেক বাস আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া যেসব গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই সেগুলোও নামছে না। কাগজপত্র ও বাকি বাসগুলো ঠিক করে রাস্তায় নামাতে এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। বাসের রুট পারমিট জাবালে নূরের অধীনে। কোন বাস রং পরিবর্তন করে অন্য ব্যানারে যাচ্ছে কী না আমার জানা নেই। উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই জাবালে নূরের একাধিক বাস যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। প্রতিযোগিতায় লিপ্ত একটি বাসের চাপায় বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। আহত হয় আরও ১০ থেকে ১২ শিক্ষার্থী। এ ঘটনার প্রতিবাদে ওইদিনই রাস্তায় নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দুই শিক্ষার্থীকে বাসচাপায় ‘হত্যার’ বিচারসহ নিরাপদ সড়কের জন্য ৯ দফা দাবিতে চলে টানা আন্দোলন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হত্যার জন্য দায়ী জাবালে নূর পরিবহন লিমিটেডের রুট পারমিট বাতিলেরও দাবি তোলে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ১ আগস্ট জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদ বাতিল করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাসের চালক মাসুম বিলাল যুবায়ের ও সোহাগকে এবং দুজন হেলপার রিপন ও এনায়েতকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেফতার হন বাসটির মালিক শাহাদাত হোসেনও। এরপর র‌্যাবের কাছে স্বীকারোক্তিতে বাসচালক মাসুম বিলাহ জানান, তার বড় গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিল না। হালকা যান প্রাইভেটকার ও ছোট মাইক্রোবাস চালানোর জন্য লাইসেন্স নিয়ে তিনি বাস চালিয়ে আসছিলেন। তিনি ইচ্ছে করেই যাত্রী ধরার জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর বাস তুলে দেন।
×