ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বেচ্ছাসেবক লীগের আলোচনায় কাদের

কোথায় কারা গোপন বৈঠক করছে- সবই আমরা জানি, সময়মতো ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১২ আগস্ট ২০১৮

কোথায় কারা গোপন বৈঠক করছে- সবই  আমরা জানি, সময়মতো ব্যবস্থা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশে বলেছেন, রাতের অন্ধকারে কিংবা দিনের বেলায় কোথায়, কারা, কার সঙ্গে গোপন বৈঠক করে সবই আমরা জানি। সময় মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে। টেমস নদীর পাড়ে কখন কার সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে; ব্যাংকক, দুবাইয়ে বসে কারা কোন গডফাদারের সঙ্গে বৈঠক করছেন- সেগুলোও আমাদের নলেজে আসে। ধৈর্য ধরে আছি, মনিটর করছি। আরও খোঁজ খবর নিচ্ছি। শনিবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল বলেন, ‘তিনি বলছেন, অতিদ্রুত দেশের রাজনৈতিক চিত্র বদল হবে। কিভাবে বদল হবে, কেন বদল হবে, কি কারণে বদল হবে? মওদুদ সাহেবদের কাছে কি ম্যাজিক আছে, যে ম্যাজিক দিয়ে বদল করবেন? তিনি বলেন, বদল হবে বাংলাদেশের জনগণের রায়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু অন্য কোন উপায়ে বদল হওয়ার যে খোয়াব দেখছেন, এই রঙিন খোয়াব অচিরেই কর্পুরের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, আপনারা বলছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শেষ। কিভাবে শেষ, রাতের অন্ধকারে কী বৈঠক করছেন? সরকার কে বদলাবে, জনগণ? জনগণ কী আপনাদের (বিএনপি) চায়? নয় বছরেও কী বুঝেন না। দিন শেষ, দেশে এখন বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির দিন শেষ। বিএনপির ছদ্মবেশী রাজনীতির সময়ও শেষ। ধোঁকা দিয়ে বোকা বানাবেন, বাংলাদেশের জনগণ এত বোকা নয়! আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, সময়টা ভাল নয়, আমি আমাদের নেতৃবৃন্দের কাছে, আমার সহকর্মীদের কাছে বিনীত অনুরোধ করব, যার যার সীমানা পেরিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেবেন না। সরকার ও দল বিব্রত হয় এমন বক্তব্য পরিহার করবেন। এমন কোন কথা দয়া করে কেউ বলবেন না। হোমওয়ার্ক করে কথা বলবেন, পলিসির ব্যাপারে নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে তারপর কথা বলবেন, ফ্রি স্টাইলে কথা বলা যাবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশে নিজের ছবি দিয়ে আত্মপ্রচার বন্ধ করতে হবে। ছবি প্রদর্শনের এই প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহার করে, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে আত্মপ্রচারে যারা নিমগ্ন তাদের রাজনীতির কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন আছে। একজন এমপি তার বাড়ি ঢাকা থেকে অনেক দূরে একটি দ্বীপে, তিনিও ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছবি দিয়ে পোস্টার বিলবোর্ড করেছেন। কেন? এটা কি তাদের নির্বাচনী এলাকা। দয়া করে এসব প্র্যাকটিস বন্ধ করুন। এসব ছবি প্রদর্শন করে নমিনেশন পাওয়া যাবে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, মন্ত্রীরা বিদেশ যেতে চায়। নেতারা কথা বেশি বলে, কাজ তেমন করে না। বর্তমানে নেতাদের বঙ্গবন্ধুর সেই উক্তি স্মরণ করার অনুরোধ করছি। আমি আশা করি, আমাদের সরকারী পদে আমরা যারা মন্ত্রী আছি, আমাদের সকলের মনে রাখা উচিত, যারা নেতারা আছেন, ভাষণ না দিয়ে কাজের দিকে মনযোগ দিন। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। মওদুদ আহমদকে বিএনপির নেতাকর্মীরা কেন বিশ্বাস করেন এমন প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপিকে বলি এ লোকটাকে কেন বিশ্বাস করেন? কিভাবে বেগম জিয়াকে হাসপাতালে রেখে ওই ব্যক্তিটি এরশাদ সাহেবের দলে যোগ দিয়েছিলেন, এটা ইতিহাস। এদেশের রাজনীতির বহুরূপী ব্যারিস্টার হচ্ছেন এই মওদুদ সাহেব। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বিএনপি কী নিজেদের পাগলা কুকুর ভাবছে? যে কারণে আমরা ভয় পাব? বিএনপি যদি নিজেদের পাগলা কুকুর ভাবে তাহলে আওয়ামী লীগ নয়, দেশবাসী আতঙ্কে থাকবে। কারণ জলাতঙ্ককে সবাই ভয় পায়। আর ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির সঙ্গে কোন আলোচনার সুযোগ নেই। এরা পাকিস্তানের এজেন্ট, পাকিস্তানের দালাল। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোঃ আবু কাওছারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ এমপি। বিএনপিকে নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই ॥ এদিকে, সকালে রাজধানীর এয়ারপোর্ট সংলগ্ন কাওলায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা মাঝে মাঝে এমন কিছু উদ্ধৃতি দেন, কিছু কিছু প্রবাদ নিয়ে আসেন, আবার সেই কথার ফাঁদে নিজেরাই পড়ে যান। ‘সরকার জন-বিচ্ছিন্ন হয়ে বিএনপির আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছে’ মর্মে সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপিকে নিয়ে আতঙ্কে ভুগতে হবে কেন? তাদের নিয়ে আমাদের আতঙ্কের কিছু নেই। আমি জানতে চাই, বিএনপি কি পাগলা কুকুর, যে কামড়ালে আমাদের আতঙ্ক হবে? পাগলা কুকুর কামড়ালে জলাতঙ্ক রোগের সৃষ্টি হয়। এ প্রশ্নটা মির্জা ফখরুল করেছেন। তাকেই জিজ্ঞাসা করুন। বিএনপির সঙ্গে সংলাপ বিষয়ে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল তো কোন ফোন করেননি। আমি অনেকবার ফোন করেছি, উনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, আমি ফোন করেছি। গত নয় বছরের নয়টা মিনিট রাস্তায় দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি। আন্দোলন করতে পারেনি। কোটার ওপর ভর করে থাকতে পারেনি, ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ভর করে থাকতে পারেনি, নিরাপদ সড়কের ওপর ভর সেখানেও ব্যর্থ, অবশেষে বিদেশীদের কাছে নালিশ করা শুরু করেছে। এখন মির্জা ফখরুল সাহেব বেপরোয়া ড্রাইভারের মতো বেপরোয়া হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, শর্ত আরোপ করে কোন সংলাপ হয় না। সংলাপ হতে হয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে। কিন্তু বিএনপি সব কিছুতে শর্তারোপ করে বসে। সংলাপের বিষয়ে কোন পূর্ব শর্ত থাকতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি ফোন করলে বিএনপি মহাসচিব ফিরতি ফোন করবেন এটা তো কোন রাজনৈতিক সৌজন্যবোধের কথা নয়।’ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অগ্রগতি তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, কাজটা এখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আপনারা জানেন, এটা কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালি পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার পর্যন্ত যাবে। মোট তিন ধাপে এ কাজটি বাস্তবায়ন হবে।
×