ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কমলাপুরে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হওয়ায় টিকেট বিক্রি বন্ধ

টিকেটের জন্য রাতভর প্রতীক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১২ আগস্ট ২০১৮

 টিকেটের জন্য রাতভর প্রতীক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুরের পর থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত কমলাপুর রেল স্টেশনে নানা ঘটনাই ঘটেছে। এর মধ্যে শনিবারের ট্রেনের অগ্রিম টিকেট কিনতে অনেককেই শুক্রবার দুপুর থেকে লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে! একজন যাত্রী। প্রয়োজন একটি টিকেট। এ জন্য রাতভর প্রতীক্ষা ছিল জালাল হোসেনের। টোকেন পেয়েছিলেন। আশা ছিল টিকেটও পাবেন। সে প্রত্যাশাও পূরণ হয়েছে তার। তবে শুক্রবার সন্ধ্যার পর যারা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকেই শূন্যহাতে বাড়ি ফিরেছেন। এ দিকে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় টিকেট বিক্রি বন্ধ ছিল। অগ্রিম টিকেট বিক্রির শুরুর দিনও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। শনিবার কমলাপুরে টিকেট বিক্রি বন্ধ হওয়ায় উত্তেজনা দেখা দেয় যাত্রীদের মধ্যে। তুমুল হই চই, হট্টগোল চলে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্টেশনজুড়ে আরেকটি চিত্র হলো, লোকে লোকারণ্য চারপাশ। এত মানুষের ভিড় দেখে অনেকেই লাইনে না দাঁড়িয়ে ফিরে গেছেন। তবে যাত্রী চাপ বেশি থাকায় টিকেট না পাওয়া মানুষের অভিযোগ ছিল বেশি। যাত্রীরা শনিবারও একই দাবি জানান, আগামী বছর থেকে টিকেট কাউন্টারের সংখ্যা আরও অন্তত ৫০টি বাড়ানোর। বিশেষ ব্যবস্থায় টিকেট বিক্রির বুথ স্থাপনের পরামর্শও দিয়েছেন অনেকে। আবার নারীদের দুটি কাউন্টারের মধ্যে একটি বন্ধ ছিল এক ঘণ্টার বেশি সময়। এ নিয়ে নারী যাত্রীরাও হই চই শুরু করেন। এক পর্যায়ে আরেকটি কাউন্টার খুলে দেয়া হয়। আজ অগ্রিম টিকেট বিক্রির শেষ দিন। কিন্তু এতসব ঘটনা কেন ঘটল। এর সদুত্তর মেলেনি সংশ্লিষ্ট কারও কাছ থেকেই। ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যার কারণে ঈদের ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রি বিঘিœত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় রাতজাগা মানুষের। ফলে হাজার হাজার টিকেট প্রত্যাশীদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা। সার্ভার ফের সচল হবে কী না এমন তথ্যও সরবরাহ করা হচ্ছিল না যাত্রীদের। অগ্রিম টিকেট বিক্রির চতুর্থ দিন একই কারণে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে টিকেট বিক্রি বন্ধ থাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা। কমলাপুরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সমস্যা শুরু হয়। ইন্টারনেট বিঘিœত হওয়ায় সার্ভারে ঢুকতে না পেরে তারা টিকেট বিক্রি করতে পারছিলেন না। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমলাপুরে টিকেট বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরে লাইন ঠিক হওয়ার পর দুপুর ১২টায় আবার টিকেট বিক্রি শুরু হয় বলে কমলাপুরের স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান। এবার ২২ অগাস্ট কোরবানির ঈদ ধরে ২১, ২২ ও ২৩ অগাস্ট ঈদের ছুটি নির্ধারণ করে রেখেছে সরকার। ছুটি শুরুর আগে শেষ কর্মদিবস ২০ আগস্ট। ওইদিনের টিকেটই শনিবার বিক্রি করছে রেল কর্তৃপক্ষ। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে অফিস শেষ করে অনেকে গ্রামের বাড়ির পথ ধরেন বলে ২০ আগস্টের টিকেটের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকে। ফলে রেল স্টেশনে আগাম টিকেটের লাইনে শনিবারই সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। সিলেটের যাত্রী আদনান জানালেন, শুক্রবার দুপুরের পরেই লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। রাতভর অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু এসি চেয়ার ও কেবিন কোনটার টিকেট পাইনি। অথচ আমার আগে মাত্র ১৭ জনকে টিকেট দিয়েছে। এর মধ্যেই এসি টিকেট শেষ! এইটা মানা যায় না। লালমনি এক্সপ্রেসের টিকেট কিনতে আসা হাবিব অভিযোগ করেন, টিকেট নিয়ে ‘দুর্নীতি হচ্ছে’। এই ট্রেনে ৪০০ এসি সিট। আমার আগে ২০ জন টিকেট নিয়েছে। সবাই চারটা করে নিলেও তো আশিটার বেশি যায় না। টিকেট নিয়ে নিশ্চয়ই কোন দুর্নীতি হচ্ছে। নইলে টিকেট যাবে কই? কমলাপুরে নারীদের জন্য দুটি কাউন্টার থাকলেও বেলা সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অগ্রিম টিকেট দেয়া হচ্ছিল একটি কাউন্টার থেকে। এ কারণে সেখানে ভিড় ছিল অন্য কাউন্টারগুলোর চেয়ে বেশি। খুলনার সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কিনতে আসা জেসমিন সুলতানা বলেন, এখানে এক কাউন্টারে সব ট্রেনের টিকেট দেয়। অন্য কাউন্টারের চেয়ে গতিও কম। ফলে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। দেখেন, পৌনে এক ঘণ্টায় মাত্র ২৩ জনকে টিকেট দিতে পেরেছে। কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী প্রশ্নের জবাবে বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার ট্রেনের টিকেট নিয়ে প্রতিদিনই অভিযোগ আসে। এ বিষয়ে তেমন কিছু করার নেই। আমাদের টিকেট কম। কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি। এ জন্য এসি টিকেট পান না বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। কিন্তু আমাদের তো টিকেট বাড়ানোর সুযোগ নেই। নারীদের একটি কাউন্টার বন্ধ রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, একটা কাউন্টার দশটার পরে খুলে দেয়া হয়। এর আগে একটা কাউন্টার থেকেই টিকেট দেয়া হয়। ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ৩৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের ২৬ হাজার ৮৯৫টি টিকেট বিক্রি হচ্ছে বলে স্টেশন ম্যানেজার জানান। শনিবার বিক্রি হয় ২০ আগস্টের টিকেট। বরাবরের মতো এবারও মোট টিকেটের ৬৫ শতাংশ দেয়া হচ্ছে কাউন্টার থেকে। বাকি ৩৫ শতাংশের ২৫ শতাংশ অনলাইন ও মোবাইলে। ৫ শতাংশ ভিআইপি ছাড়াও রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫ শতাংশ। একজন যাত্রীকে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৪টি টিকেট দেয়া হবে এবং বিক্রিত টিকেট ফেরত নেয়া হবে না। এ দিকে ১৫ আগস্ট থেকে শুরু“হবে ঈদ ফেরত যাত্রীদের জন্য ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি। ঈদ ফেরত অগ্রিম টিকেট রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বিক্রি শুরু হবে। ফিরতি টিকেট ১৫ আগস্টে পাওয়া যাবে ২৪ আগস্টের টিকেট। একইভাবে ১৬, ১৭, ১৮, ১৯ আগস্ট যথাক্রমে পাওয়া যাবে ২৫, ২৬, ২৭ ও ২৮ আগস্টের টিকেট। টিকেট বিক্রি শুরু হবে সকাল ৮টায়। বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রতিদিন ২ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করলেও ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে দৈনিক ৩ লাখ যাত্রী চলাচল করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
×