ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘মোহাম্মদপুর ষড়যন্ত্র’ ব্যর্থ হলেও থেমে নেই সরকার উৎখাত চক্রান্ত!

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১২ আগস্ট ২০১৮

 ‘মোহাম্মদপুর ষড়যন্ত্র’ ব্যর্থ হলেও থেমে নেই  সরকার উৎখাত চক্রান্ত!

শংকর কুমার দে ॥ প্রতি বছর শোকের মাস আগস্ট ঘিরে নানা ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হয়, নাশকতার ছক কষা জঙ্গী হামলা ঘটানোর চক্রান্ত চলে, সরকার উৎখাতের জন্য তৎপর হয় অশুভ শক্তি। এই আগস্টেই বিগত বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া রক্তাক্ত মর্মান্তিক ১৫ আগস্ট, দেশব্যাপী ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা, ভয়াবহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ফিরে আসার দিনগুলোকে সামনে এ বছরও নাশকতা ঘটানোর বড় ধরনের ছক কষার ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পেয়ে সতর্ক নজরদারি শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এবারের শোকের মাস সামনে রেখে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের সামনে রেখে বহিরাগত সাইবার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর গুজব ছড়ানো, মোহাম্মদপুর ষড়যন্ত্র, জঙ্গী তৎপরতার ছায়াসহ চক্রান্তের ছবি দেখতে পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। এই আগস্ট মাসেই ঘটে যাওয়া দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ধানম-ির ৩২ নং বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোয় প্রতি বছর আগস্টে এবারও বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। শোকের মাস আগস্টকে বার বার বেছে নিচ্ছে ষড়যন্ত্রকারী অশুভ শক্তি। চক্রান্ত চলছে, নাশকতা চালানো হতে পারে ষড়যন্ত্র থেমে নেই, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের আগস্টে ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন ঘটিয়ে সরকারের পতন ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে খুবই আশাবাদী ছিল অশুভ শক্তি। লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থেকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের ভেতরে যোগাযোগ করে সরকারের পতন ঘটানোর জন্য নাশকতার জন্য খুন, হামলার মতো ঘটনা উস্কে দিচ্ছেন এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা, তার মা কারাবন্দী সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নির্ভর করছে। হঠাৎ করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি ছাত্রদের আন্দোলনকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের সহানুভূতি লাভের বিষয়টি ছিল খুবই পরিকল্পিত, যা সরকার তৎক্ষণাৎ আঁচই করতে পারেনি। সরকার যখন আঁচ করতে পেরেছে তখন সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকে এতই বেগবান করা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে হস্তক্ষেপ না করলে তা নিয়ন্ত্রণ করাই রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়ত। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানী ঢাকায় হাজার হাজার বিএনপি-ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের জড়ো করা হয় রাজধানী ঢাকায়। শুধু তাই নয়, নীলনক্সা অনুযায়ী ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। সরকার বুঝতে পারে, কোমলমতি ছাত্রদের নিরাপদ আন্দোলনটি হাইজ্যাক করে নিয়ে গিয়ে সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলনে পরিণত করাতে চাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। শুধু তাই নয়, দেশের গুজব তো বটেই, বিদেশে গুজব ও মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশী মহলকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করে তারেক রহমান। এসব চিত্রই উঠে এসেছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্রদের নিরাপদ আন্দোলনের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের ঢুকিয়ে দেয়ার ঘটনা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অবহিত হওয়ার পর ঘটে যায় আরেক ঘটনা, যা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। গোয়েন্দা সংস্থার ভাষায় ‘মোহাম্মদপুর ষড়যন্ত্রের ঘটনাটি চলে আসে সরকারের শীর্ষ মহলের নজরে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সঙ্গে গণফোরাম সভাপতি ড. কামালসহ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির বৈঠক হয় ‘সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাসায়। গত ৪ আগস্ট রাতে বদিউল আলমের মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ১২/২ নম্বর বাসায় এ বৈঠক হয়। রাত সাতটা ৪০ থেকে রাত দশটা ৫০ মিনিট পর্যন্ত দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা তারা ওই বাসায় অবস্থান করছিলেন। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি হাফিজুদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, মিসেস মজুমদার ও মিসেস কামাল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ব্যবহার করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির নামে সরকার পতনের গভীর ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলে তৃতীয় একটি শক্তির উত্থানের পরিকল্পনা হয় বৈঠকে। বৈঠকে উপস্থিত অতিথিরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে শেখ হাসিনার সফল সরকারের পতন ঘটিয়ে তৃতীয় পক্ষের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটে নেয়ার ব্যাপারে একমত হন উপস্থিত আলোচকরা। সরকার পতনের আন্দোলনে পৃষ্ঠপোষকতা, সার্বিক সহযোগিতা এবং সরকারকে চাপে রাখার কৌশলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপদান করার জন্য সবধরনের আর্থিক সহযোগিতার জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে আশ্বাস চাওয়া হয়। যে কোন মূল্যে এই সুযোগ হাত ছাড়া না করার জন্য আলোচনায় জোর দেয়া হয়। দেশকে অস্থিতিশীল করে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিব্রত করে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য এখনই মোক্ষম সময় উল্লেখ করে উপস্থিত অতিথিরা। তবে হিতে বিপরীত হয় স্থানীয়রা যখন ষড়যন্ত্রের বিষয়ে টের পেয়ে যান। উপস্থিত জনতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করার বিরুদ্ধে হইচই শুরু করলে ষড়যন্ত্রকারীরা ভীত হয়ে পড়ে। তাড়াহুড়ো করে বৈঠক অসমাপ্ত রেখেই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে জনরোষে পড়ে হেনস্থার শিকার হন গোপন বৈঠকে যোগদানকারীরা। মার্শা বার্নিকাট কোন মতে গাড়িতে চড়ে বসলে উত্তেজিত জনতা তার গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে। পালিয়ে সেখান থেকে জীবন বাঁচায় তারা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের রেশ না কাটতেই মোহাম্মদপুরে কেন তারা বৈঠক করেছিল, উদ্দেশ্য কি, তা গোয়েন্দা অনুসন্ধানে চলে আসে। আগস্ট মাস সামনে রেখেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্রদের আন্দোলনের আড়ালে ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে হামলা চালানো হয় গত ৪ আগস্ট। আবার সেই ৪ আগস্টেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে বৈঠকে বসে। সেই রাতে বৈঠক শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত চলে যাওয়ার সময় হামলা ও ভাংচুর হওয়ার ঘটনায় বৈঠকের খবরটি জনসমক্ষে প্রকাশ পেয়ে যায়। ‘মোহাম্মদপুর ষড়যন্ত্রের’ পেছনে বিএনপি-জামায়াতের হাত ছিল বলে তথ্য পেয়ে তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্ট এলেই বার বার ষড়যন্ত্র, জঙ্গী হামলা, নাশকতার পরিকল্পনার নেপথ্যের কারণ হচ্ছে, যারা চক্রান্তকারী গোষ্ঠীগুলোকে মদদদান, আর্থিক সহায়তা এবং পৃষ্ঠপোষকতা করছে তারা থেকে যাচ্ছে পর্দার অন্তরালে। পর্দার আড়াল থেকে এসব গোষ্ঠীকে নাশকতাসহ নানা অশুভ তৎপরতায় উৎসাহ যোগাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় বসে জামায়াতÑশিবিরকে পুনর্বাসিত করেন। যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে জামায়াতের আমির গোলাম আযমসহ যারা পাকিস্তানে ছিল তাদের দেশে এনে এবং যারা দেশে ছিল তাদের প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ দান করেন জেনারেল জিয়া। তারপর তিনি রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের নিয়ে দল গঠন করেন, যার নামকরণ করা হয় বিএনপি। সুতরাং সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান বিএনপি-জামায়াত ও যুদ্ধপরাধী গোষ্ঠী। বিএনপি-জামায়াত, যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায় এলে ব্যাপক জঙ্গী তৎপরতা বেড়ে যায় দেশব্যাপী। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মধ্যে জঙ্গী হামলা, নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকা-, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে ক্ষমতাচ্যুতির ছক কষা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকা-ের এই শোকের মাসে আবারও নতুন করে জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটানোর জন্য বার বারই চেষ্টা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মতে, এবার শোকের মাসে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে নাশকতা ও নৈরাজ্যের ছক কষে তৎপরতা শুরু করেছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত-শিবির ও জঙ্গী গোষ্ঠী। নেপথ্য থেকে তাদের মদদ দিচ্ছে বিএনপির উগ্রপন্থী যাদের বিদেশী অশুভ শক্তির সঙ্গে গোপন যোগাযোগ আছে। সরকারের পতন ঘটাতে তাদের এ তৎপরতায় ইন্ধন যোগাচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ দল ও বিভিন্ন জঙ্গীরা। গত বছর ‘১৭ সালে রাজধানীর পান্থপথে নব্য জেএমবির আত্মঘাতী জঙ্গী সাইফুল ইসলামের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যা এবং ১৫ আগস্টে ৩২ নম্বর ও শোক র‌্যালিতে জঙ্গী হামলার ছক কষার ঘটনা ঘটে গেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শোকের মাসে নতুন করে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে সেজন্য আগাম গোয়েন্দা নজরদারি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতিসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগস্ট শোক ও বেদনাবিধূর হওয়ায় নানা ধরনের কর্মসূচী পালন করে আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। এই সুযোগটা নিতে পারে স্বাধীনতাবিরোধী অশুভ শক্তি, বিশেষ করে জামায়াত-শিবির যুদ্ধাপরাধীরা। তাদেরকে সহায়তা করতে পারে বিএনপির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানপন্থী উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ চক্রটি। এ জন্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই স্বাধীনতা যুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ইতিপূর্বেই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ধ্বংসে ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা করছে, যা বাস্তবায়নের চেষ্টা হতে পারে। এই আগস্ট মাসেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা নিলে দেশে ভয়াবহ জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটে। দেশব্যাপী একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এমন ঘটনার পর বিএনপি হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দোষারোপ করতে থাকে। এতে করে জঙ্গীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেই ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় যুগপৎ বোমা হামলা চালিয়েছিল নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি। সেই জঙ্গীবাদের শীর্ষ নেতা জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে ‘বাংলাভাই’ মিডিয়ার সৃষ্টি বলে অভিযোগ করেছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, যাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর ২০১৬ সালের শোকের মাসে জঙ্গী হামলার ছক কষে আগের মাস জুলাইতে ভয়াবহ জঙ্গী হামলা চালানো হয় গুলশানে হলি আর্টিজনে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সবচেয়ে বড় ঈদের জামায়াতে। আগস্ট মাস বেছে নিয়েই মঙ্গলবার ধানম-ির ৩২ নং বাড়িতে ও শোক র‌্যালিতে আত্মঘাতী জঙ্গী হামলার প্রস্তুতির খবর পেয়ে জঙ্গী বিরোধী অভিযান চালানো হলে পান্থপথে জঙ্গী সাইফুল ইসলাম বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়। সামনে রয়ে গেছে সিরিজ বোমা হামলার সেই ১৭ আগস্ট ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কলঙ্কময় দিবস। এই শোকের মাস কেন্দ্র করে কোন অশুভ মহল যাতে নতুন করে কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারণ এ মাসে যেকোন ধরনের নাশকতা ঘটতে পারে বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অস্থিরতা বাড়াতে, নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে ফের নাশকতার ছক কষছে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির মধ্যকার স্বাধীনতাবিরোধী পন্থীরা। তাদের নাশকতার লক্ষ্য স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং ব্যক্তিবর্গ। এর মূল লক্ষ্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এ সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অতীতের মতো এবারও জামায়াতকে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা, সহিংসতা ছড়াতে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে সব ধরনের সাহায্য করছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। বিএনপি জামায়াত-শিবির নিজেদের অস্তিত্বে রক্ষার জন্য মরণ কামড় দিয়ে ফের নাশকতার চক্রান্ত করেই শোকের মাসে নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয় শত শত বিএনপি-জামায়াত-শিবির ক্যাডার। মোহাম্মদপুর ষড়যন্ত্র নামে গোপন বৈঠক হয়। সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সেই শোকের মাস আগস্টকেই বার বার ষড়যন্ত্রকারীরা বেছে নিচ্ছে, যাতে পর্দার অন্তরাল থেকে দেশী-বিদেশী অশুভ শক্তি কলকাঠি নাড়াচ্ছে।
×