ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আহতদের চিকিৎসাসেবা

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১২ আগস্ট ২০১৮

আহতদের চিকিৎসাসেবা

সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানে বেপরোয়া যানবাহন চলাচল ও মাত্রাতিরিক্ত প্রাণহানি ও সম্পদহানির প্রেক্ষাপটে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে জাতীয় ইস্যু হিসেবে। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জরুরী ভিত্তিতে মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। সরকারের সদিচ্ছা ও জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে যথাশীঘ্র আইনটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন ও পাস হতে পারে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায় যে, গত সাড়ে তিন বছরে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৫ হাজার ১২০ জন। প্রতিদিন গড়ে ২০ জন। এই সময়ে আহত হয়েছেন ৬২ হাজার ৪৮২ জন। এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশ ঘটেছে চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও মাত্রাতিরিক্ত গতির কারণে। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশিরভাগই কর্মক্ষম ব্যক্তি, তরুণ, নারী ও শিশু। আহতদের বড় একটা অংশ দেশের ভবিষ্যত ও অর্থনীতির মূল শক্তি। সড়ক দুর্ঘটনা এবং এর প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ বছরে প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি টাকা। সে অবস্থায় আহতদের জরুরী চিকিৎসা সেবা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে পারলে একদিকে যেমন অনেক প্রাণ রক্ষা পেত, পরিবারের বাঁচার পথ সুগম হতো; অন্যদিকে কমত জাতীয় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। এই প্রেক্ষাপটে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির জরুরী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও সহায়তাকারীর সুরক্ষায় প্রণীত নীতিমালার দুটি অংশে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ সংযুক্ত করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনাটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এই নির্দেশ মোতাবেক কোন হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে আহত কোন ব্যক্তিকে ফেরত পাঠাতে বা স্থানান্তর করতে পারবে না। তবে এটি নিশ্চিত করতে হলে হাইওয়ে পুলিশ পেট্রোলের তৎপরতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন স্থানে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ অত্যাবশ্যক। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’- সংগঠনের তথ্য মতে, দেশে প্রতি হাজার যানবাহনে নিহতের সংখ্যা বছরে ১৬৯ জন। অথচ অত্যধিক যানবাহনের দেশ জাপানে এই মৃত্যুর হার মাত্র দু’জন। শুধু ট্রাফিক আইনকানুন কঠোরভাবে মানার কারণেই জাপানে দুর্ঘটনার হার অবিশ্বাস্যভাবে কম। এর বিপরীতে বাংলাদেশে বিরাজ করছে এক নৈরাজ্যজনক অবস্থা। এখানে সারাদেশে তো বলাইবাহুল্য, এমনকি রাজধানীতেও প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে চলে ট্রাফিক আইন ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা। সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৩তম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ৭ম। কোন কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। সে অবস্থায় এ রকম একটি দুর্বল আইন হলে চালকরা যে আরও বেপরোয়া হবে এবং বাড়বে সড়ক দুর্ঘটনা, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সত্য বটে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে কেবল ড্রাইভার দায়ী নয়। বরং ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, ভুল সিগন্যাল, মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন, অসতর্ক যাত্রী ও পথচারী, সড়কের পাশে হাটবাজার, সড়কের যথেচ্ছ ব্যবহার ইত্যাদিও কম দায়ী নয়। প্রশিক্ষিত-অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন চালকেরও অভাব প্রকট। বিআরটিএসহ ট্রাফিক বিভাগের অব্যবস্থা, ঘুষ-দুর্নীতিও এর জন্য দায়ী অনেকাংশে। সভ্য ও উন্নত হতে হলে এসব বাধাই আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে পর্যায়ক্রমে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দেশে বর্তমানে যানবাহনের তুলনায় দক্ষ চালকের অভাব প্রকট। ৮ম শ্রেণী পাস ড্রাইভার এবং ৫ম শ্রেণী পাস হেলপার পাওয়া তো আরও দুঃসাধ্য। এমনকি রাজধানীতেও অনেক কিশোর বয়সী চালকের সন্ধান মেলে। তাদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে নৈশ বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি তৈরি করতে হবে পেশাদার দক্ষ চালক। তাদের শুধু গরু-ছাগল-মানুষ চিনলে হবে না, নিজেদেরও মানুষ ও মানবিক বোধসম্পন্ন হতে হবে। তাহলেই তৈরি হবে দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন চালক। কমবে সড়ক দুর্ঘটনা। এর পাশাপাশি আহতদের জরুরী চিকিৎসা সেবাও নিশ্চিত করতে হবে।
×