ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এখন সময় গোলরক্ষকদের

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ১১ আগস্ট ২০১৮

এখন সময় গোলরক্ষকদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্ব ফুটবলে স্ট্রাইকারদের আলাদাভাবেই মূল্যায়ন করা হয়। পারিশ্রমিক পাওয়ার ক্ষেত্রেও দেখা যায় অন্যদের চেয়ে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রাই এগিয়ে। গত মৌসুমে ২২২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ন্যু ক্যাম্প থেকে নেইমারকে কিনে নেয় প্যারিস সেইন্ট জার্মেই। গ্যারেথ বেল-ফিলিপে কুতিনহো কিংবা কিলিয়ান এমবাপে-উসমান ডেম্বেলের দিকে তাকালেও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে তা। চলতি মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে নতুন করে ঠিকানা গড়া পর্তুগীজ সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর দিকে তাকালেও পরিষ্কার হয়ে ওঠে স্ট্রাইকারদের মূল্যায়ন। তবে হঠাৎ করে গোলরক্ষকরাও চলে আসেন দলবদলের আলোচনায়। তাদের কেনার জন্যও এখন বস্তার বস্তা টাকা ঢালছে ইউরোপের শীর্ষ সারির ক্লাবগুলো। এ্যালিসন-কেপা আরিজাবালাগারাই তার বড় প্রমাণ। বিষয়টা আগে থেকেই অনুমিত ছিল। স্ট্যামফোর্ডব্রিজ ছেড়ে মাদ্রিদ যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েন থিবাউ কুর্তোয়া। যে কারণেই বেলজিয়ামের এই তারকা গোলরক্ষকের বিকল্প খুঁজতে শুরু করে চেলসি। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কেপা আরিজাবালাগাকেই নিজেদের দলে ভেড়ায় ব্লুজরা। তাও আবার বিশ্ব ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে রেকর্ড সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে চেলসিতে নতুন করে ঠিকানা গড়লেন কেপা আরিজাবালাগা। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ইতিহাসের দামী গোলরক্ষকের তকমাটা মাখানো ছিল জিয়ানলুইজি বুফনের। কিন্তু গত মাসেই তাকে টপকে সেই রেকর্ডটাকে নিজের করে নেন এ্যালিসন বেকার। রোমা থেকে ৮০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষককে দলে ভেড়ায় লিভারপুল। তার তিন সপ্তাহ পার হতে না হতেই সেই রেকর্ড ভেঙ্গে গেল। বুধবার এ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের স্প্যানিশ গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগাকে ৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কিনে নেয় চেলসি। এর ফলে এ্যালিসন বেকারের রেকর্ড ভেঙ্গে কেপাই এখন ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া গোলরক্ষক। চেলসির সঙ্গে সাত বছরের চুক্তি-স্বাক্ষর করেন কেপা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের জায়ান্ট ক্লাবটির সঙ্গে রেকর্ড পারিশ্রমিকের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত স্প্যানিশ গোলরক্ষক। মাত্র ২৩ বছর বয়স কেপার। তার বেড়ে ওঠা বিলবাওয়ের যুব একাডেমিতে। ২০০৪ সালে দশ বছর বয়সে যোগ দিয়েছিলেন সেখানে। স্পেন অনূর্ধ্ব-১৮ দল হয়ে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। সে দলের হয়ে ২০১২ সালে জিতেছেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে সেভ করেছিলেন দুটি পেনাল্টি। সিনিয়র দলে অভিষেক হয় ২০১৭ সালে কোস্টারিকার বিপক্ষে। দারুণ রিফ্লেক্স আর দ্রুত জায়গা পরিবর্তন করার সামর্থ্যরে কারণেই কেপা বেশি পরিচিত। গত দুই মৌসুমে এ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের জার্সিতে ৫৩ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এই সময়ের মধ্যেই নিজের জাত ছিনিয়েছেন কেপা। স্পেনের জার্সিতেও এক ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ২০১৭ সালে কোস্টারিকার বিপক্ষে সেই প্রীতি ম্যাচেও তার দল পেয়েছিল ৫-০ গোলের বড় জয়। শুধু তাই নয়, সদ্য সমাপ্ত রাশিয়া বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও ছিলেন এই স্প্যানিয়ার্ড। কিন্তু ডেভিড ডি গিয়ার কারণে এক মিনিটও খেলার সুযোগ মেলেনি আরিজাবালাগার। গত মৌসুমে লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে অন টার্গেটে আসা ১০টি শট সেভ করেছিলেন। গত জানুয়ারিতে তাকে প্রায় কিনেই ফেলেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তখন তার রিলিজ ক্লজ ছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলবদলটা হয়নি। কেপা বিলবাওতেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ক্লাবটির সঙ্গে ২০২৫ সাল পর্যন্ত নতুন চুক্তি করেন। যেখানে রিলিজ ক্লজ ধরা হয় ৮০ মিলিয়ন ইউরো। তবে এবার ভুল করেনি চেলসি। রেকর্ড পারিশ্রমিকের বিনিময়েই তাকে নিজেদের দলে কিনে নিল প্রিমিয়ার লীগের সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। ২০০১ সালে সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়ে ৫২ মিলিয়ন ইউরোতে বুফনকে দলে টেনেছিল জুভেন্টাস। অঙ্কটা একজন গোলরক্ষকের জন্য যে কত বড়, সেটা বোঝা গেছে পরের বছরগুলোতে। দলবদলের বাজারে যখন নিত্যনতুন রেকর্ড হয়েছে, সেখানে কোন গোলরক্ষকের জন্যই এ পরিমাণ অর্থ খরচ করেনি কেউ। সে রেকর্ড এ্যালিসন ভেঙ্গে দিয়েছিলেন ২৩ মিলিয়ন ইউরোর ব্যবধানে। কিন্তু জুলাইয়ের শেষভাগের সে রেকর্ড কেপার দখলে চলে যাচ্ছে এবার।
×