ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে চরম দুর্নীতি

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ১১ আগস্ট ২০১৮

গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে চরম  দুর্নীতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গোপালগঞ্জে বিআরটিএ অফিসের দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। ঘুষ ছাড়া মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায় না এ অফিসে। জেলার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী শতাধিক আনফিট গাড়ি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে । এছাড়াও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। এ বিষয়ে কেউ মোটা অঙ্কের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে নানা হয়রানির শিকার হতে হয় এমন অভিযোগ রয়েছে ওই অফিসের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে প্রতিদিন। এ কারণে দিন দিন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েই চলছে গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে। গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে সরেজমিন অনুসন্ধানকালে মোটরযান রেজিস্ট্রেশন করতে আসা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যেকটি মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের সময় সরকারী ফি ছাড়াও অতিরিক্ত দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং ক্ষেত্র বিশেষে আরও বেশি টাকা নেয়া হয়ে থাকে। অফিসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সকল কর্মচারী ওই অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। তারা সিন্ডিকেট করে লাখ লাখ টাকা অবাধে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। অফিসের বাইরে গাড়ির শো-রুমের লোকজনও এ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। জেলার মুকসুদপুরের ব্যবসায়ী সোহেল রানা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, কয়েক মাস আগে তিনি তার একটি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের জন্য গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে যান। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়া হলেও বিভিন্ন অজুহাতে রেজিস্ট্রেশন দিতে টালবাহানা করা হয়। পরে তিনি বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক সুবীর কুমার সাহার ব্যক্তিগত লোক (দালাল) হিসেবে পরিচিত শহরের একটি মোটরসাইকেল শো-রুমের ম্যানেজার তরিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে চার হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি তার মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করেন। মোটরসাইকেল শো-রুমের ম্যানেজার তরিকুল ইসলামের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি গোপালগঞ্জ বিআরটিএর সহকারী পরিচালকের বিশ্বস্ত লোক হিসেবে এ কাজগুলো করে আসছি। এতে আমি কিছু পার্সেন্টেজ পাই। এছাড়া লার্নার বা ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গেলেও সরকার নির্ধারিত টাকার বাইরেও বিআরটিএ অফিসের লোকজনকে টাকা দিতে হয়। চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে লাইসেন্স পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ করছেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি মিজানুর রহমান। গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মোটরযান চালকদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন বাবদ প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা সরকারীভাবে বরাদ্দ দেয়া হলেও কোন প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন করা হয় না। ভুয়া বিল ভাউচার করে এক সহকারী পরিচালক তা আত্মসাত করেন। এ নিয়ে অফিসার ও কর্মচারীদের মধ্যে চলছে টানাপোড়েন। শহরের নবীনবাগ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সুলায়মান মিয়া বলেন, গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিস মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আনফিট গাড়িগুলোকে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে এবং সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) সুবীর কুমার সাহা তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অফিসের ভেতরের একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার করছে। আমি এখান থেকে বদলি হওয়ার জোর চেষ্টা করছি।
×