ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চার শহরে দেড় শ’ বস্তিতে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওয়াটারএইড

সাড়ে ৪ লাখ বস্তিবাসী পাবে নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১১ আগস্ট ২০১৮

 সাড়ে ৪ লাখ বস্তিবাসী পাবে নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের চারটি শহরে ১৫০ বস্তিতে নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবা দেয়ার জন্য ওয়াসার সহযোগিতায় নতুন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওয়াটারএইড। এতে ৪ লাখ ৫০ হাজার বস্তিবাসী এই সুবিধা ভোগ করবেন। ইতোমধ্যে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরের বস্তিগুলোতে নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন কাজ শুরু হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় ৫ বছর মেয়াদী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ওয়াটারএইড। ওয়াটারএইড বাংলাদেশের (এ্যাডভোকেসি এ্যান্ড কমিউনিকেশন্স ম্যানেজার) ফায়সাল আব্বাস জানিয়েছেন, নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ওপর ঢাকায় কয়েকটি বস্তিতে পরীক্ষামূলক কাজ করেছি। রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে নিরাপদ পানির বৈধ লাইন দেয়া হয়েছে। এখন এই বস্তি থেকে ঢাকা ওয়াসা বিল পাচ্ছে। আগে ওই বস্তিতে অবৈধ পানির লাইন ছিল। কড়াইল বস্তির মতো দেশের ১৫০ বস্তিতে আমরা পানির বৈধ লাইন, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যসেবা দেব। এতে সাড়ে ৪ লাখ মানুষের মধ্যে নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য (ওয়াশ) সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ‘ওয়াশ ফর আরবান পুওর’ নামে পাঁচ বছর মেয়াদী নতুন একটি প্রকল্প চালু করেছে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ও সুইডেন দূতাবাস। ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশজুড়ে বিভিন্ন শহরের বস্তির বাসিন্দা এবং নিম্ন আয়ের লাখ লাখ মানুষের জন্য ন্যূনতম নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থসেবা (ওয়াশ) সহায়তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে প্রকল্পটি। এর আতওায় বস্তি, বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও জনসমাগম স্থলে টেকসই ‘ওয়াশ’ সেবা পৌঁছে দেয়াই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য। এ ছাড়া প্রকল্পটি শহর এলাকার দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য সহায়ক ‘ওয়াশ গবর্নেন্স‘ উন্নয়নে কাজ করবে। সুইডেন দূতাবাস ও ওয়াটারএইড বাংলাদেশের চলমান অংশীদারিত্বের আতওায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগর এবং সৈয়দপুর, সখীপুর ও পাইকগাছা এই তিনটি পৌরসভায় ২২ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটি পরিচালিত হবে। সম্প্রতি প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুইডেন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত শার্লটা স্লাইটার ও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান উপস্থিত ছিলেন। ওয়াটারএইড বাংলাদেশ জানায়, শহরের প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি আসন্ন নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য (ওয়াশ) চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সুযোগ সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মৌলিক মানবাধিকার পানি ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রায় একটি ইতিবাচক ও টেকসই পরিবর্তন আনাই হলো প্রকল্পটির উদ্দেশ্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেশের বিভিন্ন শহরের দরিদ্র জন্য ন্যূনতম নিরাপদ পানি, পয়ঃনিস্কাশন ও স্বাস্থ্য (ওয়াশ) সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে পাঁচটি স্থানীয় এনজিও কাজ করবে। এনজিওগুলো হচ্ছে দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে), বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন ফর সোস্যাল এ্যাডভান্সমেন্ট (বাসা), এসকেএস ফাউন্ডেশন, সাজেদা ফাউন্ডেশন ও নবলোক। ওয়াসা সূত্র মতে, রাজধানীর সব বস্তিই ওয়াসার পানি সরবরাহের আওতায় আনা হবে। কড়াইল বস্তিতে ৪৫৬টি বৈধ পানি সংযোগের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৬৪০ পরিবারকে সেবার আওতায় আনার পর আরও ২২ বস্তিতে বৈধ পানির সংযোগ দেয়ার কাজ শুরু করেছে ঢাকা ওয়াসা। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর ৩শ’ বস্তিতে সংযোগের মাধ্যমে মোট ৬৩ হাজার ৬১৮ পরিবারকে পানি সরবরাহ দেয়া হবে। ২২ বস্তিতে পানি সংযোগের কাজ এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে আটটি বেসরকারী সংস্থার (এনজিও) চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ২২ বস্তিতে মোট ৩ হাজার ‘ওয়াটার পয়েন্ট’ স্থাপন করা হবে। বস্তিতে বৈধ পানির সংযোগ নিয়ে কাজ করা ঢাকা ওয়াসার ‘লো ইনকাম কমিউনিটি’ (এলআইসি) শাখার আওতায় এসব ওয়াটার পয়েন্ট স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পের অর্থায়ন করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ফরাসী উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি)। চুক্তিতে স্বাক্ষর করা আটটি বেসরকারী সংস্থা ওয়াটার পয়েন্ট স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন শুরু করেছে। বৈধ সংযোগ পেতে বস্তিবাসীদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বস্তির বাসিন্দাদের নিয়ে কমিউনিটি বেজড অর্গানাইজেশন (সিবিও) কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির মাধ্যমে বস্তির যে কেউ আবেদন করে বৈধ পানির সংযোগ নিতে পারবেন। চাহিদাপত্র, মিটার ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক খরচ মিলে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হবে। এই টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে।
×