ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জরুরী সেবা ‘৯৯৯’

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১১ আগস্ট ২০১৮

জরুরী সেবা ‘৯৯৯’

ব্রিটিশরা ন্যাশনাল হেল্প ডেস্ক চালু করেছিল ১৯৩৭ সালে। যুক্তরাষ্ট্র চালু করে ১৯৬৮ সালে। আর বাংলাদেশ করেছে ২০১৬ সালে। দেরিতে হলেও এটা দেশের অগ্রযাত্রা। আমরা জানি, এই সেবা দেয়ার জন্য অনেক দেশ বড় শহরগুলোতে আলাদা পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন সুবিধা যোগ করে এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার কাজটি করেছে। বিলম্বে হলেও নাগরিকদের জরুরী সেবা প্রাপ্তির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করেই বর্তমান সরকার টোল ফ্রি ‘৯৯৯’ নম্বরটি চালু করেছে। এর সুফল ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ পরিচালিত কর্মসূচীর আওতায় নাগরিকদের জরুরী প্রয়োজনে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানের জন্য এই কার্যক্রম চালু হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর এবং বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানের সেবাগুলোর সমন্বয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মঙ্গলবার পদ্মা নদীতে দুর্ঘটনাকবলিত একটি ফেরি উদ্ধার করে ৩০০ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে এই জরুরী সেবা ‘৯৯৯’। সেদিন সকালে দুর্ঘটনাকবলিত ফেরির এক যাত্রী এই জরুরী সেবায় ফোন করেন। এ সময় নয়টি ট্রাক ও ছয়টি বাসও নিরাপদে ফেরিসহ তীরে আসতে সক্ষম হয়। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একজন সহকারী মহাপরিদর্শক জনকণ্ঠের সাংবাদিককে জানিয়েছেন, ফোন রিসিভ করে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য তৎক্ষণাৎ কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসকে বিষয়টি জানান। কোস্টগার্ডসহ সব বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। ফেরি থেকে প্রায় ৩০০ যাত্রী উদ্ধার করে। এছাড়াও কাছাকাছি ফায়ার স্টেশনের একটি দল ট্রলার ও পাম্প মেশিন সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় ডুবে যাওয়া ফেরি থেকে পানি নিষ্কাশন শুরু করে। পরে ফেরিটিকে তীরে আনা হয়। নিঃসন্দেহে এটি সরকারের জনবান্ধব নীতি বাস্তবায়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। উল্লেখ করা দরকার ৯৯৯-এর মতো বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য ইতোমধ্যে ১০৯ সেবাটিও চালু হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিপদ থেকে উদ্ধারের আশায় ইমার্জেন্সি ফোনকল করার জন্য একটি নম্বর নির্দিষ্ট থাকে। বলাবাহুল্য, সমাজে নারী ও মেয়ে-শিশুরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার। সম্ভাব্য নির্যাতনের আগে কিংবা নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর জরুরী ভিত্তিতে নারী বা মেয়েশিশু প্রতিকার পেলে, কিংবা তার ভেতরে নিরাপত্তার বোধ তৈরি করা সম্ভব হলে একটি বড় কাজ হয়। দেশের পল্লী এলাকায় বাল্যবিয়ে রুখে দেয়ার ব্যাপারে এই হেল্পলাইন ইতোমধ্যে যথাযথ হেল্প বা সাহায্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাল্যবিয়েই শুধু নয়, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে এ হেল্পলাইন কার্যকর ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই কল সেন্টার বা হেল্পলাইন চালু হয় পাঁচ বছর আগে। তবে ব্যাপক প্রচারণার অভাবে এখনও নারীসমাজ এই সেবা সম্পর্কে অবহিত নন। যদিও দিনে দিনে এর পরিধি বাড়ছে। এখন এই হেল্পলাইনটিতে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ৪শ’ কল আসে। বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেজে দেয়া পুলিশের টেলিকম ও ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ‘৯৯৯’ জরুরী সেবাটি চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৭ লাখ ফোন কল এসেছে। অবশ্য এর বেশিরভাগই কৌতূহলবশত করা হয়েছে। আগামীতে ব্যাপকভাবে দেশবাসীকে অবগত করানো হলে এই জরুরী সেবা গ্রহণে মানুষ নিশ্চয়ই আগ্রহী হবে। সত্যিকার কার্যকরভাবে এই সেবা জরুরী প্রয়োজনে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে এই কার্যক্রমে লোকবল বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।
×