ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পথ দেখাল বগুড়া

শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ ও নিরাপদ পথচলা নিশ্চিতে উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১১ আগস্ট ২০১৮

 শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ ও নিরাপদ পথচলা নিশ্চিতে উদ্যোগ

সমুদ্র হক ॥ শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভাগুলোর বিকাশ ঘটানো, মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নেয়া, শিশুবান্ধব পরিবার ও শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পথ চলা নিশ্চিত করতে বগুড়া জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নিয়েছেন। যার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্কুলের সামনে জেব্রাক্রসিং বানিয়ে দেশ গঠনে তাদের ভূমিকা প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) ও রোভার স্কাউটদের ট্রাফিক আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, আমাদের সন্তানদের সুশিক্ষা দিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে যে যার অবস্থান থেকে অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারলে সমাজের অনেক অসঙ্গতি দূর হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ করছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, পুলিশ বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সিনিয়র সিটিজেন সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ, সুধীজন, অভিভাবকগনের সঙ্গে রুটিন আলোচনা করছেন। তাদের কাছে থেকে অনেক ভাল পরামর্শ পাচ্ছেন। যেগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয়েছে। বগুড়ার প্রবীণ নাগরিক (সিনিয়র সিটিজেন) মোহাম্মদ সদরুল হক বললেন, নিকট অতীতে ‘ফ্যামিলি বন্ডিংয়ের’ ব্যাপ্তি ছিল অনেক বড়। অভিভাবকদের সঙ্গে সন্তানদের বন্ধন ছিল বেশি। যা পরিবার বান্ধব। অভিভাবকগণ সন্তানের খোঁজখবর রাখতেন নিয়মিত। প্রবীণ ব্যক্তি তৌফিকুল আলম বললেন, আগে স্কুলে শিক্ষার্থীদের ‘এক্সট্রা কারিকুলাম এ্যাক্টিভিটিজ’ ছিল। অর্থাৎ পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, লাইব্রেরির বই পড়া, সাহিত্য চর্চা করত। স্কুল তাদের পূর্ণ সহযোগিতা করত। স্কুল ছুটির পর এইসব কর্মকান্ড চালু থাকত। উদাহরণ দিয়ে বলেন, জিলা স্কুলে পড়ার সময় তার সহপাঠী হুমায়ূন আহমেদ (প্রয়াত বরেন্য সাহিত্যিক) শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাহিত্য চর্চা করতেন। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই কার্যক্রম চোখে পড়ে না। তিনি মনে করেন এই কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে হবে এখনই। সুধীজনের পরামর্শ পেয়ে, জেলা প্রশাসন যে বিষয়গুলোর ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছে সেগুলো হলো : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়াল ঘেষে থাকা দোকান ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মুখের সড়কে জেব্রা ক্রসিং থাকা। বৃহস্পতিবার বিকেলে বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েরর শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসককে ডেকে এনে নিজেরাই জেব্রা ক্রসিং বানিয়েছে। তাদের দেখাদেখি জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরাও জেব্রা ক্রসিং বানায়। উল্লেখ্য এর আগে বগুড়া ট্রাফিক বিভাগ নগরীর কোথাও জেব্রা ক্রসিং বানায়নি। হালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেস্তরাঁ এবং ছাত্রাবাস ও মেসগুলোতে ওয়াইফাই সংযোগ দেয়া আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেক স্থানে নেশা জাতীয় দ্রব্য বেচাকেনারও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। দ্রুত এইসব স্থানে অভিযান চালানো হবে। এই বিষয়ে সুধীজনের কথা, আধুনিক প্রযুক্তিকে বাদ দেয়া যাবে না। তবে অবশ্যই প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে কঠিন ব্যবস্থা নিতেই হবে। অভিভাবকগনকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, আপনার সন্তানের ‘প্রাইভেসিতে’ আঘাত না করে সে প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে কি না তাও দেখতে হবে। দরকার হলে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই কাজটি করতে পারে নিকটজন ও স্বজনরা। বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা হাবিব চারটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেন। এগুলো হলো : মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ, মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার, কাউন্সিলিংয়ের জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট (মনোবিজ্ঞানী), লাইব্রেরির পাশাপাশি সহ শিক্ষা কার্যক্রম (এক্সট্রা কারিকুলাম এ্যাকটিভিটিজ) বাড়ানো। বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বললেন, অভিভাবকগণ তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের যতটা দৃষ্টি দেন এর ওপর ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ওপর ততটা সচেতন নন। সরকারী আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহজাহান আলী বলেন, কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার শতভাগ নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের নিবিড় পরিচর্যা, নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে তদারকি করতে হবে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতে কোচিং করতে না হয় সেজন্য শিক্ষকগণকে অধিক দায়িত্ব¡ পালন করে পাঠদান করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়তি ক্লাস নিতে হবে। সরকারী শাহ সুলতান কলেজের প্রভাষক খায়েশ উল আলম জানালেন, শিক্ষার্থী ভর্তি হয় দেড় হাজার। উপস্থিতির হার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। কখনও তারও কম। কেন উপস্থিতির হার কম তা খতিয়ে দেখা হয় না। একই বিষয়ে সরকারী মজিবর রহমান মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক দেবদুলাল দাস বললেন, শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কম হলে অভিভাবকগণকে জানানোর পরও তেমন সাড়া পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকগণের যতœœশীলতার অভাব আছে, এমনটি মনে করেন তিনি। শিক্ষার্থীরা যাতে কোন নেশার সঙ্গে জড়িত হতে না পারে এ জন্য পুলিশ প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্ত্তী জানান, মাদক নির্মূল অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে। শিক্ষার্থী ও উঠতি যুবকরা কোথায় যাচ্ছে তারও নজরদারি রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের অধিকতর সচেতনার আহ্বান জানান তিনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোকবুল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের চলাচল নিরবচ্ছিন্ন রাখতে ফুটপাতের ওপর সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ জানান, হাইওয়ের ধারে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোর সামনে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জেব্রা ক্রসিং ও স্পিড ব্রেকারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
×