ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাছ রক্ষায় মৌমাছি!

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ১০ আগস্ট ২০১৮

গাছ রক্ষায় মৌমাছি!

দক্ষিণ আফ্রিকায় হাতিদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে এমন সুখবর সত্ত্বেও তাদের চাপে গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির কারণে সংরক্ষণবাদীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। গাছে মৌচাক বসিয়ে এক অভিনব প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। দক্ষিণ আফ্রিকার জঙ্গলে প্রাণিবিজ্ঞানী রবিন কুক ও রনি মাকুকুলে ৫০টি মৌচাক প্রস্তুত করেছেন। ক্রুগার ন্যাশানাল পার্কের ঠিক পাশেই মৌমাছিদের এই বসতি রাখা হয়েছে। মৌমাছিরা পার্কের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু গাছ বাঁচাতে পারে কিনা, তা জানতে এক বছরের বেশি সময় ধরে এই দুই সংরক্ষণবাদী পরীক্ষা চালাচ্ছেন। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এই মৌমাছিরা পার্কের সবচেয়ে বড় বাসিন্দা, অর্থাৎ হাতিদেরও তাড়িয়ে দিতে পারে। মানুষের মতো তারাও মৌমাছির হুল পছন্দ করে না। হাতিদের ঘ্রাণশক্তিও খুব তীব্র। তাই মৌচাকের গন্ধ পেলেই তারা দূরে সরে যায়। রবিন কুক বলেন, ‘আমরা এমনটা করছি, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকায় সংরক্ষিত এলাকায় হাতিদের সংখ্যা অত্যন্ত বেড়ে গেছে। বড় প্রজাতির গাছের ওপর তাদের প্রভাব নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় পড়েছি। তাই গাছের ওপর হাতিদের প্রভাব প্রশমিত করার উপায় খুঁজছি। সেই সব গাছে মৌচাক বসিয়ে হাতিদের দূরে রাখা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।’ আফ্রিকার অন্য সব অংশে হাতির সংখ্যা কমে এলেও দক্ষিণ আফ্রিকায় তাদের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে সংরক্ষিত অরণ্য বেড়া দিয়ে ঘেরা। আছে মানুষের তৈরি কুয়া। এমন সুরক্ষা ও খোরাক পেয়ে হাতির বংশবৃদ্ধি ঘটছে। কিন্তু তাদের সংখ্যা বাড়ার ফলে সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। হাতি গাছপালা, ঝোপঝাড় সাফ করে দিচ্ছে। তাদের শিকড়ও প্রায়ই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে পার্কের অন্যান্য প্রাণী ও গাছপালার আবাস ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পার্কে মারুলা নামের বিশেষ এক প্রজাতির গাছের প্রতি হাতিদের নজর বেশি। রবিন কুক এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘হাতিদের কাছে মারুলা গাছের বিশাল চাহিদা রয়েছে, কারণ এই গাছ থেকে তারা অনেক খোরাক পায়। ফলে এই প্রজাতির গাছের ওপর তাদের প্রভাব বাড়ছে। এই এলাকার গবেষণার ফল অনুযায়ী হাতিরা আসার পর থেকে এই গাছের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। তাই মারুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি। এই গাছ খাদ্য হিসেবে, পশুপাখির আবাস হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করে।’ অনেক সময় হাতিরা শুধু পাতার নাগাল পেতে গোটা গাছ মাড়িয়ে নষ্ট করে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মৌচাক থাকলে এমন গাছ সাধারণত অক্ষত রয়েছে। গত বছরে মোট ৫০টির মধ্যে একটির ক্ষতি হয়েছে। ‘কুকস বি প্রজেক্ট’ পার্কের পরিচালকদের নতুন এক প্রচেষ্টা। অতীতে বড় সংখ্যায় হাতি সরিয়ে ফেলা হতো। পশুপাখির সংখ্যা ও খোরাকের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে ক্রুগার ন্যাশানল পার্কে গুলি করে প্রায় ১৭ হাজার হাতি মারা হয়েছে। হাতি গবেষক তামারা এগেলিং বলেন, ‘বড় আকারে গাছের ওপর হাতির প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে হাতির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার মনোভাব এখন বদলে গেছে। অতীতে এভাবেই গাছপালার ওপর হাতিদের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করা হতো। এবার বৃহত্তর পরিসরে বিষয়টি নিয়ে ভাবা যেতে পারে। বড় গাছগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের সুরক্ষা দিলেই চলবে। এভাবে হাতিদের ছড়িয়ে দিয়ে তাদের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হ”েচ্ছ।’ বিজ্ঞানীরা মৌচাকের মাধ্যমে হাতিদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের আশা করছেন। কারণ এভাবে হাতিরা চলমান অবস্থায় থাকবে। একই জায়গায় বেশিকাল থাকলে বড় আকারে ক্ষতি করতে পারে তারা। সংরক্ষণবাদীদের মতে, পাখির বাসায় ভরা গাছের মতো কোন বিশেষ আগ্রহের বস্তু থেকে হাতিদের দূরে রাখতে মৌমাছিদের ব্যবহার করা আদর্শ পথ। রবিন কুক বলেন, ‘হাতিরা প্রায়ই গাছের বাকল ছাড়িয়ে নেয়। তার ফলে গাছের প্রতিরক্ষার ক্ষমতা কমে যায়। যেমন উইপোকা বাসা বাঁধতে পারে, আগুনে গাছের ক্ষতির আশঙ্কা বেড়ে যায়। বাকল সরানোর ফলে গাছের ভেতরে পোকা খেয়ে নিয়ে ফাঁপা করে দেয়।’ মৌমাছিরা সম্ভবত হাতিদের দূরে রাখতে পারবে। কিন্তু শকুনির মতো লুপ্তপ্রায় প্রজাতি মৌমাছির অস্তিত্বের ফলে কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পার্কের আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষের মৌমাছি নিয়ে অভিজ্ঞতা কম। অনেকেই তাদের ভয় করে। রনি মাকুকুলে সেই মনোভাব বদলানোর চেষ্টা করছেন। তিনি নিজের গ্রামেই মৌচাক রেখে কিছু স্থানীয় মানুষকে মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ দিতে চান। গ্রামের ঠিক বাইরে এক জমিতে প্রথম মৌচাকগুলো বসানো হবে। তিনি গ্রামবাসীদের ভয়ভীতি দূর করে তরুণ-তরুণীদের মৌমাছি পালনের কৌশল শেখাতে চান। মাকুকুলে বলেন, ‘মৌমাছি প্রকল্প শুরু করে আমরা সমাজের আয় বাড়ানোর কাজে সাহায্য করতে পারব। তারা নিজেরাই নিজেদের প্রকল্প শুরু করতে পারবে। সুপার মার্কেটে মধু বিক্রি করতে পারবে।’ পার্কের ভেতরে সংরক্ষণবাদীরা অন্য একটি পদ্ধতিতেও সঙ্কটপূর্ণ এলাকায় হাতির সংখ্যা কমাতে সফল হয়েছেন। তাঁরা বেশ কয়েকটি কুয়া শুকিয়ে ফেলেছেন। ফলে পানির খোঁজে হাতিদের সচল থাকতে হবে। তখন স্থানীয় ইকোসিস্টেমের ওপর চাপ কমবে। কিন্তু ছোট আকারের পার্কের সেই সুযোগ নেই। তাই মৌমাছি নিয়ে রবিন কুকের পরীক্ষার বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে। তাঁর মতে, বৈপ্লবিক এই পদ্ধতির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র : ডয়েচ ভেলে
×