ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ১৪-০ পাকিস্তান, শামসুন্নাহার জুনিয়রের হ্যাটট্রিকসহ ৪ গোল, সেমিফাইনালে এক পা বাংলাদেশের

পাকিস্তানকে ফুটবল খেলা শেখাল মারিয়ারা

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১০ আগস্ট ২০১৮

পাকিস্তানকে ফুটবল খেলা শেখাল মারিয়ারা

রুমেল খান ॥ ভয় ছিল দুটি। অচেনা প্রতিপক্ষ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অধিক উচ্চতা। কিন্তু বৃহস্পতিবার যে ‘বৃহস্পতি তুঙ্গে’ ছিল গোলাম রব্বানী ছোটনের সুযোগ্য শিষ্যাদের। ভুটানের থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ‘হাড়ে হাড়ে’ ফুটবল শেখাল বঙ্গবন্যারা। তাদের গুনে গুনে ১৪ গোল দেয়। প্রথমার্ধেই বিজয়ী দল এগিয়েছিল ৬-০ গোলে। গোলের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়ে প্রমাণ করে দিল ওই জোড়া আশঙ্কা ছিল নিতান্তই অমূলক! এই জয়ে শুভসূচনার পাশাপাশি সাফ অ-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখলো লাল-সবুজ বাহিনী। ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ও শেষ গ্রুপ ম্যাচে আগামী ১৩ আগস্ট নেপালের মুখোমুখি হবে এই আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। একইদিনে এর আগে একই মাঠে অনুষ্ঠিত ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে গত আসরের রানার্সআপ ভারত ১২-০ গোলে বিধ্বস্ত করে শ্রীলঙ্কাকে। খেলায় নয়নাভিরাম হ্যাটট্রিকসহ একাই ৪ গোল করে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার জুনিয়র। জোড়া গোল করে তহুরা খাতুন (গত আসরের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার), আনাই মগিনি এবং সাজেদা খাতুন। এছাড়া ১টি করে গোল করে শামুসুন্নাহার সিনিয়র, মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা ও আঁখি খাতুন। পুরো খেলায় বাংলাদেশ গোলবন্যায় যেমন মেতে উঠেছে, তেমনি অগণিত গোল মিসের মহড়াও দিয়েছে। বল নিয়ন্ত্রণ বলতে গেলে নব্বই শতাংশই ছিল বাংলার বাঘিনীদের দখলে। পাকিবাহিনীকে খেলতেই দেয়নি। রসিক ফুটবলপ্রেমীদের ভাষায় ‘নাচিয়েছে’! ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই ছন্দে এবং আগ্রাসী ফুটবল খেলে গেছে মারিয়ারা। বাংলাদেশের গোলরক্ষক মাহমদুা আক্তারকে কোন পরীক্ষায়ই ফেলতে পারেনি পাকিস্তান দল। পারবেই বা কী করে, বাংলাদেশের সীমানায় বলই তো ঠিকমতো নিতে পারেনি তারা। বল বেশিরভাগ সময়ই ছিল পাকিস্তানের সীমানায়। খেলার শুরুতেই তহুরা বল পাকিস্তানের জালে পাঠালেও অফসাইডের কারণে গোল বাতিল হয়ে যায়। তবে ৫ মিনিটে সেই দুঃখ দূর হয় তার। সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে চমৎকার ফিনিশিংয়ে বল জালে পাঠায় সে (১-০)। ১৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। ফাউলের কারণে পাকিস্তানের ডি-বক্সের ঠিক বাইরেই ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মনিকা চাকমার বা পায়ের উড়ন্ত বাঁকানো শট আশ্রয় নেয় জালে (২-০)। দুই মিনিট যেতে না যেতে তহুরা নিজের দ্বিতীয় গোল করলে ব্যবধান গিয়ে দাঁড়ায় ৩-০ তে। ৩১ মিনিটে বা প্রান্তে বল ধরে তহুরা ক্রস দেয় পোস্টের ভেতরে। কিন্তু বলটি চলে যায় পাকিস্তানী গোলরক্ষককের হাতের নাগালে। কিন্তু বলটি সে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি। ফস্কে যায়। সেই বলে টোকা দিয়ে জালে পাঠাতে ভুল করেনি শামসুন্নাহার (৪-০)। ৪০ মিনিটে মিডাফল্ডার-অধিনায়ক মারিয়া মান্দা গোল করলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৫-০। ৪১ মিনিটে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে গত আসরের সেরা খেলোয়াড়-ডিফেন্ডার-সহঅধিনায়ক আঁখি খাতুন বুলেটের গতিতে দূরপাল্লার যে শটটি নেয়, তা ফেরানোর কোন কায়দাই জানা ছিল গোলরক্ষকের। দৃষ্টিনন্দন এই গোলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৬-০ গোল। বিরতির পর আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। আক্রমণের পসরা সাজিয়ে জর্জরিত করে ফেলে পাকিদের। শুরুটা করে সাজেদা। ৪৮ মিনিটে গোল করে সে। এরপর শুধুই বদলি খেলোয়াড় শামসুন্নাহার জুনিয়রের ম্যাজিক। ৫০, ৫৪ ও ৫৭ মিনিটে টানা তিন গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে সে। ৫৮ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করে সাজেদা। এক মিনিট পর আনাই মগিনির গোলটি পাকিস্তানের জালে বাংলাদেশের ১২তম। ৮৮ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করে আনাই। আর ৯০তম মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়র আরেকটি গোল করে পাকিদের হারের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয় (১৪-০)। বর্তমান বাংলাদেশ দলের ১৮ ফুটবলারেরই খেলার অভিজ্ঞতা আছে অনুর্ধ ১৫ সাফে। এছাড়া হংকংয়ে চার জাতি আমন্ত্রণমূলক জকি কাপেও খেলেছেন দলের ১৮ জন। বাকি ৫ ফুটবলার এসেছে বাংলাদেশ গেমস এবং অ-১৪ জেএফএ কাপে ভাল পারফরম্যান্স করে। শিরোপা জেতার চেয়ে তা ধরে রাখাটাই হচ্ছে কঠিন ব্যাপার। আর এই কঠিন কাজটি করতেই ভুটানে পা রেখেছে ছোটনের শিষ্যরা। তাদের ওপর প্রত্যাশার চাপটাও প্রচুর। কিন্তু এটাকে বাংলাদেশ দল চাপ হিসেবে নিতে নারাজ। বরং আগের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতেই দৃঢ়প্রত্যয়ী তারা। সাফল্যের পুনরাবৃত্তির জন্য তারা টানা অনুশীলনের মধ্যেই ছিল। যদিও কোন দলের সঙ্গে অনুশীলন ম্যাচ খেলার ঘাটতি থাকলেও এটাকে কোন সমস্যা মনে করছেন না কোচ ছোটন। সিনিয়র লেভেলে পাকিস্তানের সঙ্গে একাধিকবার খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু অ-১৫ লেভেলে এই প্রথম খেলে। ফলে মারিয়াদের জন্য পাকিস্তান অচেনা প্রতিপক্ষই। তবে মাঠে খেলে তাদের সাধারণ গলির দল বানিয়ে ছাড়ে!
×