ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজনে প্রস্তুত বাফুফে

প্রকাশিত: ০৭:১১, ১০ আগস্ট ২০১৮

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজনে প্রস্তুত বাফুফে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ১৯৯৭ সালে প্রথম এবং ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়বার অনুষ্ঠিত হয়েছিল জাতির জনকের নামের টুর্নামেন্ট ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা’। তৃতীয় আসরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল সুদীর্ঘ ১৫ বছর। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সে আসর। পরের বছর ২০১৬ সালে হয় চতুর্থ এবং সর্বশেষ আসর। কিন্তু প্রতি বছর আসরটি আয়োজনের যে প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) দিয়েছিল, ২০১৭ সালে সেটা বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা। এক বছর বিরতি দিয়ে এবার আবারও তারা আয়োজন করতে যাচ্ছে আসরটি। আগামী ১-১২ অক্টোবর পর্যন্ত আসরটি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার মোট ৬টি দেশের জাতীয় ফুটবল দল এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। প্রতিযোগিতার স্বত্বপ্রাপ্ত ‘কে-স্পোর্টসে’র সঙ্গে বাফুফের এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বৃহস্পতিবার মতিঝিলস্থ বাফুফে ভবনের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত হয়। বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী এবং কে-স্পোর্টসের চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ফাহাদ এমএ করিম স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এছাড়াও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাফুফের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সদস্য শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, হারুনুর রশীদ, বিজন বড়ুয়া, ফজলুর রহমান বাবুল, অমিত খান শুভ্র, মাহফুজা আক্তার কিরণ এবং সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। কে-স্পোর্টসের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডিরেক্টর আশফাক আহমেদ ও চীফ অপারেটিং অফিসার মাহবুবুর রশিদ। সালাউদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের এটা পঞ্চম আসর। জাতির জনকের নামে এরকম টুর্নামেন্ট আয়োজন করাটা অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার। আমরা এজন্য গর্বিত। আজকাল পৃথিবীর কোথাও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয় না। কারণ ফুটবলটা অনেক বেশি পেশাদার এবং ব্যস্ত হয়ে গেছে। ফিফা এবং এএফসির নিয়মিত টুর্নামেন্ট, লীগ, চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ ... এগুলোর কারণে কিংস কাপ, নেহরু কাপ, আগা খান গোল্ডকাপসহ অনেক জনপ্রিয় টুর্নামেন্টই বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া কোন দেশের সঙ্গে কোন দেশের ফুটবল সূচী মেলে না। টুর্নামেন্টগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার এটাও একটা কারণ।’ বাফুফে সভাপতি আরও বলেন, এশিয়ার পাঁচটি ফুটবল জোন আছে। এই ৫টি জোন থেকে ৫টি দেশ নিয়েই আমরা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছি আগামী ১-১২ অক্টোবরের মধ্যে। ৩টি দল ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত করে ফেলেছি। বাকি ২টি দল চূড়ান্ত করতে আরও ৭-১০ দিন লাগতে পারে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজনে আমাদের পার্টনার হচ্ছে কে-স্পোর্টস।’ সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ অতীতে বাফুফের অধীনে চারবার আয়োজিত হয়েছে। তখন বাফুফের কার্যক্রম সীমিত ও কম ছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বাফুফের এখন কাজের পরিধি ও ব্যস্ততা বহুগুণ বেড়েছে। নিয়মিত ফুটবল কার্যক্রম চালানোর পরে বাড়তি কোন টুর্নামেন্ট আয়োজন করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ জন্যই এবারের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজনের জন্য বাফুফে অনেক চিন্তা-ভাবনা করেই কে-স্পোর্টসকে দায়িত্বটা দিচ্ছে। দায়িত্ব বলতে প্রচারস্বত্ব বিক্রি। সেটা ১ কোটি টাকায়। এর বাইরেও এই আসর আয়োজন করতে যে ব্যয় হবে সেটাও তারাই বহন করবে।’ ফাহাদ করিম বলেন, ‘বাফুফেকে অশেষ ধন্যবাদ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের মতো আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে দেয়ার সুযোগ দেয়ায়। ক্রীড়াঙ্গনে আমাদের আবির্ভাব বাফুফের মাধ্যমেই হয়েছে, এ জন্য আমরা খুবই আনন্দিত। এই গৌরবময় আসরটির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে গর্বিত। এই আসরটি সফল ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সবার ঐকান্তিক সহযোগিতা কামনা করছি।’ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ নিয়ে চুক্তির বিভিন্ন তথ্য ॥ চুক্তি আপাতত ১ বছরের জন্য। তবে দু’পক্ষ চাইলে সমঝোতার ভিত্তিতে চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে পারবে। আসরের খেলার টিকেটিং এবং রেভিন্যু বাফুফেরই থাকবে। টুর্নামেন্ট চলাকালে ইংরেজী এবং বাংলা উভয় ভাষাতেই খেলা ব্রডকাস্টিং করা হবে। দুটি চ্যানেলে খেলা সম্প্রচার করা হবে। চ্যানেলগুলোর নাম খুব শীঘ্রই জানিয়ে দেয়া হবে। টুর্নামেন্টের স্বত্বর মতো ব্রডকাস্টিং স্বত্বও থাকবে কে-স্পোর্টসের। দুটি ভেন্যুতে খেলা হবে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এবং সিলেটের সিলেট জেলা স্টেডিয়াম। গ্রুপপর্বের খেলাগুলো সব সিলেটেই হবে। আর নকআউট পর্ব থেকে ফাইনাল পর্যন্ত বাকি খেলাগুলো হবে ঢাকায়। অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে পূূর্ণাঙ্গ জাতীয় দল যেমন থাকবে তেমনি অনুর্ধ-২৩ জাতীয় দলও থাকবে। বাফুফে চাইছে সবদলই যেন সিনিয়র জাতীয় দল হয়। তবে সেটা না হলে দ্বিতীয় পছন্দ যুব দল। একসময় ঢাকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফুটবলপূর্ব নগরী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল নিয়মিতভাবে (১৯৫৮ সাল থেকে শুরু) অনুষ্ঠিত আগাখান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য। দেশ ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শক্তিশালী ক্লাবগুলো এ টুর্নামেন্টে নিয়মিত অংশ নিয়েছে। দেশের ফুটবলপ্রেমীরা প্রতিবছরই এ জমজমাট টুর্নামেন্টকে ঘিরে মেতে উঠতেন। বিদেশী দলের ভাল ফুটবলের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি উপভোগ করতেন ফুটবলের জমাটি দ্বৈরথ। দেশ স্বাধীন হবার পর আগা খান গোল্ডকাপের খেলা মাঠে গড়ালেও একপর্যায়ে এই টুর্নামেন্ট আর চলতে বা অনুষ্ঠিত করতে চায়নি ফুটবল ফেডারেশন। আগা খান গোল্ডকাপ এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টে সংরক্ষিত অবস্থায়। ফুটবল ফেডারেশন ১৫ বছর পর জাতির জনকের নামে আবার আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু করে। ব্যক্তিগতভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন ক্রীড়াপ্রেমিকও। ব্যস্ত রাজনৈতিক জীবনেও এক সময় তিনি ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের ফুটবলার ছিলেন।
×