ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তবে আশা এ বছর কাজ শুরু হবে

বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কচ্ছপগতি

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১০ আগস্ট ২০১৮

বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কচ্ছপগতি

সমুদ্র হক ॥ বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (বগুড়া ইকোনমি জোন, সংক্ষেপে বিইজেড) প্রতিষ্ঠায় এখনও গতি আসেনি। দু বছর আগে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। কাজ এগিয়েছে কচ্ছপ গতিতে। এখনও প্রায় তাই। বিইজেডের জন্য এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণের ভূমি ঠিক হয়ে আছে। অর্থের বরাদ্দ হয়েছে। কেউ ওই ভূমিতে দ্রুত ঘরবাড়ি তুলতে না পারে সে ব্যবস্থায় এ্যারিয়াল ভিউ নিয়ে রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী জানালেন, ভূমি হুকুম দখলের চূড়ান্ত অনুমোদন এসেছে। প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ হয়েছে। বর্তমানে কোন ভূমির কত মূল্য তা নির্ধারণ, কোন অভিযোগ আছে কী না তা নিষ্পত্তি করে ভূমি মালিকদের কিভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়া যায় সেই কার্যক্রম চলছে। দ্রুত ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করে বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু হবে। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরেই বিইজেড প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করা যাবে। কৃষিভিত্তিক উত্তরাঞ্চলের সার্বিক কর্মকা-কে স্থিতিশীল করে নানা ধরনের শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তদারকিতে বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় প্রায় দু বছর আগে। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথিরিটি (বেজা) প্রস্তাবিত বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল-১ প্রকল্পের সার্বিক কাজ শেষ করে। শিল্প নগরী বগুড়ার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিইজেড প্রতিষ্ঠায় বগুড়া নগরী থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণে শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া, চকজোড়া, পারটেকুর, বীরগাঁও, চকভ্যালি মৌজায় ২শ’ ৫১ দশমিক ৪৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই খাতে বরাদ্দ হয়েছে ৩শ’ কোটি টাকারও বেশি। বিইজেডের স্থান নির্ধারণ এমন ভাবে করা হয়েছে যাতে নিকট ভবিষ্যতে বগুড়া- সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ বিইজেডের কাছ দিয়ে যায়। এই রেলপথ স্থাপিত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগে দূরত্ব অনেক কমে যাবে। ফলে বিইজেডের উৎপাদিত পণ্য রফতানিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম পৌঁছাতে কম সময় লাগবে। এর মধ্যেই কৃষিপণ্য উৎপাদনে বগুড়া বড় ভূমিকা রাখছে। ষাটের দশকেই বগুড়া অঞ্চল কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করে। সকল ফসলের উৎপাদন বেড়ে যায়। ওই সময়ই বগুড়ায় কৃষি যন্ত্রপাতি বিপণন ও তৈরির ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে ওঠে। দিনে দিনে তা আরও সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে অনেক ফসল বিশেষ করে সবজি সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে উন্নত কোন ব্যবস্থা নেই। শীতের সবজি মৌসুমে অনেক সবজির বাড়তি উৎপাদনে কৃষক দাম না পেয়ে ফেলে দেয়। আদমদীঘির একটি গ্রাম কম্বল ও চাদর উৎপাদনে সারা দেশে সুনাম অর্জন করেছে। গ্রামটি কম্বল গ্রাম নামে পরিচিত। তাঁত শিল্প আধুনিকায়ন না হওয়ায় এগিয়ে যেতে পারছে না। ডেইরি ফার্মের অবস্থাও একই রকম। গ্রামাঞ্চলের নারী সেলাই মেশিনে পোশাক বানিয়ে বড় মার্কেটে যেতে পারছে না। বগুড়ার সারিয়াকান্দি এলাকায় স্থাপিত অটোমোবাইল কারখানায় নারীরা মোটরসাইকেল অটোরিক্সা মেরামত করছে। ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ তৈরির বড় ক্ষেত্র তৈরি হয়ে আছে বগুড়া। বছর কয়েক আগে বিসিক এই উদ্যোগ নিয়ে এগোতে পারেনি। বিইজেডে যুগের চাহিদার প্রয়োজনে ইলেকট্রনিক্স এক্সেসারিজ (যন্ত্রাংশ) তৈরির অপার সম্ভাবনা বিরাজ করছে। বগুড়ায় যত সবজি উৎপাদিত হয় সেগুলো এবং কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি উপযোগী নানা ধরনের প্যাকেটজাত খাবার তৈরি করে রফতানিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যা এক্সপোর্ট প্রমোশন জোনের (ইপিজেড) চেয়ে কোন অংশে কম হবে না। এইসব কথা বললেন, বগুড়ার এক সময়ের বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান অধুনালুপ্ত তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির স্বত্বাধিকারী আমজাদ হোসেন তাজমা। বগুড়া চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন বললেন, বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পর দ্রুত যে যুগোপযোগী আধুনিক অটোমেটিক যন্ত্রপাতি বসিয়ে নানা ধরনের শিল্প স্থাপিত হতে পারবে সেই সম্ভব্যতা যাচাই হয়েছে। আশা করা হয়েছে বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে দ্রুত গতি আসবে। শিল্প উদ্যোক্তা মাহফুজুল ইসলাম রাজ আশা করেন, উত্তরাঞ্চলের ঈশ্বরদী ও নীলফামারীতে এক্সপোর্ট প্রোমোশন জোনের চেয়ে বিইজেড বেশি ভাল করবে। রাহুল গ্রুপের চেয়ারম্যান রঞ্জিত কুমার বললেন, বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল গতি পাওয়ার সঙ্গে বেসরকারীভাবেও অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হতে পারে। সরকারী ও বেসরকারী উভয় অঞ্চলে বহু কোটি টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি হবে। নিকট অতীতের শিল্পনগরী বগুড়া বর্তমানে হাইরাইজ ভবন, আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, শপিং মল, শোরুম, আধুনিক শপিং কমপ্লেক্স, আধুনিক মার্কেট, তারকা খঁচিত হোটেল, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার নগরীতে পরিণত। বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের উদ্যোগেও ভাটা পড়েছে। বিইজেড স্থাপিত হলে উত্তরাঞ্চলের মধ্য নগরী বগুড়া ফের শিল্পের নগরীতে পরিণত হয়ে অর্থনীতিতে গতি আসবে।
×