ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সের্গেই স্ক্রিপালের ওপর বিষাক্ত গ্যাস হামলার জের

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফের নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১০ আগস্ট ২০১৮

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফের নিষেধাজ্ঞা

ব্রিটেনে সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়াকে হত্যা চেষ্টায়, রাশিয়াকে অভিযুক্ত করে দেশটির ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হিদার নুয়ার্ট বলেন, প্রাণঘাতী নার্ভ এজেন্টে প্রয়োগ করে রাশিয়া ১৯৯১ সালের আন্তর্জাতিক রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে । এতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞাটি চলতি মাসের ২২ তারিখ থেকে কার্যকর হতে পারে। এ বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইঞ্জিন ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য সামগ্রী এবারের নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য বলে জানা গেছে। এগুলো দ্বৈত ব্যবহৃত প্রযুক্তি হিসেবে পরিচিত যা জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র বছরে ৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এসব পণ্য রাশিয়ায় রফতানি করে থাকে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে এর পরিমাণ অর্ধেকে নেমে আসবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়া যদি ৯০ দিনের মধ্যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না বলে ঘোষণা না দেয় ও আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের সহযোগিতা না করে তবে দেশটির ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। চলতি বছর ৪ মার্চ ব্রিটেনের সলসবেরির পল্লী এলাকায় নার্ভ গ্যাস হামলার শিকার হয়েছিলেন সের্গেই ক্রিস্পাল ও তার মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপাল। ইউলিয়া ২৯ মার্চ এবং তার বাবা ১৮ মে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। ৪ মার্চ তাদের দু জনকে স্যালিসবারির একটি পার্কের বেঞ্চে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। রুশ নাগরিক সের্গেই স্ক্রিপাল যুক্তরাজ্যে নিজের দেশের তথ্য পাচার করতেন। তাকে হত্যা চেষ্টার পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার কূটনৈতিক লড়াই শুরু হয়। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ বাড়তে শুরু করে। সলসবেরির হামলার ঘটনা নিয়ে অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রহিবিশন অব কেমিক্যাল ওয়েপন্সের (ওপিসিডব্লিউ) তদন্তের মুখে মস্কোর ওপর এ বিষয়ে চাপ আরও বাড়ে। লন্ডন ওপিসিডব্লিউকে এ বিষয়ে তদন্ত করতে বলে। রাসায়নিক হামলা যে গ্যাস ব্যবহৃত হয়েছিল তার নাম নভোচিক। ১৯৯০ এর দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে সেটি তৈরি করা হয়েছিল। তবে ক্রিস্পালের ওপর ওই হামলায় ব্যবহৃত গ্যাস রাশিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল কী না সে বিষয়ে নিশ্চিত নন গবেষকরা। রাশিয়া ওই ঘটনা নিয়ে যৌথ তদন্ত দাবি করেছে। কিন্তু হেগ ভিত্তিক ওপিসিডব্লিউ যৌথ তদন্তের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এই বলে হুঁশিয়ারি দেন যে, তদন্ত একতরফা হলে রাশিয়া এর ফল নাও মেনে নিতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘যে কোন তদন্তের ফল আমরা মেনে নিতে পারি যদি তা সুষ্ঠুভাবে করা হয়, ভ্রান্ত উপায়ে না হয়।’ তদন্তের ফল ব্রিটেন গ্রহণ করতে নাও পারে বলে জাতিসংঘে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত কারেন পিয়ার্স আগেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদে তিনি বলেন, ‘ব্রিটেন যে কোন তদন্তের পাশে দাঁড়াতে রাজি আছে। কারণ আমাদের লুকোনোর কিছু নেই। কিন্তু আমার আশঙ্কা রাশিয়া কিছু লুকোবার চেষ্টা করছে।’ জাতিসংঘে মার্কিন ডেপুটি রাষ্ট্রদূত কেলি কারি ব্রিটেনের অবস্থান সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে মনে করে যুক্তরাজ্যের মাটিতে রাসায়নিক গ্যাস হামলার জন্য রাশিয়াই দায়ী।’ ব্রিটেনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ৬০ জন রুশ কূটনীতিক বহিষ্কার করেছে। এটি আমেরিকার ইতিহাসে একক বৃহত্তম রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনা। -ওয়েবসাইট
×