ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পীর চিত্রপটে বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক অভিব্যক্তি

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১০ আগস্ট ২০১৮

শিল্পীর চিত্রপটে বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক অভিব্যক্তি

মনোয়ার হোসেন ॥ বিস্তৃত পরিসরের চিত্রশালাজুড়ে দিনভর চলেছে আঁকাআঁকি। রং-তুলির আঁচড়ে ভেসে উঠছে জাতির পিতার মুখচ্ছবি। সেই সব মুখচ্ছবিতে নানা অভিব্যক্তিতে উদ্ভাসিত হয়েছেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি। কখনও তিনি চিন্তামগ্ন আবার কখনও বা সংগ্রামী ভাষণে উদ্দীপ্ত। দেখা মিলেছে তারুণ্য থেকে পরিণত বয়সের মুজিবের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধুর এমন অভিব্যক্তির সমান্তরালে চিত্রিত হয়েছে তার স্বপ্নময় সোনার বাংলার ভাবনা। সেখানে শস্য-শ্যামলা, সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ ধরা দিয়েছে বর্ণের বৈভবে। এসব চিত্রকর্ম এঁকেছেন পঞ্চাশ চিত্রশিল্পী। সেই দলে ছিলেন দেশের নবীন-প্রবীণ থেকে প্রতিষ্ঠিত চিত্রকররা। শোকাবহ আগস্টের ধারাবাহিক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হলো আর্ট ক্যাম্প। ‘বঙ্গবন্ধু এবং আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই চিত্র শিবিরের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায় সকাল থেকে বিকেল অবধি সচল ছিল নানা বয়সী ৫০ শিল্পীর রং ও রেখার আঁচড়। আর্ট ক্যাম্পে সৃজিত চিত্রকর্মগুলো নিয়ে আগামী ১২ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে প্রদর্শনী। শ্রাবণের সকালে ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কথনে অংশ নেন শিল্পী হাশেম খান, আনোয়ার হোসেন ও জামাল আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক আশরাফুল আলম পপলু। ভরদুপুরে সাদা-কালো জমিনের চিত্রপটটি সাজিয়ে তুলছিলেন রোকেয়া সুলতানা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিয়োগান্তক অধ্যায়ের স্মরণে ক্যানভাসের প্রথম স্তরটি বিন্যস্ত হয়েছে সাদা-কালোর মিশেলে। এরপর শিল্পীর তুলি ধাবিত হয়েছে রঙিলা ভুবনে। সেই বর্ণময়তার ভেতর থেকে ভেসে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণাদায়ী কিছু গানের চরণ। ঠাঁই করে নিয়েছে ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ কিংবা ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছেসহ রণাঙ্গনে উদ্দীপনা জাগানো নানা গানের বাণী। সঙ্গীতের সেই সুরের মাঝে মূর্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর স্বপ্নের পথে চলা শেখ হাসিনার মুখচ্ছবি। ছবি আঁকতেই আঁকতেই আপন অনুভূতি ব্যক্ত করেন এই শিল্পী। বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত আমার পরিবার। আমার পুলিশ অফিসার বাবা আবদুল গাফফার সরাসরি অংশ নেন একাত্তরের রণাঙ্গনে। সেই উত্তাল সময়ে আমাদের পরিবার পাবনা থেকে চুয়াডাঙ্গা হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। ওই সময়ের দুঃসহ স্মৃতিগুলো আজও আমাকে তাড়া করে। যতদিন বেঁচে থাকব জীবনের সঙ্গে মিশে থাকবে সেসব স্মৃতিচিহ্ন। এ কারণেই আমার ক্যানভাসেও বারবার বর্ণিত হয় মুক্তিযুদ্ধের কথা। স্বতঃর্স্ফুতভাবেই জায়গা করে নেন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার রূপকল্প অনুসরণে নিসর্গের ছোঁয়ামাখা সুজলা-সুফলা বাংলাদেশের ছবি এঁকেছেন সমরজিৎ রায় চৌধুরী। অনুভূতির প্রকাশে প্রখ্যাত এই শিল্পী বলেন, বঙ্গবন্ধুর কারণেই আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তিনি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আগস্ট মাস আমাদের জন্য একইসঙ্গে বেদনা ও আনন্দের। দুঃখটা এখানেই যে, এই মাসে আমরা জাতির জনককে হারিয়েছিলাম; হত্যাকা-ের শিকার হয়েছিলেন তিনি ও তাঁর পরিবার। অন্যদিকে আনন্দের কারণটি হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর কারণেই সমৃদ্ধির সোপান বেয়ে চলেছে বর্তমানের বাংলাদেশ। তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন জাতিকে। স্বদেশের ভাবনায় নিমগ্ন বঙ্গবন্ধুর ছবি এঁকেছেন তরুণ প্রজন্মের শিল্পী ফারজানা আহমেদ। চারপাশে খয়েরি রঙের আস্তরণের মাঝ থেকে সাদা-কালোয় মেলে ধরেছেন শেখ মুজিবকে। রঙিন অংশটিতে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন বাণীকে ফুটিয়ে তুলেছেন পুঁথিচিত্রের আদলে। আপ্লুত এই শিল্পী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে আজ তাঁকে নিয়ে ছবি আঁকতে পেরে গর্ব অনুভব করছি। স্বপ্নের মানুষটি রং ও রেখায় রূপ দিচ্ছি আপন চিত্রপটেÑঅসীম আনন্দে বইছে হৃদয়ে। আরেক নবীন চিত্রকর সুমন কুমার বৈদ্যর ক্যানভাসে মূর্ত হয়েছে সুদূরের পানে চেয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর প্রসারিত দৃষ্টি। ‘শিশুর তানে বাউলের গানে বঙ্গবন্ধু’ ॥ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের গানের সুরে স্মরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘শিশুর তানে বাউলের গানে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক সঙ্গীতানুষ্ঠান। শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত সঙ্গীতাসরে গেয়েছেন ধানম-ি সরকারী কামরুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদি। তার কণ্ঠে গীত হয় ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি’। এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নেয় গোড়ান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিয়াম সরকার, সেজুঁতি, ঊর্মি ও নিতু। মোহাম্মদপুর পিপারেটরি স্কুল ও কলেজের ছাত্রী সুমনা একক সঙ্গীত পরিবেশন করে। সঙ্গীতানুষ্ঠানে বাউল সঙ্গীত পরিবেশনায় একক কণ্ঠে গান শোনান সোমা ব্যাপারী, সিদ্দিকুর রহমান, দিতি সরকার, গোলাম মোস্তফা, বিপাশা পারভীন, লাভলী শেখ, সমীর বাউল প্রমুখ।
×