ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্রুত সমাধানের আশা

ইজারা সম্পন্ন না হওয়ায় রাজধানীর ৭ পশুর হাট নিয়ে অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১০ আগস্ট ২০১৮

ইজারা সম্পন্ন না হওয়ায় রাজধানীর ৭ পশুর হাট নিয়ে অনিশ্চয়তা

ওয়াজেদ হীরা ॥ আর কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। আর ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই জমজমাট হতে থাকে রাজধানীর পশুর হাটগুলো। কিন্তু যে হাটগুলোতে উঠানো হবে এসব পশু তা নিয়ে এখনও অনেকটাই সিদ্ধান্তহীনতা। কেননা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আটটি হাটের ইজারাই সম্পন্ন হয়নি এখনও। ফলে ইজারা সম্পন্ন না হওয়া রাজধানীর আটটি হাট নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। তবে উভয় সিটির কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করছেন দ্রুতই এটির সমাধান হয়ে যাবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মোট ২১টি স্থানে পশুর হাট বসানো হবে এবার। এর মধ্যে গাবতলী স্থায়ী হাট বাদে বাকি ২০টি হাট ঈদের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে বসানো হবে। এসব হাটের জন্য মূল্য নির্ধারণ করে মাসখানেক আগেই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এবার সেই নিয়মে দরপত্র আহ্বান করা হলেও সম্পন্ন হয়নি সবগুলো হাটের ইজারা। দুই সিটি কর্পোরেশনের তথ্যানুযায়ী, ২০টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে ৭টির ইজারা এখনও সম্পন্ন হয়নি। অর্থাৎ, কাঙ্খিত মূল্য না পাওয়ায় পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১৫ আগস্টের পর থেকেই রাজধানীতে আসতে শুরু করবে পশু। ঈদের তিন দিন আগে থেকে সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত হাটে পশু ওঠার কথা থাকলেও এর আগে থেকে আসা শুরু হয়ে যায়। তবে বেচাকেনাটা ঈদের দু’একদিন আগেই হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গাবতলী স্থায়ী হাটসহ ৭টি স্থানে হাট বসবে। এর মধ্যে রয়েছে, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর ডিওএইচ এর উত্তর পাশের সেতু প্রোপার্টি সংলগ্ন খালি জায়গায়, মিরপুর সেকশন-২ (ইস্টার্ন হাউজিং) এর খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, আশিয়ান সিটি হাউজিং, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদ নগর) হাট এবং গাবতলী স্থায়ী পশুরহাট। এর মধ্যে উত্তরের উত্তরখান হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়নি উল্লেখ করে হাটের ইজারা সম্পর্কে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের ৮টি হাটের মধ্যে ৭টির ইজারা সম্পন্ন হয়েছে। একটির জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ১৩ আগস্ট এটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা। অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হবে। এসব হাটের মধ্যে রয়েছে- কমলাপুর স্টেশনের আশপাশের খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ব্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ সংলগ্ন খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইউ এ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর খালি জায়গা সংলগ্ন খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন খালি জায়গা, ঝিগাতলার হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা। এর মধ্যে এখনও ইজারা সম্পন্ন হয়নি সেগুলো হলো: দক্ষিণের ব্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কমলাপুর স্টেশনের আশপাশের খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইউ এ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন খালি জায়গার হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের ১৩টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে ৭টি ইজারা হয়েছে। বাকি যে ৬টির ইজারা হয়নি তার জন্য। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় সেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবেই হাটগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। এদিকে, সরকারী হাট-বাজার বরাদ্দ নীতিমালা-২০১১ অনুযায়ী বিগত বছরের ইজারামূল্যের সঙ্গে ২৫ শতাংশ মূল্য বাড়িয়ে সর্বনিম্নœ দর নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু গতবছর জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তা কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়। যদিও প্রতিবছর হাট ইজারাদাররা এই খাতে প্রচুর লাভবান হয়। সে হিসেবে রাজস্ব আদায় খুব একটা হয় না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানি পশুর হাটের ইজারা নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা শহরকে মেলানো সঠিক হয়নি। জেলা, উপজেলা বা গ্রামের ক্ষেত্রে ওই প্রজ্ঞাপনের যৌক্তিকতা থাকলেও ঢাকা মহানগরে এ নিয়ম কার্যকর করা ঠিক হচ্ছে না। জানা গেছে, এবার ডিএনসিসির ৭টি পশুর হাটের সরকারী ইজারামূল্য ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৮৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৭ টাকা। আর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩টি অস্থায়ী হাটের ইজারামূল্য ধরা হয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭৫ টাকা। এদিকে সূত্র মতে, এ বছর একটি স্থায়ী এবং ২০ অস্থায়ী গরুর হাট বসলেও এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে মেয়র বরাবর। রাজধানী ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণের জনগণ মেয়রের কাছে এই চিঠি পাঠিয়েছেন। কোরবানির হাট অপ্রতুল থাকায় তাদের এলাকাগুলোতে জনগণ কি সমস্যায় পড়ছে তা-ও চিঠিতে উল্লেখ করেন তারা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ উভয় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবর গত মঙ্গলবার এই চিঠি পাঠানো হয়। রাজধানী উত্তরের রামপুরা থানার জনগণ চিঠিতে জানান, কয়েক বছর পর্যন্ত হাটের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। ঢাকা উত্তরে মোট জনসংখ্যা এক কোটি; কিন্তু হাটের সংখ্যা মাত্র সাতটি। ফলে গড়ে ১৩ লাখ জনগণের জন্য হাটের সংখ্যা মাত্র একটি। চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রতি হাটে এক সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ জড়ো হওয়ায় বেপারীরা গরুর দাম বাড়িয়ে দেয়, ফলে পশুর মূল্য মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ফলে অনেকেই কোরবানি দিতে পারেন না। মেয়রের কাছে তারা হাটের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান। এছাড়াও এবার মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে জানা গেছে, গত বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর কোন সঙ্কট হবে না। ভারতীয় গরুরও প্রয়োজন হবে না। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, এবার কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭১ লাখ। গতবছর এ সংখ্যা ছিল এক কোটি চার লাখ ২২ হাজারের বেশি। দিন দিন পশু পালনের প্রতি উৎসাহিত হচ্ছে মানুষ ফলে কোরবানিতে পশু সঙ্কটও কমে যাচ্ছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
×