ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা সভা

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে চামড়ার দাম কমল

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১০ আগস্ট ২০১৮

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে চামড়ার দাম কমল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে দাম কমিয়ে প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়া ৪৫, খাসি ১৮ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পানির দরে কাঁচা চামড়া কেনার সুযোগ পেল। গত বছরের তুলনায় প্রতি বর্গফুটে দাম কমানো হয়েছে ৫ টাকা। এবার কম দামে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে চামড়া সংগ্রহ করবেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর দেশের খামারগুলোতে কোরবানিযোগ্য পশু আছে এক কোটি ১৫ লাখ ৮৮ হাজার। গত বছর দেশে ১ কোটি ৪ লাখ গবাদি পশু কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করা হয়। বিপুল সংখ্যক এই চামড়ার দাম কমানোর ফলে ট্যানারি মালিক ও এ শিল্প খাত সংশ্লিষ্টরা লাভবান হলেও এতিম, অসহায় এমনকি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ, কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মিডিয়ায় প্রচার এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে ওই সভায় মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারাসহ চামড়া খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৫৫-৬০, ঢাকার বাইরে ৪৫-৫০, খাসির সারাদেশে ২৫-২৭ এবং বকরির সারাদেশে ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়। সভায় ট্যারিফ কমিশনের এই সুপারিশ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত বছরের চেয়ে দাম কমানো হয়েছে। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নির্ধারিত দাম ঘোষণা করেন। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম এখন অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি। শুধু তাই নয় অভ্যন্তরীণ মার্কেটেও চামড়ার তৈরি জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগসহ অন্যান্য পণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। এই বাস্তবতায় চামড়ার দাম কমানোর ফলে ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হলো। অন্যদিকে কোরবানির চামড়া সাধারণত এতিম, মিসকিন, বিধবা ও অসহায়দের জন্য দান খয়রাত হিসেবে দিয়ে দেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা মাঠ পর্যায় থেকে এবার পানির দরে সেই চামড়া সংগ্রহ করবেন। বৈঠকে জানানো হয়, ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনবেন ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়, ঢাকার বাইরে এর দাম হবে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকায় সংগ্রহ করবেন ব্যবসায়ীরা। গতবছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় সংগ্রহ করেন। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া ২০-২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকায় সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এর অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর কোরবানি উপলক্ষে সারাদেশে এক কোটি পাঁচ লাখের মতো গবাদিপশু বিক্রি হয়েছিল। আর এবার দেশের খামারগুলোতে কোরবানিযোগ্য পশু আছে এক কোটি ১৫ লাখ ৮৮ হাজার। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার, ছাগল ভেড়া ৭১ লাখ এবং অন্যান্য প্রাণির সংখ্যা ৩১ হাজার। গত বছর দেশে ৪৫ লাখ ২৯ হাজার গরু-মহিষ, ছাগল ৫৮ লাখ ৯১ হাজার কোরবানি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশী গরু-ছাগলে কোরবানির মৌসুমের চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা বাংলাদেশের তৈরি হয়েছে। তবে মহিষের চামড়ার দামের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরুর চেয়ে মহিষের চামড়া আরও কম দামে সংগ্রহ করা হবে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে চামড়া খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামে চামড়া কেনার জন্য তাদের নিয়োজিত ব্রোকার, স্থানীয় সংগ্রহকারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিবেন বলে জানা গেছে।
×