ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতে চেয়েছিলেন শহিদুল আলম

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১০ আগস্ট ২০১৮

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতে চেয়েছিলেন শহিদুল আলম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার তথ্য প্রমাণ এখন মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সেইসব তথ্য প্রমাণ শহিদুল আলমের সামনে তুলে ধরা হয়। শহিদুল আলম তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আর অস্বীকার করতে পারেননি বলে পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে। মূলত বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারকে চাপে রাখতেই পরিকল্পিতভাবে ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হয়েছিল। মামলাটির পরবর্তী শুনানি আগামী ১৩ আগস্ট সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করেছে উচ্চ আদালতের আপীল বিভাগ। গত ২৯ জুলাই রবিবার দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে প্রতিদিনের মতো যানবাহনের জন্য অপেক্ষারত শিক্ষার্থীদের চাপা দেয় যাত্রীবাহী জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস। এতে ঘটনাস্থলেই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী। এ ঘটনার পর থেকেই সারাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে কঠোর আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। প্রায় নয় দিন টানা দেশে একপ্রকার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। গুজব ছড়ানোর কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস ঘটনা ঘটে। চার ছাত্রকে হত্যা এবং চার ছাত্রীকে ধর্ষণ করার গুজব ছড়িয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানম-ির কার্যালয়ে হামলাসহ সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই ফেসবুক লাইভে এসে গুজব ছড়ান শহিদুল আলম। তিনি ফেসবুক পেজে নানা বিভ্রান্তিমূলক ছবি দেন। এতে করে গোটা বিশ্বের নজর পড়ে বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশে বিরাট বিপ্লব হচ্ছে বলেও প্রকাশ পায়। স্কুল-কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সেই বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছে বলেও গোটা বিশ্বে চাউর হয়ে যায়। এমন ঘটনার পর শহিদুল আলমের ফেসবুকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু করে ডিবি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তদন্তে বেরিয়ে আসে শহিদুল আলমের গুজব ও মিথ্যা তথ্য প্রচারে জড়িত থাকার বিষয়টি। এরই প্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট রাতে ধানম-ি থেকে ডিবি পুলিশ শহিদুল আলমকে আটক করে। আটকের পর তথ্য প্রযুক্তি আইনে তার বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় ডিবি পুলিশের তরফ থেকে। সেই মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। বুধবার উচ্চ আদালতের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসকদের মতামতের ভিত্তিতে আবারও তাকে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে। এছাড়া তিনি ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন। সাক্ষাতকারে দেয়া তথ্যের বিষয়ে তদন্ত করে ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তদন্তে গুজব ছড়ানোর অভিযোগের সত্যতা মিলে। এরপরই শহিদুল আলমকে গত ৫ আগস্ট রাতে ধানম-ির বাসা থেকে আটক করা হয়। সেই তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই তাকে আটকের পর তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়। ডিবির কাছে এ সংক্রান্ত সব তথ্য প্রমাণ রয়েছে। শহিদুল আলমের সামনে সেই তথ্য প্রমাণ হাজির করা হয়। তথ্য প্রমাণ হাজির করার পর শহিদুল আলম আর তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেননি। তিনি এমন গুজব ছড়ানোর জন্য ডিবি কর্মকর্তাদের কাছে অনুতাপ প্রকাশ করেছেন। তার মতো লোকের গুজব ছড়িয়ে দেশকে বিপদের মুখে ফেলে অনুতাপ প্রকাশ করার বিষয়টি আর আমলে নিচ্ছেন না তদন্তকারী কর্মকর্তারা। মূলত বহির্বিশ্বের কাছে দেশকে রীতিমতো চাপের মুখে ফেলতে এবং আন্দোলন দীর্ঘায়িত করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই তিনি গুজব ছড়িয়ে ছিলেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। আর সেই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। গত ৬ আগস্ট সোমবার নিম্ন আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর শহিদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার শুনানি করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। শহিদুলের পক্ষে আদালতে আইনী লড়াই করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। এই আইনজীবী আদালতকে বলেন, শহিদুল আলমের স্বাস্থ্যের বিষয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন এসেছে। এ সময় আদালত বলে, আপনারা অপেক্ষা করুন। আগামী সোমবার এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। শহিদুল আলমকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা তাও জানতে চেয়েছে আদালত। এর আগে হাইকোর্ট বিভাগে শহিদুল আলমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
×