ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বোমারু মিজানকে মদদ দিয়েছিল বিএনপি জামায়াত

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ৯ আগস্ট ২০১৮

বোমারু মিজানকে মদদ দিয়েছিল বিএনপি জামায়াত

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যক্ষ মদদে দুর্ধর্ষ জঙ্গী হয়ে ওঠে ভারতে গ্রেফতারকৃত বাংলাদেশী বোমারু মিজান। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে জঙ্গীদের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কাজ করছিল সে। এ কাজে সে নানাভাবেই বিএনপি-জামায়াতের সরাসরি সহযোগিতা পেয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের হাত ধরে দুর্ধর্ষ জঙ্গী হয়ে ওঠে মিজান। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলায় ব্যবহৃত বোমার অধিকাংশই তৈরি করেছিল মিজান। সিরিজ বোমা হামলায় ব্যবহৃত বোমাগুলোর অন্য তৈরিকারকরাও ছিল বোমারু মিজানের শিষ্য। বোমারু মিজানই তাদের বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। আর বোমা বানানোর অন্যতম বিস্ফোরক রক সালফার এসেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক শিল্পমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসিতে দন্ডিত জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রামের ইউরিয়া সার কারখানা থেকে। বোমারু মিজান গ্রেফতার হওয়ার পর বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের জঙ্গী নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তাকে বিশ্বের যেসব দেশে বাংলাদেশী জঙ্গী আছে বলে সন্দেহ করা হয়, সেসব দেশের গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর থেকে ময়মনসিংহে নেয়ার পথে ত্রিশাল সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশের প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জেএমবি জঙ্গীরা বোমারু মিজান (৩৯), জেএমবির শূরা সদস্য দুর্ধর্ষ জঙ্গী রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানিকে (৩৮) ছিনিয়ে নেয়। ওইদিনই মির্জাপুরে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে পালানোর সময় রাকিবুল হাসান নিহত হয়। বোমারু মিজান ও সানিকে ধরিয়ে দিতে বাংলাদেশ পুলিশ প্রত্যেকের জন্য ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে জেএমবির আস্তানায় বিস্ফোরণে দুই জেএমবি জঙ্গী শাকিল আহাম্মদ ওরফে শাকিল গাজী ও সোবাহান মন্ডল ওরফে সোবাহান শেখ নিহত হন। নিহত দুই জঙ্গীর স্ত্রী রাজিয়া বিবি ও আলিমা বিবিকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো। দুই নারীর দেয়া তথ্য এবং তদন্তে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশী জেএমবি জঙ্গী কাওসার ওরফে বোমারু মিজান খাগড়াগড়ের আস্তানাটি গড়ে তোলার অন্যতম প্রধান কারিগর। পরবর্তীতে ভারতের এনআইএ বোমারু মিজানই কাওসার বলে নিশ্চিত হয়। ভারত সরকার খাগড়াগড় হামলার আসামি হিসেবে কাওসারকে ধরতে ১০ লাখ রুপী পুরস্কার ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে ভারতে জেএমবির আস্তানা গড়ে তোলা এবং আস্তানায় তৈরিকৃত বোমা বাংলাদেশে পাঠানোর সঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর অর্থায়ন করার তথ্য প্রকাশ পায়। জামায়াত ভারতের একটি রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে জেএমবিকে অর্থায়ন ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছিল বলে অভিযোগ ওঠে। আগামী ১৫ আগস্ট ভারতের জাতীয় দিবসে জঙ্গীদের হামলা চালানোর আশঙ্কা থেকে সে দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই অভিযানে বোমারু মিজান বেঙ্গালুরু শহরের একটি আস্তানা থেকে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) হাতে গ্রেফতার হয়। তার পিতার নাম সুজা মিয়া (মৃত), বাড়ি জামালপুর জেলা সদরের শেখের ভিটা গ্রামে। তিনি মিরপুরের পীরেরবাগ থেকে ২০০৯ সালে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। একই এলাকায় বাড়ি শায়খ আব্দুর রহমানের। তার হাত ধরেই আজকের বোমারু মিজান হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ পুলিশের এন্টি টেররিজম বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, বোমারু মিজান গ্রেফতার হওয়ার পর বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে জঙ্গীবাদ নিয়ে নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। কারণ বোমারু মিজানের তিন দেশে বিস্তর নেটওয়ার্ক রয়েছে। তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেলে এই তিন দেশের জঙ্গীবাদের নেটওয়ার্ক এবং জঙ্গীবাদের মদদদাতা রাজনৈতিক দল ও দলগুলোর কোন কোন নেতা সরাসরি জড়িত সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। জঙ্গীবাদের তথ্যের জন্য বোমারু মিজান গ্রেফতার হওয়া একটি যুগান্তকারী ঘটনা তাতে কোন সন্দেহ নেই। ভারত সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে তাদের যোগাযোগ আছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই বোমারু মিজানের কাছ থেকে তথ্য পেতে ভারতে যাচ্ছে বাংলাদেশের চৌকস গোয়েন্দাদের একটি বড়সড় দল। সূত্রটি বলছে, বোমারু মিজানের গ্রেফতারের কারণে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ ইতোমধ্যেই পাকিস্তানে থাকা বাংলাদেশী অনেক আত্মঘাতী তরুণ, যুবক, কিশোর, কিশোরী ও রোহিঙ্গা মুসলিমকে বাংলাদেশে পাঠানোর একটি প্রক্রিয়ার কথা জানা গেছে। তারা কাদের মাধ্যমে কি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছে, তাদের টার্গেট কি সে সর্ম্পকে তথ্য পাওয়া যেতে পারে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের ভয়াবহ উত্থান ঘটে। যার গোড়াপত্তন হয়েছিল নব্বই দশকে আহলে হাদিস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসাদুল্লাহ আল গালিবের আহলে হাদিস আন্দোলন থেকে বের হয়ে শীর্ষ ছয় জঙ্গীর প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই জেএমজেবি নামের জঙ্গী সংগঠন গড়ে তোলে। পরবর্তীতে সেটিই সংক্ষিপ্ত আকারে জেএমবি নাম ধারণ করে। জেএমবিতে যোগ দিয়েছিলেন অধ্যাপক গালিবের ভাগ্নে মোহাম্মদ সালাফি।
×